ভারত যদি পারে, শ্রীলঙ্কা যদি পারে, বাংলাদেশও পারবে- আনু মুহাম্মদ

[২৮ জুলাই ২০১৬ সুন্দরবন রক্ষা ও রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিতের দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ৩০ জুলাই ২০১৬ জাতীয় কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশে সদস্য সচিব  আনু মুহাম্মদের বক্তব্য। অনুলিখন: ইউনা ইসলাম]

WP 20160730 17 22 17 Rich Copyআপনারা জানেন আমাদের কর্মসূচী ছিল ২৮শে জুলাই, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল। এবং প্রধানমন্ত্রীকে একটি খোলা চিঠি প্রদান। সারা দেশের মানুষের যে কণ্ঠ, মানুষের যে মত, দেশ-বিদেশের সকল বিশেষজ্ঞদের মত, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার সার-সংক্ষেপ করে- সরকারের পক্ষ থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে যে বিভ্রান্তি, মিথ্যাচার বা ভুল তথ্য মানুষের কাছে দেয়া হচ্ছে বা তারা নিজেরাও বিশ্বাস করছেন সেইগুলোর সুনির্দিষ্ট তথ্যভিত্তিক জবাব এবং সরকারের কাছে পরিস্কারভাবে জনগনের দাবি উত্থাপন করা। আমরা মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলাম, একটা গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে-জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস এবং আমাদের সংবিধানেও তাই লেখা আছে। জনগন তাদের মতামত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন, যদি তিনি গনতান্ত্রিক সরকারের প্রধান হন, জনগনকে তার ভয় পাওয়ার কথা নয়। তিনি জনগনের মুখোমুখি হবেন, জনগনের কথা শুনবেন, প্রয়োজনে নিজের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন দিবেন, প্রয়োজন বিতর্ক করবেন। এবং সেই আলোচনার ভিত্তিতে একটা সমাধান হবে-এটাই হচ্ছে গনতান্ত্রিক পদ্ধতি।

আমাদের মিছিল যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে যেত, প্রধানমন্ত্রী যদি সেখানে আমাদের সাথে কথা বলতেন, আমাদের বক্তব্য শুনতেন, তাহলে সেইটাকেই আমরা বলতাম গণতান্ত্রিক একটি সমাজ, গণতান্ত্রিক একটি সরকার। কিন্তু এই জনগনকেই সরকারের যত ভয়, তথ্যকেই তাদের ভয়, যুক্তিকেই তাদের ভয়, বিশ্লেষনকেই তাদের ভয়। এবং সেকারণেই একটা নিরস্ত্র, নিরীহ, শান্তিপূর্ণ মিছিল যখন অগ্রসর হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে, তখন তাতে তারা এতই ভীত-সন্ত্রস্ত্র যে, এই নিরস্ত্র মানুষের শক্তিতে যে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বহু কিলোমিটার দূরে সেই মিছিল সহ্য করতে পারে নাই, তার উপর আক্রমন করেছে, ফাঁকা গুলি করেছ, টিয়ার গ্যাস মেরেছে, লাঠিচার্জ করেছে, গ্রেফতার করেছে এবং সেই বিষাক্ত টিয়ার গ্যাসে সেইখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকেই অজ্ঞান হয়েছেন, টিয়ারশেল লেগে মাথা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কারও, কারও শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই লাঠিচার্জে যারা আহত হয়েছেন সেটা কতদিন থাকবে কেউ বলতে পারে না। সেই আক্রমনের মধ্যে দিয়ে সরকার নিজের শক্তি প্রদর্শন করতে পারে নাই, সরকার নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করেছে, সরকার নিজের নৈতিক পরাজয় প্রকাশ করেছে। সরকার প্রকাশ করেছে যে তারা জনগনকেই ভয় পায়, সত্যকে ভয় পায়, যুক্তিকে ভয় পায়, বিজ্ঞানকে ভয় পায়। কিভাবে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এট আপনারা জেনেছেন, কিছুক্ষন আগে অধ্যাপক রাশেদা বলেছেন, -প্রানীবিজ্ঞানী এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কথা। আমরা পরিস্কারভাবে জানি এবং সরকারকে চ্যালেঞ্জ করছি যে বাংলাদেশে এবং পৃথিবীর কোথাও একজন বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাবে না যিনি কোন না কোনভাবে কোম্পানীর সাথে যুক্ত নন, কোন না কোনভাবে স্বার্থ দ্বারা তাড়িত নন, যিনি বলবেন যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে সুন্দরবনের ক্ষতি হবে না-একজন বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাবে না। এইরকম নিশ্চিত বিষয়টা আমরা জানি। সেই ক্ষতি সরকার যদি করতে থাকে নির্দিষ্ট কোন লোভে- ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য হোক, কমিশনের জন্য হোক, ভারতকে খুশি করার জন্য হোক, বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ভাগ-বাটোয়ারা করে দেয়ার জন্য হোক- সরকার যখন এটা করতে যায় তখন তার ভয় তো জনগনকে নিয়া হবেই। তার তো তথ্য-যুক্তি শুনতে ভয় হবেই এবং সেই নৈতিক পরাজয়ই হচ্ছে আমাদের জয়ের জায়গা।

সেইজন্য সেইদিন যারা জখম হয়েছেন, যারা বন্দি হয়েছেন তাদের চেতনা, উদ্দীপনা-তাদের যে স্পিরিট সেগুলো কিছুমাত্রই কমাতে পারে নি সরকার। বরঞ্চ হাজারো মানুষের মিছিলকে তারা বাধা দিয়েছে, কিন্তু সেই বাধার-সেই আক্রমনের প্রতিক্রিয়ায় এখন সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায়-বহু জায়গায় সমাবেশ মিছিল হয়েছে-শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও কোথাও কোথাও মিছিল হয়েছে, বিভিন্ন দেশে মিছিল-মিটিং এর প্রস্তুতি হচ্ছে, এমনকি যে ভারতের কোম্পানী এখানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে চাচ্ছে-সেই ভারতের কোলকাতাতেও গতকাল (২৯ জুলাই) এই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এবং দিল্লীতেও কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিবাদ সমাবেশ হবে, কারণ ভারতের যারা সজাগ মানুষ, ভারতের যারা পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন-দায়িত্বশীল মানুষ তারা বলছেন যদি সুন্দরবন বাংলাদেশে ক্ষতি হয় তাহলে ভারতের সুন্দরবনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই এতটুকু দায়িত্ব তারা বোধ করেন যে, ভারতের কোম্পানী-ভারতের রাষ্ট্র যদি এরকম একটা সর্বনাশ করে তার দায়-দায়িত্ব ভারতের মানুষের উপর পড়বে। সুতরাং তারা নিজেদের দায়িত্ব থেকেই এ প্রতিবাদ করছেন।

আজকের পত্রিকায় দেখলাম সরকারি দলের একজন কর্মকর্তা, সরকারি দলের এক নেতা বলছেন দেশ যখন জঙ্গি নিয়ে একটা অস্থির অবস্থার মধ্যে আছে , তখন এই তেল-গ্যাস-বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা কমিটি কেন রামপাল নিয়ে সমাবেশ করছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না। আমরাও বলি আমরাও বুঝতে পারছি না যখন দেশ জঙ্গি আক্রমনে দিশেহারা সেই সময় পহেলা জুলাই’র ঘটনায় যখন হতবিহ্বল মানুষ তার ১২ দিনের মাথায় কিংবা ৭ জুলাই ঈদের জামাতে হামলার ৫ দিনের মাথায় আপনারা কি করে হাসিমুখে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর করেন, তখন জঙ্গি বিরোধী আন্দোলনের জন্য এইসব অপতৎপরতা-জনস্বার্থ বিরোধী তৎপরতা কেন আপনারা বন্ধ করতে পারেন না? আমরা জানি কারা জঙ্গিবাদী তৎপরতা বন্ধ করতে পারে, বন্ধ করতে পারে এই দেশের জনগন, বন্ধ করতে পারে এই দেশের তরুন। কোন তরুন? – যে তরুন শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ দেখে না, যে তরুন দেশের স্বার্থ বুঝতে পারে, যে তরুন সুন্দরবনের গুরুত্ব বুঝতে পারে, যে তরুন বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ সম্পর্কে সজাগ, যে তরুন সমষ্টির স্বার্থের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারে, সেই তরুনেরাই বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকতা, সামাজ্যবাদী আধিপত্য কিংবা বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন ও বৈষম্যের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তরুনেরা যখন এই পথে যায় তখন আপনারা তার উপর আক্রমন করেন, তরুনেরা যখন মানুষের জন্য একট শক্তিশালী জায়গা তৈরী করতে চেষ্টা করে, তখন তার উপরে আপনারা আক্রমনের চেষ্টা করেন। আপনারাই জঙ্গি তৈরীর কারখানা তৈরী করছেন এ দেশে, জঙ্গি চাষ করছেন। কোন প্রশ্ন করার পথে বাধা দিয়ে- যখন কোন মানুষ প্রশ্ন করতে পারে না, যখন মানুষ কোন ধরনের বিশ্লেষন করতে পারে না, যখন মানুষ কোন ধরনের সরকারি বয়ানের বাইরে কথা বলার অধিকার পায় না, যখন সৃজনশীলতার এবং স্বাধীনতা হরণ হয় তখনই উর্বর ক্ষেত্র তৈরী হয় জঙ্গীবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ও আধিপত্যবাদীদের। সুতরাং এই আন্দোলন একই সাথে সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন, একইসাথে জঙ্গিবাদ বিরোধী আন্দোলনও। কারণ এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তরুনরা একটা ঠিকানা পায়, তরুনরা একটা দিশা পায়, জীবনের একটা উদ্দেশ্য পায় আর আপনারা তরুনদের লোভী বানাতে চান। আপনারা তরুনদের আত্মকেন্দ্রিক বানাতে চান। আপনারা তরুনদের দাস বানাতে চান। দাস-প্রশ্নহীন আনুগত্য যাদের থাকে তাদের পক্ষেই জঙ্গীবাদী তৎপরতায় যুক্ত হওয়া সম্ভব।

সেইজন্যই সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন শধু বাংলাদেশের প্রকৃতির বিশাল সম্পদ রক্ষার আন্দোলন নয়। এট বাংলাদেশকে নতুন একটা দিশা দেওয়ার আন্দোলন, বাংলাদেশের তরুনদের একটা ঠিকানা দেওয়ার আন্দোলন। সেই তরুনদের আমি অভিনন্দন জানাই, যারা এই আক্রমন মোকাবেলা করেও অগ্রসর হয়েছেন সেই অগ্রসরতা তাদের এখনো অব্যাহত আছে এবং সেটা ক্রমান্বয়ে আরও বাড়ছে, আগামীতে আরও বাড়বে।

আমরা মনে করি- এই আন্দোলনে জাতীয় জাগরন তৈরী করতে হবে এবং দেশের সকল পর্যায়ের মানুষকে এই আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি তার লক্ষন। সবাই মিছিলে আসতে পারছেন না, কিন্তু আমরা চিনি না, জানি না, এইরকম অনেক ব্যক্তি গান তৈরী করছেন, অনেক ব্যক্তি ডকুমেন্টারি তৈরী করছেন, অনেক ব্যক্তি শিশুদের নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছেন বা ফেসবুকে ছবি দিয়ে সংহতি জানাচ্ছেন। হাজার হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে যুক্ত হচ্ছেন তাদের তৎপরতায়। এর মধ্যে দিয়েই লক্ষ-কোটি মানুষের একটা সংযোগ তৈরী হচ্ছে সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনে।

সেই ধারাটাকেই আমরা বিকশিত করতে চাই, সেইজন্য আগামীতে আমাদের আন্দোলনে আমরা আহবান জানাই দেশের সর্বস্তরের মানুষ, সকল পর্যায়ের মানুষ যেন এর মধ্যে যুক্ত হন। সকল ধরনের তৎপরতার মধ্যে আমাদের এই বক্তব্যটা আসতে হবে যে– সুন্দরবন বিনাশী কোন প্রকল্প আমরা হতে দেব না, সুন্দরবন বিনাশী সকল প্রকল্প বাতিল কর। যারা শিক্ষক আছেন তারা শিক্ষার্থীদের বলবেন। অনেকে বলেন শিক্ষকরা কিভাবে বলবে, তারা তো বিভিন্ন ধরনের চাকরি করে। শিক্ষকতা চাকরি নয়, শিক্ষকতা হচ্ছে একটা দায়িত্ব। সুতরাং শিক্ষক, যিনি স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের- তার নৈতিক দায়িত্ব দেশে যদি কোন অন্যায় হয়, দেশে যদি কোন সর্বনাশ হয় তার বিরুদ্ধে তার শিক্ষার্থীদের সজাগ করা, সচেতন করা- এটা তার নৈতিক দায়িত্ব হিসাবেই পালন করতে হবে। আইনজীবী যারা তারা আইনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই এই জায়গাটা খুঁজে বের করতে হবে। আপনারা জানেন বাংলাদেশে দায়মুক্তি আইন দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। দায়মুক্তি আইন মানে? – তারা যা খুশি তাই করতে পারবেন। আইন-আদালতের কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্র হচ্ছে সেখানে আরেকটা দায়মুক্তি আইন দেওয়া হচ্ছে। পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যদি কোন দূর্ঘটনা হয় তাহলে তার জন্য কেউ দায়ী থাকবে না। দায়ী থাকবে একমাত্র বাংলাদেশের মানুষ যারা এর দ্বারা একটা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে পড়বে। আইনজীবী যারা তাদেরও দায়িত্ব হচ্ছে আইনের এ জায়গাটা ধরা, যারা বিজ্ঞানী তাদেরও সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাই, নীরবে অনেকেই সমর্থন জানাচ্ছেন। তাদের আমরা আহবান জানাই সোচ্চার ভূমিকা পালন করার জন্য। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যারা আছেন, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও পুরোহিত তাদের প্রতি আমাদের আহবান আপনাদের নিজ নিজ জায়গায় সুন্দরবন রক্ষার কথা বলুন। যারা বিভিন্ন জায়গায়-লেখক, শিল্পী-যারা নাট্যশিল্পী নাট্য মঞ্চায়নের আগে সুন্দরবন রক্ষার কথা বলুন। গানের অনুষ্ঠানের আগে সুন্দরবন রক্ষার কথা বলুন। ছবি যদি দশটা আঁকেন তার মধ্যে একটা ছবি সুন্দরবনের জন্য নিবেদন করুন। গান যদি দশটা গান, তবে একটা গান সুদরবনের জন্য নিবেদন করন। প্রতিটি পর্যায়ে যারা ঘরের মধ্যে আছেন এমনকি যারা গৃহবধু হিসাবে আছেন- গৃহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছেন-তারা ঘরে শিশুদের নিয়ে এই জনমতটা তৈরী করুন। আমরা এই সকল স্তরের মানুষকে- কৃষক, শ্রমিকসহ সকল স্তরের মানুষকে নিয়ে সুন্দরবন রক্ষা করতে চাই। বাংলাদেশ রক্ষা করতে চাই। সেইজন্য আমরা আগামী কর্মসূচীগুলোতে এই যুক্ততা বাড়ানোর জন্য কর্মসূচী নিচ্ছি। 

আগামী আগস্ট মাস জুড়েই আমাদের সুন্দরবন সংলগ্ন যে এলাকাগুলো আছে সেই এলাকাগুলোতে স্কুল-কলেজ এবং বিভিন্ন সমাবেশ স্থান হাট-মাঠ-ঘাট ইত্যাদিতে আলোচনা হবে-ওয়ার্কশপ হবে। এই আগস্ট মাস জুড়ে আমরা এই বিষয়ে বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞ-বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষদের সাথে আলাপ-আলোচনা করব। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তারা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করবেন। আমরা জানি আগস্ট মাসে বিভিন্ন কর্মসূচী তারা নিচ্ছেন। আমরা জানি নাট্যকর্মী যারা তারাও বিভিন্ন কর্মসূচী নিচ্ছেন। এই আগস্ট মাসে আমাদের এই জনসংযোগের তৎপরতার মধ্যে দিয়ে আমরা ২০শে আগস্ট, সারাদেশে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচী পালন করব।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকাল ১০টা থেকে দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচী হবে। সকল মানুষকে আমরা চাই, সেখানে আপনারা আসেন। সেখানে গান হবে, কবিতা হবে, শিল্পচর্চা হবে, নাটক হবে, সেখানে বক্তৃতা হবে, সেখানে বিজ্ঞানীদের বিশ্লেষন হবে, সেখানে বিভিন্ন তথ্য-যুক্তি দিয়ে মানুষের মধ্যে এই বিষয়টাকে উপস্থাপন করা হবে। এবং সকল পর্যায়ের মানুষের শিশু-বৃদ্ধ-নারী-পুরুষ এবং অন্যান্য সকল পেশার মানুষ এই কর্মসূচীতে আসবেন। যারা দূরত্বের কারণে বা বিভিন্ন কারণে আসতে পারবেন না তারা নিজ নিজ জায়গায় কোন না কোন ভাবে অবস্থান করবেন। এবং ঢাকা শহরের বাইরেও বিভিন্ন জেলায়-উপজেলায় সমস্ত জেলায় আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচী হবে।

আপনারা জানেন আমাদের একটা বিশাল-গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস তৈরী হয়েছে ফুলবাড়িতে। আগামী ২৬শে আগস্ট ১০ বছর পূর্তি হচ্ছে ফুলবাড়ি গনঅভ্যুত্থানের এবং ফুলবাড়ি প্রতিরোধের। এই ফুলবাড়িতে গত ১০ বছর ধরে চক্রান্ত চলছে আরেকটা ধ্বংসযজ্ঞ তৈরী করার, উন্নয়নের নামে। এই ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধ করে জনগনের শক্তি দিয়ে এখন পর্যন্ত এই প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে, জনগনের শক্তির একটা নিশানা দিয়েছে এবং বাংলাদেশে একটা বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যে বাংলাদেশের জনগনের শক্তি দিয়ে ভয়ংকর অপশক্তি-সামাজ্যবাদী শক্তি-দেশীয় লুটেরা শক্তিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সেই প্রতিরোধের এক দশক পালনের জন্য আমরা ২৪শে আগস্ট থেকে ৩০শে আগস্ট সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায়-ফুলবাড়ি ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় এই প্রতিরোধের, জনগনের যে শক্তি সেটা উদযাপন করব। এর মধ্যে দিয়ে শক্তি সঞ্চয় করব। তার মধ্যেই সুন্দরবন বিনাশী সকল প্রকল্প বাতিল এবং জাতীয় সম্পদের উপর জনগনের মালিকানা, ফুলবাড়ি চুক্তির বাস্তবায়ন সহ জাতীয় কমিটির ৭ দফা বাস্তবায়নের আন্দোলন আরও জোরদার হবে।

আমরা লক্ষ্য করব সরকারের ভূমিকা। আমরা আশা করি সরকারের বোধোদয় হবে, ভারত সরকারের বোধোদয় হবে, এবং দুই দেশের সরকারই এই মহা অনিষ্টকারী এবং জনগনের উপর আক্রমনকারী প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসবেন। যদি পিছিয়ে না আসেন তাহলে এই আগস্ট মাসের অবস্থান কর্মসূচী থেকে সারাদেশের সকল পর্যায়ের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করব। সেটা চলো, চলো ঢাকা চলো থেকে শুরু করে হরতাল-অবরোধ যেকোন কিছু হতে পারে। এটা নির্ভর করে সরকারের উপরে ।

আমরা যেটা খোলা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি সেটা হল- সারা দেশের মানুষ এই সুন্দরবন বিনাশী রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে। আপনার যদি সংশয় থাকে আপনি গনভোট দেন। আমরা নিশ্চিত শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ যদি তারা ভোট দিতে পারেন, যদি তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি যদি জনগনের প্রতি আপনার কোন দায় থাকে, দেশের প্রতি আপনার কোন দায় থাকে, যদি আপনি যে পরিবেশ পদক পেয়েছেন তার প্রতি আপনার কোন সম্মান থাকে, যদি আপনার নিজের প্রতি কোন সম্মানবোধ থাকে তাহলে বাংলাদেশকে এই মহাবিপদ, মহা দাসত্ব এবং মহা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ভয়ংকর ভবিষ্যৎ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করবার জন্য রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের থেকে অবিলম্বে মুক্ত করবেন।

তারা অনেক সময়ই অনেকে বলেন যে, যুক্তি হিসাবে হাজির করেন যে একটা চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেলে কিভাবে বাতিল হবে! আপনাদের অবগতির জন্য জানাই ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার সাথে ভারতের চুক্তি হয়েছিল- কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ঠিক এরকম একটা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু সেই শ্রীলঙ্কার মানুষেরা সেটার বিপদ দেখে সেটার প্রতিবাদ করেছেন। সেই চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে, সেটার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই বছরের গত মাসে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জনমতের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে এই প্রকল্প তাদের পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব না। আমাদের প্রশ্ন শ্রীলঙ্কা যদি পারে, বাংলাদেশ কেন পারবে না? এবং দ্বিতীয়ত ভারত নিজের দেশে অনেকগুলো প্রকল্প যেগুলো ক্ষতিকর সেগুলো জনমতের কারণে, বিশেষজ্ঞ মতামতের কারণে তারা সেগুলো বাতিল করে পরিবেশ সম্মত বিদ্যুতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং তারা ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের দিকে যাচ্ছে। 

আমাদের প্রশ্ন – ভারত যদি তার প্রকল্প পরিবর্তন করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন ভারতের এই আগ্রাসী, লোভী মনোভাবের শিকার হয়ে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হবে?

ভারত যদি পারে, বাংলাদেশও পারবে। শ্রীলঙ্কা যদি পারে বাংলাদেশও পারবে। যদি সরকারের সেই বাংলাদেশের প্রতি, জনগনের প্রতি কোন দায় থাকে। যদি সরকার সেই দায় প্রকাশ না করে, তাহলে জনগনের শক্তি নিয়ে আমাদেরকেই সেই অবস্থা তৈরী করতে হবে যাতে সরকার বাধ্য হয় বাংলাদেশকে ধ্বংসের প্রকল্প বাতিল করতে। বাংলাদেশে নতুন একটা দিক-নির্দেশনা তৈরী করতে।
আমি আশা করি এখানে যারা উপস্থিত আছেন তারা সবাই আপনাদের পরিচিতজনকে জানাবেন, সামাজিক মাধ্যমে জানাবেন, গণমাধ্যম যারা আছেন এখানে, যে সাংবাদিক বন্ধুরা আছেন, তাদের অনুরোধ করি গণমাধ্যমের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষকে জানাবেন। যাতে মানুষ সাংবাদিকদের যে ভূমিকা, লেখকদের যে ভূমিকা, শিল্পীদের যে ভূমিকা, বিজ্ঞানী-প্রকৌশলীসহ কৃষক-শ্রমিক সকলের যে ভূমিকা সেই ভূমিকার মধ্যে দিয়ে আমরা যেন এই মহাবিপদ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারি। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে, সকলের অংশগ্রহন প্রত্যাশা করে আজকের এই সমাবেশের কাজ এখানেই শেষ করছি।