বাজেটে সুবিধাভোগীদেরই স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে, সাধারণ জনগণের সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি

news 303734 1আনু মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। ২০১৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন সর্বজনকথা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে। এর আগে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জার্নাল সমাজ বিজ্ঞান সমীক্ষার। অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার ৪০টির বেশি বই রয়েছে। প্রকাশ হয়েছে অনেক গবেষণা নিবন্ধও। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের নানা দিক নিয়ে তিনি সম্প্রতি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

বণিকবার্তা: এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ মানুষকে একটু স্বস্তি দেয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে এ-সম্পর্কিত নীতি-কৌশল পেয়েছেন কি?

আনু মুহাম্মদ: অর্থমন্ত্রীর বাজেট উপস্থাপনা এমনভাবে করা হয়েছে যেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপসহ বিরাজমান সংকটগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা দায়িত্ববহির্ভূত বিষয়। বাইরের চাপে সংকটগুলো সৃষ্টি হয়েছে। আমার কাছে এটা পুরোপুরি ঠিক মনে হয় না। মূল্যস্ফীতির চিত্র সরকারের দলিলপত্রে যথাযথভাবে প্রতিফলিতও হচ্ছে না। এমনিতেই সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে সমস্যা আছে, বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান একটা বড় প্রশ্ন।

মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেখার চেষ্টা খুব স্পষ্ট। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য মানুষের যে দুর্ভোগ, সেটিকে হালকা করে দেখার একটা প্রবণতাও আমরা সরকারের মধ্যে দেখতে পাই। বিভিন্ন মন্ত্রী প্রায়ই বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে বটে কিন্তু তাতে জনগণের অসুবিধা হচ্ছে না। কারণ তাদের আয় বেড়েছে। আয় বাড়ার যুক্তি হিসেবে তারা মাথাপিছু আয়ের পরিসংখ্যান হাজির করেন। তবে আমরা সবাই জানি, মাথাপিছু আয়ের হিসাব একটা গড় হিসাব। যদি একটা সমাজে বৈষম্য বেশি থাকে, সম্পদের কেন্দ্রীভবন খুব বেশি হয় তাহলে সেখানে মাথাপিছু আয়ের হিসাব দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনমান বোঝা যায় না। একটা ছোট গোষ্ঠীর হাতে যদি সম্পদ বেশি পরিমাণে জমা হয় তাহলে মাথাপিছু আয়ের হিসাব দিয়ে বলা সম্ভব নয় যে সব মানুষের আয় বেড়েছে। বাস্তবতা অস্বীকারের প্রবণতা বা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুর্ভোগের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ না থাকা, জনস্বার্থকে গুরুত্ব না দেয়ার প্রতিফলন আমরা বাজেটের মধ্যে দেখি।

ধরেই নেয়া হচ্ছে, জনগণের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। সুতরাং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ যে শুধু আন্তর্জাতিক নয়, দেশের ভেতরেও আছে, সেটাকে অস্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, সেটিও শুধু আন্তর্জাতিক কারণে নয়। আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে ঠিকই আবার কিছু পণ্যের দাম কমতির দিকে।

আসলে অনেক রকম লুণ্ঠন ও পাচারের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত টিকে আছে প্রধানত তিনটি জনগোষ্ঠীর জন্য। এক. পোশাক শ্রমিক, দুই. প্রবাসী শ্রমিক এবং তিন. কৃষক। পোশাক শ্রমিক ও প্রবাসী শ্রমিক মিলে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। এ দেড় কোটি মানুষের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, যদিও তাদের অবদান হিসেবেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। কৃষকদের সারাক্ষণই ফসলের দাম নিয়ে চাপে থাকতে হয়। বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টির একটা কারণ পাচার; আরেকটা হলো এমন সব ঋণনির্ভর, ব্যয়বহুল কিন্তু অযৌক্তিক প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, যেগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি বোঝা হবে। জনগণের জন্যও ক্ষতিকর হবে। বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ ঢেকে রাখার কারণে কিংবা সেগুলো অস্বীকৃতির প্রবণতার কারণে যেসব সমাধানের যেসব উপায়-পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল, তা বাজেটের মধ্যে আসেনি। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিজনিত মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে যে সহায়তা দরকার ছিল, সেটিও আসেনি। উল্টো যারা অর্থ-সম্পদ পাচার করছে, সরকার তাদের বৈধতা দেয়ার জন্য এ বছর আরো নতুন করে কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেছে।

বণিকবার্তা: করপোরেট কর কমানো হয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির মধ্যেও করমুক্ত আয়ের ন্যূনতম সীমাটা বাড়ানো হয়নি…

আনু মুহাম্মদ: এর প্রয়োজন ছিল, যুক্তিও ছিল। কারণ সত্যিই যদি মানুষের আয় বাড়ে, তাহলে করমুক্ত আয়ের সীমাটা বাড়ানোরও একটা যুক্তি থাকে। আরেকটা বিষয় হলো মূল্যস্ফীতি। আমরা যদি সরকারের হিসাবও ধরি তাহলে প্রতি বছর মূল্যস্ফীতি শতকরা ৫-৬ ভাগ হচ্ছে। এ যুক্তিতেও করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো উচিত। অথচ সেটি বাড়ানো হয়নি।

আমি বলব সরকার কোন ধরনের অর্থনৈতিক দর্শন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, তার একটা প্রতিফলন হলো রাজস্ব আয় ও ব্যয়। সরকার কার কাছ থেকে সম্পদ নিচ্ছে এবং কাকে সম্পদ দিচ্ছে, সেটি পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি বোঝা যায়। যে অর্থনৈতিক নীতির মধ্য দিয়ে শীর্ষ ২০ শতাংশ এবং নিচের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যকার বৈষম্য ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত আছে। অবৈধ বা হিসাববহির্ভূত অর্থ কিংবা বলতে পারি চোরাই টাকা, হিসাবে ধরলে এ বৈষম্য আরো বেশি ধরা পড়বে।

কথা হলো, যাদের হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে সেই অনুপাতে কর আদায় করার ইচ্ছা, ক্ষমতা বা পরিকল্পনা কোনোটাই আমরা দেখছি না। এদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকারের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে অপরিকল্পিত/অপ্রয়োজনীয়/ক্ষতিকর প্রকল্প নেয়ার কারণে কিংবা জনপ্রশাসনে ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির কারণে। প্রশাসন বা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যয় বাড়ছে এবং ঋণও বাড়ছে, বড় প্রকল্পগুলোর ব্যয় বাড়ছে। ব্যয় যত বাড়ছে, সরকারের রাজস্ব চাহিদাও তত বাড়ছে। এগুলো তো শেষ পর্যন্ত জনগণের ঘাড়েই পড়ে।

বাজেটে সরকারের আয়ের উৎস কী? আমরা জানি, একটা হলো জনগণের কাছ থেকে কর ফি নেয়া। আরেকটা হলো দেশী বা বিদেশী উৎস থেকে ঋণ। এর সবই আসলে জনগণকেই বহন করতে হয়। অর্থায়ন নিয়ে সাধারণভাবে প্রচলিত কিছু কথা আছে। যেমন বিশ্বব্যাংক বা চীন বা ভারত বা রাশিয়ার টাকায় প্রকল্প হচ্ছে কিংবা সরকারের টাকায় প্রকল্প হচ্ছে, নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প হচ্ছে। আসলে বিশ্বব্যাংক বা চীন বা ভারত বা রাশিয়া বা সরকারের টাকা বলে কিছু নেই। এর সবই জনগণকেই বহন করতে হয় সুদাসলে। কাজেই যত ঋণ নেয়া হবে, জনগণের ঘাড়ে তত বোঝা বাড়বে। সেই টাকা তোলার জন্য সরকার ভ্যাট সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে, নানা ক্ষেত্রে কর ও ফি বাড়ায়। এছাড়া কিছুদিন পর পরই বিদ্যুৎ, গ্যাস, তেল ইত্যাদির দাম বাড়ায়। এবারের বাজেট ঘোষণার কয়েক দিন আগেই অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কয়েক দিন পরে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। এগুলোর কারণে বহুরকম দ্রব্যের দাম, বাসাভাড়া বাড়বে। এর মানে হলো, নিম্ন, সীমিত কিংবা নির্দিষ্ট আয়ের মানুষজনের বোঝাটা বেড়েই যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা ঠিকই বলেন, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত কম। কিন্তু এ অনুপাত বাড়ানোর জন্য যে উৎস থেকে কর সংগ্রহের আসলে সুযোগ ও গুরুত্ব আছে (অর্থাৎ সম্পদশালী লোকজন), সে জায়গায় সরকার কোনোভাবেই যাচ্ছে না। আমরা অনেক রকম সংস্কার, যেমন রাজস্ব সংস্কার, প্রশাসনিক সংস্কারের কথা শুনি। সেখানেও দেখি বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে নানা রকম কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে সংস্কার করার জন্য। কিন্তু সংস্কারের ফলাফলের মধ্যে আমরা কোনো রকম পরিবর্তন দেখতে পাই না। যারা বিত্তবান তাদের কাছ থেকে সম্পদ নেয়ার যে প্রক্রিয়া, সেটি কোনোভাবে দাঁড়াচ্ছে না।

কর কাঠামো পর্যালোচনা করলে দেখব, পরোক্ষ কর সেখানে সবচেয়ে বেশি। ভ্যাট ও শুল্ক এসবের মধ্য দিয়ে সরকারের আয় বেশি হয়। পাশাপাশি আয়করের প্রাপ্তি বিশ্লেষণ করলেও দেখি যে সীমিত আয়ের লোকজন বা পেশাজীবীরাই বেশি আয়কর দিচ্ছে। তার মানে আয়কর বলে যে প্রত্যক্ষ কর, তাতে এ ধারণা করার কোনো কারণ নেই যে এটা প্রধানত বিত্তশালীরা দিচ্ছে। আয়করের বেশি অংশটা আসলে যাদের ধরা সহজ বা দিতে বাধ্য, তাদের কাছ থেকেই নেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ আয়করের বড় অংশ এবং পরোক্ষ কর দুটো মিলিয়ে আমরা দেখব যাদের আয় কম বা সীমিত তারাই কিন্তু মূল সম্পদের জোগানদার। যাদের সম্পদ বেশি তারা তুলনামূলকভাবে কম কর-ভ্যাট দেয়। অথচ আবার বাজেট বরাদ্দে দেখছি সম্পদশালী-ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বেশি।

জনপ্রশাসনের বরাদ্দের বাইরে বড় বরাদ্দগুলো মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ। শিক্ষা খাতের বলে প্রদর্শিত বরাদ্দের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে সবচেয়ে ব্যয়বহুল কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প। বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলো সারা বিশ্বের মধ্যে ব্যয়ে শীর্ষ কাতারে—সেতু, সড়ক, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভবন সবগুলোই উচ্চব্যয়বহুল, পৃথিবীতে এর তুলনা পাওয়া কঠিন। তার মানে এখানে উচ্চমাত্রার দুর্নীতি, কমিশন ও অপচয়ের ব্যাপার আছে। এগুলোর সুফলভোগী হলো সম্পদশালীরাই। এছাড়া তাদের বিভিন্ন রকম করছাড়, ভর্তুকি দেয়াও অব্যাহত রয়েছে। যেমন বিদ্যুৎ খাতে বিপুল ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে, যার সুবিধাভোগী কিছু গোষ্ঠী। যারা বিদ্যুৎ উৎপাদন বা সরবরাহ না করেই টাকা নিচ্ছে।

পাশাপাশি জনস্বার্থ সম্পর্কিত খাতগুলো, যেমন শিক্ষা-স্বাস্থ্য-নবায়নযোগ্য জ্বালানি সবগুলোর বরাদ্দই অপর্যাপ্ত। যতটুকু বরাদ্দ দেয়া হয়, তাতেও নানা ফাঁকফোকর, যেমন স্বাস্থ্য খাতে যেভাবে উচ্চমূল্যের সরঞ্জাম কিনে ফেলে রাখা হয়, যে রকম দুর্নীতি এবং অস্বচ্ছতা আছে, তাতে প্রকৃত প্রয়োজনীয় বরাদ্দ আরো কমে যায়। শিক্ষা খাতেও তা-ই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এখন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ঠিকাদার ও তাদের কমিশনভোগীদের দাপট সৃষ্টি করা হয়েছে। জনগণের শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অধিকারের জন্য বরাদ্দের পরিমাণগত বৃদ্ধি তো ঘটেইনি আবার এর গুণগত দিক থেকে যেভাবে ব্যয় হওয়া দরকার, স্বচ্ছতা বা জবাবদিহি আনা দরকার, সেটিও আসেনি। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছ থেকে সম্পদ নিয়ে সম্পদশালী কিছু গোষ্ঠীর হাতে সম্পদ তুলে দেয়ার বৈধতা প্রদানের একটা প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজেট।

আগেই বলেছি, ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত নিয়ে অর্থনীতিবিদরা সবসময়ই কথা বলেন। এখন ট্যাক্স-সার্ভিস অনুপাত নিয়ে সরব হওয়া দরকার। কারণ ২৪ ঘণ্টা, ৩০ দিন, ১২ মাস ধরে নানাভাবে আমরা যে কর দিই, এর বিপরীতে আমরা সার্ভিস কী পাচ্ছি তার হিসাব-নিকাশ দরকার। যেমন পানির জন্য আমরা কর দিচ্ছি কিন্তু ওয়াসার পানি আমাদের জন্য নিরাপদ হচ্ছে না। বিদ্যুতের জন্য আমরা প্রচুর টাকা দিচ্ছি, বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ছে কিন্তু দেখা যায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ আসছে না, তদুপরি বিদ্যুতের নামে আমাদের ঘাড়ে রামপাল রূপপুরের মতো বিপদ ও বোঝা চাপানো হচ্ছে। আমরা কর দিচ্ছি নিরাপত্তার জন্য কিন্তু দেখা যায়, গুম-খুন থেকে শুরু করে ঘরে-বাইরে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন তাদের জন্য ব্যয় অনেক বাড়ছে। অথচ অনেক প্রয়োজনীয় জায়গা, যেমন ফায়ার ব্রিগেড বা শ্রম অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শন—এগুলোর জন্য বরাদ্দ বা লোকবল বাড়ছে না, জবাবদিহি নেই। ফলে একের পর এক বিভিন্ন কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, অবহেলা-দুর্নীতির কারণে এবং সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে অকালে মানুষ মারা যাচ্ছে। এগুলো আসলে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। এর সমাধানের জন্য যে ধরনের বরাদ্দ দেয়া দরকার, যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন হওয়া দরকার, সে জায়গায়টায় বাজেটের কোনো মনোযোগ আমরা দেখি না।

বণিকবার্তা: খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এরই মধ্যে এটা নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে প্রভাবিত করছে। বাজেটে কী তাদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে?

আনু মুহাম্মদ: রেশনিং ব্যবস্থা এখনকার জন্য খুব ভালো একটা সমাধান হতে পারত, যেখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি একটা বড় প্রশ্ন। আন্তর্জাতিকভাবে এ সমস্যা সামনে আরো বাড়বে। যেমন ২০০৭-০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় দেখা গেছে খাদ্যের প্রাপ্যতা নিজের দেশের মধ্যে যদি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে আমদানি করে এটা সমাধান করা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, টাকা থাকলেও বিশ্ববাজারে পণ্য পাওয়া যায় না। বর্তমান সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্ববাজারের জটিলতা আরো পরিষ্কার হয়েছে।

যে জায়গাটায় আমাদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড়ানো দরকার তা হলো প্রথমত, দেশে ন্যূনতম খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা; দ্বিতীয়ত, খাদ্য মজুদের জন্য প্রয়োজনীয় গুদাম করা এবং তৃতীয়ত, জনগণের কাছে স্বল্পমূল্যে খাদ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। একদিকে সরকার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা জোর দিয়ে বলছে, অন্যদিকে সরকারি দলিলপত্রেই দেখতে পাচ্ছি মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণ কমে গেছে। এর অর্থ হলো, সরকার আয় বৃদ্ধির যে গোলাপি চিত্রটা দেখাচ্ছে তা বাস্তব নয়। এটা বরং জীবিকার উদ্বেগজনক পরিস্থিতিই তুলে ধরে। ন্যূনতম ক্যালরি কমে গেলে দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতার অভাব ও অসুখ-বিসুখ বৃদ্ধির কারণ হয়।

কৃষি ক্ষেত্রে আরেকটা সমস্যা হলো, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের দাম না পাওয়া। আমরা দেখছি কৃষিপণ্য ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে অনেক বেশি দামে কিনতে হয়। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে যারা উৎপাদক, তারা কৃষিজাত দ্রব্য এমনকি ধান-চাল যথাযথ দামে বিক্রি করতে পারছেন না। উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রির খবর আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। এর একটা বড় কারণ এগুলোর মজুদ ব্যবস্থা ঠিকমতো নেই। আলু, চাল কিংবা গম যথেষ্ট মাত্রায় ক্রয় করে মজুদ করার ব্যবস্থা বিস্তৃত করা দরকার। রেশনিং ব্যবস্থা থাকলে যা হয় তা হলো, একদিকে সরকার মজুদ করবে, অন্যদিকে মজুদ থেকে খুব সহজেই জনগণকে সুলভে খাদ্য জোগান দিতে পারবে। রেশনিং ব্যবস্থার সঙ্গে কৃষকের ফসলের দাম পাওয়ারও একটা সম্পর্ক আছে। কৃষক তার পণ্যের দাম পাবেন আবার কৃষক এবং অকৃষক জনগোষ্ঠী একটা নির্দিষ্ট মূল্যে খাদ্যদ্রব্য পাবে। এজন্য একটা পরিকল্পনা, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দাঁড় করানো ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া দরকার। এগুলোর কোনোটাই কিন্তু আমরা বাজেটের মধ্যে দেখিনি।

বণিকবার্তা: শ্রমিকদের প্রেক্ষাপট থেকে এবারের বাজেট কেমন হলো?

আনু মুহাম্মদ: শ্রমিকদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির একটি বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখেছি করোনার ভয়াবহ সময়ে পাটকল বন্ধ করার মাধ্যমে। পাটকল বন্ধ হয়ে গেল, চিনিকল বন্ধ হয়ে গেল। এর মধ্য দিয়ে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে লাখ খানেক মানুষ কর্মচ্যুত হয়েছে। যেখানে করোনাকালে কর্মসংস্থান ছিল একটা বড় সমস্যা এবং করোনা পরবর্তী সময়েও তাদের ঘুরে দাঁড়ানো একটা কঠিন অবস্থা, সেখানে এভাবে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র নষ্ট করা অবিশ্বাস্য। পাট ও চিনি শিল্প নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা এ বাজেটে নেই। কিন্তু এটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল যে পাট ও চিনি শিল্পকে আবার চালু এবং নবায়ন করার জন্য ব্যবস্থা নেয়া, যার জন্য সামান্য কিছু বরাদ্দ যথেষ্ট ছিল। এ দুটো মিলিয়ে যে পরিমাণ এককালীন বরাদ্দ দরকার ছিল, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ বরাদ্দ সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে বসিয়ে ভর্তুকি হিসেবে দিচ্ছে। শুধু একটি ক্ষেত্রে এ রকম দুর্নীতি ও অপচয়ের তুলনায় অনেক কম টাকায় পুরো পাট ও চিনি শিল্পকে আবার পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব ছিল, সেটা গবেষণায় ও বিশ্লেষণে পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়েছে।

চিনি শিল্প রক্ষা আরো এ কারণে দরকার ছিল যে এর দাম বাড়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এ শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই। এখন দেখা যাচ্ছে সরকার চিনি আমদানিকারকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এ বাজেটেও তাদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু চিনি উৎপাদনের যে সুযোগ বাংলাদেশে ছিল, আমাদের এখানে আখ চাষ হচ্ছে, কৃষকদের জীবন-জীবিকা আছে, চিনি শিল্পের সঙ্গে শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থানের ব্যাপার আছে এবং গুণগত মানের চিনি আমরা পেতে পারতাম, সেই সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।

বাংলাদেশে জাতীয় ন্যূনতম মজুরির প্রশ্ন এখনো মীমাংসা হয়নি, এটাই হওয়া উচিত। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি না থাকার কারণে মজুরদের মজুরির ওপর সবসময়ই নিম্নমুখী চাপ থাকে। মাথাপিছু আয়, জিডিপি বৃদ্ধি, উন্নয়নের জৌলুস দেখি কিন্তু শ্রমিকদের বিবর্ণ দশা কাটে না।

সরকারের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় মাসিক আয় এখন ২০ হাজার টাকা। পোশাক শ্রমিকরা এখন ২০ হাজার টাকা দাবি করছেন, এটা অযৌক্তিক কেন হবে? মাথাপিছু আয় ২০ হাজার টাকা হলে চারজনের একটি পরিবারের আয় হওয়া উচিত ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু পোশাক শ্রমিকরা একজন চাইছেন ২০ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়েই তারা পরিবার চালাতে চান। আসলে দেশে চারজনের কতসংখ্যক পরিবার আছে, যাদের আয় মাসিক ৮০ হাজার টাকা? সরকারের নথি থেকেই দেখা যায়, এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা শতকরা ২৫-৩০ ভাগের বেশি হবে না। অন্যদের মাসিক আয় আমরা দেখি ২৫-৩০ হাজার টাকার বেশি যায় না। বাকি টাকা কই? নিশ্চয়ই ছোট একটা গোষ্ঠীর হাতেই যাচ্ছে।

আসলে ২০ হাজার টাকা মোটেই বাঁচার মতো মজুরি নয়। কেননা হিসাবে দেখা যায়, একটি পরিবারের কম কম খেলেও শুধু খাওয়ার খরচই মাসে লাগে ২৫ হাজার টাকা। সেখানে ২০ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি হলে তার তো খাওয়ার খরচই হচ্ছে না। তার ওপর বিদ্যুৎ, গ্যাস, যাতায়াত খরচ আছে। সেগুলো সত্ত্বেও শ্রমিকরা ২০ হাজার টাকা দাবি করা মানে তারা মালিকদের প্রতি যথেষ্ট নমনীয়-দয়াশীল।

সরকারের দিক থেকে বহু আগেই কিন্তু বলা হয়েছিল শ্রমিকদের রেশনের ব্যবস্থা করা হবে। এ ধরনের প্রতিশ্রুতি অনেক আগেই আমরা শুনেছি। এখন পর্যন্ত সেই রেশনিং ব্যবস্থা হয়নি। জাতীয়ভাবে রেশনিং ব্যবস্থা হলে শ্রমিক, কৃষক সবার জন্যই একটা সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকত। এটা তো করা হয়নি; বরং শ্রমিকরা যখন দাবিটা জানাচ্ছেন, তাদের ওপর নানা রকম নিপীড়ন, নির্যাতন, হয়রানি আমরা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু এ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তো শ্রমিকের মধ্যেই। প্রবাসী ও পোশাক শ্রমিকরাই তো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি করছেন। যারা অর্থনীতির মূলশক্তি—প্রবাসী শ্রমিক, পোশাক শ্রমিক ও কৃষক—এ তিন গোষ্ঠী নানাভাবে বঞ্চনা ও অবজ্ঞার শিকার। প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের আসলে কোনো উপস্থিতি নেই। এটা আকস্মিক নয়, সে কারণে আমরা দেখি প্রাক-বাজেট আলোচনায় প্রবাসী শ্রমিক, পোশাক শ্রমিক, কৃষকের কোনো প্রতিনিধি নেই; অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক নেই; শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও নেই। শুধু ব্যবসায়ী ছাড়া আর কারো সঙ্গে পরামর্শ করা তারা প্রয়োজন মনে করে না। এটা এ কারণে যে তাদের লক্ষ্য থাকে কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার জন্য পুরো কাঠামো দাঁড় করানো।

পোশাক রফতানি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি করছে—এ যুক্তির ভিত্তিতে দেয়া সুযোগ-সুবিধাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এটা খুবই উচ্চমাত্রায় মালিকদের জন্য ভর্তুকিপ্রাপ্ত খাত হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। শুধু করোনাকালে নয়, সবসময়ই তারা ভর্তুকি পায়। কিন্তু যারা এর মূলশক্তি, সেই শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর ব্যাপারে মালিকদের যেমন আপত্তি, তেমনি তৃতীয় শক্তি হিসেবে কাগজে-কলমে রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করার কথা, সেটি আমরা কোনোভাবে কোনো সময়ই দেখি না।

বণিকবার্তা: অর্থবছর পরিবর্তনের বিষয়ে একটা আলোচনা আছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

আনু মুহাম্মদ: আমরা অনেক দিন ধরে অর্থবছর পরিবর্তনের কথা বলছি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অর্থবছর জুলাই-জুন চলছে। বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশ (যেমন অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান) ছাড়া আর কোথাও জুলাই-জুন অর্থবছর নেই। আর বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই-জুন একটা খুবই অসুবিধাজনক অর্থবছর। কারণ দেখা যায়, অর্থবছরের শেষ দিকে বৃষ্টি শুরু হয় এবং তাড়াহুড়ো ব্যয়, অপচয় ও দুর্নীতি মিলে বড় ধরনের অনিয়ম ঘটতে থাকে। সেজন্য আমরা বিভিন্ন সময় বলেছি, অর্থবছর হয় জানুয়ারি-ডিসেম্বর হোক কিংবা বাংলা বর্ষ বৈশাখ-চৈত্রের সঙ্গে মিলিয়ে এপ্রিল-মার্চে হোক। ভারতেও অর্থবছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ, বহু দেশেই জানুয়ারি-ডিসেম্বর। কাজেই আমাদের এখানে এপ্রিল থেকে হতে পারে কিংবা জানুয়ারি থেকে হতে পারে। এ পরিবর্তনটা সরকার কেন গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না, তার কারণ আমার কাছে বোধগম্য নয়। আমি মনে করি, অর্থবছর অবিলম্বে পরিবর্তন করা উচিত। এর মাধ্যমে কিছু অপচয় বা দুর্নীতি কমানো সম্ভব। এখন সরকার যদি বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য পরিবর্তন না করে তাহলে তো আর বলে লাভ নেই। কিন্তু শুধু অর্থবছর পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই বিভিন্ন কাজে অপচয় ও দুর্নীতির সুযোগ কমে যেতে পারত।

বণিকবার্তা: করোনার মধ্যে সব দেশের সরকারই জনপ্রশাসন ব্যয় কমিয়েছে। বাংলাদেশে কমানো হয়নি, বরং বাড়ছে। জনপ্রশাসন ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

আনু মুহাম্মদ: এ ব্যয় বৃদ্ধির কোনো দরকার নেই। আগেও ছিল, তবে মন্ত্রী, আমলাদের পেছনে অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা, বাড়ি-গাড়ি, শান-শওকত অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়েছে গত বছরগুলোয়। জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা না থাকলে এ রকমই হয়। আমলারা তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করতেই পারে। কিন্তু একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের দায়িত্ব অগ্রাধিকার ঠিক করা। করোনাকালের পরে, আন্তর্জাতিকভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতি, সর্বোপরি শ্রীলংকার দৃষ্টান্ত সামনে আসার পরে জনপ্রশাসন ব্যয় তো বড় আকারে কমানো উচিত ছিল। জনপ্রশাসনে অনেক ব্যয় আছে, যা কোনোভাবেই যৌক্তিক দেখানো যায় না। যেমন বিভিন্ন ঋণযুক্ত প্রকল্পে বিদেশ সফর, বস্তুত এগুলো দুর্নীতির আরেক রূপ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে দলেবলে বিদেশ সফরে যায়, প্রতিটি সরকারি সফরে দেখি অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে সংখ্যা অনেক বেশি। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নানা সংকটে থাকলেও, বহু জনপ্রয়োজনীয় কাজ টাকার অভাবের কথা বলে ফেলে রাখলেও, অনেক লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করলেও, এগুলো সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে কিছু গোষ্ঠীর পকেট ভরার ব্যবস্থা করা হয় উন্নয়নের নামে। নানা কর্মসূচিতে কিছু গোষ্ঠীর বিত্ত-বিলাস নিশ্চিত করাই জনপ্রশাসন ব্যয়ের অন্যতম দিক। এছাড়া আছে নিপীড়নের ব্যবস্থা জোরদার করার খরচ।

সরকার কর্মসংস্থানের কথা বলছে, কর্মসংস্থান বাড়ানোর কথা বলে অধিদপ্তর করতে চায়। তার মানে আরো অপ্রয়োজনীয় বরাদ্দ। অথচ সরকারের হাতের মধ্যেই কিন্তু চার-পাঁচ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে, যেটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। যেমন অনেক স্কুল আছে, যেখানে শিক্ষকের পদ খালি, শিক্ষকের অভাবে ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে না। বেশকিছু কলেজে আমাদের অর্থনীতি বিভাগসহ অনেক বিভাগ আছে, যেখানে বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের পদ খালি। হাসপাতালগুলোয়ও দেখা যায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীর পদ শূন্য। রেলওয়েতে অনেক পদ শূন্য রাখা হয়েছে। এসব জায়গা ছাড়াও আরো কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যেমন ফায়ার ব্রিগেড, শ্রম পরিদর্শন বিভাগে সক্ষমতা আরো বহুগুণ বাড়ানো দরকার। এসব জায়গায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে সচিব, যুগ্ম সচিব তাদের প্রয়োজন নেই, বসার জায়গা নেই, তাদের পদ বাড়ানো হচ্ছে, তারপর নতুন নতুন অধিদপ্তর খোলা হচ্ছে, যেগুলোর দরকার নেই। বাগাড়ম্বর না করে যেসব পদ খালি আছে সেগুলোয় নিয়োগ দেয়া এবং কর্মসংস্থান হওয়ার কাজ যাতে বিকশিত হয়, শক্তিশালী হয়, সেটি করা খুবই সম্ভব। এজন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে অবহেলা থেকে তুলে আনতে হবে। তাছাড়া পাটকল, চিনিকল, অটোরিকশা, হালকা প্রকৌশলসহ স্থানীয় শিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটালে অনেক কর্মসংস্থান সম্ভব।

[১৯ জুন ২০২২, বণিক বার্তায় পত্রিকায় প্রকাশিত; শ্রুতলিখন: হুমায়ুন কবির]