বাংলাদেশে বিশ্বসংস্থা ও রাষ্ট্র

395171 507199335966269 357132931 nবিশ্ব পুঁজিবাদের সঙ্গে অঙ্গীভূতকরণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন কোনো ব্যাপার নয়৷ অন্যান্য দেশের অর্থনীতির মত এদেশের অর্থনীতিও দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ব অর্থনীতির অঙ্গীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷ গত কয়েক দশক ধরে, বিশেষত গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঙ্গীভূতকরণ প্রক্রিয়া গতি লাভ করেছে৷ এ প্রবন্ধে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় বাংলাদেশের অঙ্গীভূত হবার প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় বিশ্ব সংস্থাগুলোর ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়েছে৷

রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হবার পর প্রকল্প খাতে বাংলাদেশে তথাকথিত বৈদেশিক সাহায্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটে৷ স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই পাকিস্তান কনসোর্টিয়ামের অবয়বে বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম’ গঠিত হয়৷ গত তিরিশ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারকে দেয়া ব্যাংকের দিকনির্দেশনা এবং সুপারিশ পর্যালোচনা করলে পরিষ্কার দেখা যায় যে ব্যাংক তার আদর্শগত কাঠামোর ব্যাপারে সব সময় অবিচল থেকেছে৷ তার এজেন্ডা গছিয়ে দেবার জন্য সরকারগুলোকে সবসময় খোশমেজাজে রাখার চেষ্টা করেছে৷ রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা সত্ত্বেও পরপর সব সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে তারা সমর্থন দিয়ে গেছে৷ এ ধরনের কূটনীতি বাংলাদেশে বিশ্ব সংস্থাগুলোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর বিপণন কৌশল হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে৷
বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮), যা পরিষ্কারভাবে রাষ্ট্রীয় খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে রচিত হয়েছিল, বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল৷ ব্যাংক এই ‘সমাজতান্ত্রিক’ পরিকল্পনাকে a remarkable document analytically sophisticated’ হিসাবে আখ্যায়িত করে৷ ১৯৭৫ সালে একদলীয় রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হওয়ায় ব্যাংক পুনরায় ‘উত্ফুলল্ল’ হয়ে ওঠে৷ তারা রাজনৈতিক পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলতে শুরু করে৷ ব্যাংক দৃঢ়তার সঙ্গে মন্তব্য করে যে, “সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন অরাজকতা, চোরাচালানী, মজুতদারী এবং কালোবাজারীদের দমন করতে সরকারের হাতকে শক্তিশালী করবে৷” তারা একথা বলতেও দ্বিধা করে নি যে, এই প্রতিবেদনে কিছু অর্থনৈতিক সংস্কারের ঈঙ্গিত দেয়া আছে যেগুলো বাংলাদেশকে জরুরী ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে৷ তারা বাংলাদেশকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, “Bangladesh would need about $ 1.2 billion of disbursement of external aid in 1975-76. The willingness of donors to continue providing aid in generous amounts to Bangladesh will not doubt depend on its ability to demonstrate by implementation of satisfactory policies and measures.”৷
এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে এক রক্তাক্ত রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে৷ রাষ্ট্রপতি নিহত হন এবং বাংলাদেশে সামরিক শাসন জারি হয়৷ ব্যাংক পুনরায় নতুন সরকারের প্রশংসা করতে থাকে৷ বিগত সরকারের সমর্থনে যে কারণগুলো ব্যবহার করা হয়েছিল একই কারণে নতুন সরকারকে সমর্থন জানানো হয়৷ এর মধ্যে ছিল আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘serious efforts’৷ ব্যাংক আরো বলে “On the industrial side, capacity utilization has improved in a number of sectors, as a result of a more liberal import policy and an enhanced supply of raw materials and spares—-. There has been some movement in the direction of a more market-oriented economy.” তারা আশা প্রকাশ করে যে সংস্কার কর্মসূচী ১৯৭৫ সালের মে মাসে টাকার অবমূল্যায়ন এবং IMF-এর পৃষ্ঠপোষকতায় যে কাঠামো-বিন্যাস কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় তা এই সংস্থাদ্বয় কর্তৃক অনেক আগেই সুপারিশ করা হয়েছিল৷ কাঠামো বিন্যাস-কার্যক্রম পূর্বের সুপারিশকৃত সকল ‘সংস্কার’কে একটি মোড়কের মধ্যে নিয়ে আসে৷
ক্রুগ থেকে পিআরএসপি
১৯৭০ সালের শুরুর দিক থেকে বিশ্বব্যাংকসহ বিশ্বসংস্থাগুলো দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচীর ওপর জোর দিতে থাকে৷ ১৯৭০ এর মধ্যভাগ থেকে নারী বিষয়ক কর্মসূচী জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ এ ধরনের কর্মসূচী সরকারী কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে এবং দেশে এ জাতীয় কাজের জন্য প্রচুর সংখ্যক এনজিও’র আবির্ভাব ঘটে৷ পাশাপাশি এ ধরনের কর্মসূচীর জন্য বাইরে থেকে তহবিল আসতে থাকে৷ তবে ১৯৯৫ সালে সম্পাদিত গ্যাট চুক্তি সম্ভবত একটি একক দলিল যা বিশ্বের সকল অর্থনীতিকে এক সুতায়-গাঁথার ভিত্তি রচনা করে৷
সার্বিকভাবে বিশ্ব সংস্থাগুলোর যেসমস্ত কার্যক্রম দ্বারা বাংলাদেশসহ প্রান্তিক অর্থনীতিগুলিকে কেন্দ্রীয় অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে,
১. ‘সবুজ’ বিপ্লব,
২. কাঠামো পুনর্বিন্যাস কার্যক্রম,
৩. ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ’ কার্যক্রম,
৪. গ্যাট চুক্তি,
৫. বৈদেশিক ‘সাহায্য’ ও পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্য, কারিগরি সাহায্য, সংস্কার, কনসালটেন্সি, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা৷ দারিদ্র্য হ্রাস কৌশল (PRSP) এই সিরিজের সর্বশেষ কার্যক্রম (সারণী ১ দেখুন)৷
সারণী ১ : বিশ্ব সংস্থাসমূহ কর্তৃক পরিচালিত কার্যক্রম
সময় : ১৯৫০ এর দশক
গৃহীত কার্যক্রম : বৈদেশিক সাহায্য, শিক্ষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, ক্রুগ মিশন, নতুন প্রজন্ম এক্সপার্ট, সাহায্য এবং পানি সম্পদ প্রকল্প
ফলাফল : কনসালটেন্সি নির্ভর নতুন প্রজন্ম, নদী, খাল এবং নালা বন্ধকরণ৷
সময় : ১৯৬০ এর দশক
গৃহীত কার্যক্রম : সবুজ বিপ্লব
ফলাফল : একক ফসল এবং কৃষির ক্রমবর্ধমান বাজারমুখী প্রবণতা৷
সময় : ১৯৭০ এর দশক
গৃহীত কার্যক্রম : দারিদ্র্য দূরীকরণ কার্যক্রম, রাষ্ট্রের পরিপূরক বিশ্ব সংস্থা
ফলাফল : এনজিও এবং সিভিল সোসাইটির আবির্ভাব
সময় : ১৯৮০ এর দশক
গৃহীত কার্যক্রম : কাঠামো পুনর্বিন্যাস কার্যক্রম
ফলাফল : অশিল্পায়ন এবং বিশ্বসংস্থার ভিত্তি (SAP) শক্তিশালীকরণ
সময় : ১৯৯০ এর দশক
গৃহীত কার্যক্রম : গ্যাট চুক্তি বেসরকারীকরণের মাধ্যমে সাধারণ সম্পত্তি উন্মুক্তকরণ
ফলাফল : বেসরকারীকরণের মাধ্যমে সাধারণ সম্পত্তি উন্মুক্তকরণ
সময় : ২০০১
গৃহীত কার্যক্রম : দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল
ফলাফল : পরবর্তী পর্যায় কার্যক্রম (SAP) অব্যাহত এবং পুরানো কাঠামো পূনর্বিন্যাস
কৃষি এবং পানি সম্পদ
১৯৫৪ সালের বন্যার পর ক্রুগ মিশন তত্কাSলীন পূর্ব পাকিস্তান সফর করে৷ এই মিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৫৯ সালে পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (WAPDA) গঠিত হয় এবং বহু বন্যানিয়ন্ত্রণ এবং সেচ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়৷ ১৯৬৪ সালে পানি সম্পদ উন্নয়নের জন্য একটি ২০ বত্সরর মেয়াদী মাস্টার প্ল্যান তৈরীর কাজ শুরু হয়৷ একদিকে (WAPDA) কে যখন বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচের দায়িত্ব দেয়া হয় তখন অন্য দিকে BADC’র উপর অর্পণ করা হয় উফশী বীজ, রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক জনপ্রিয়করণ, বিতরণ ও বাজারজাত করার দায়িত্ব৷ সংস্থা দু’টির (WAPDA এবং BADC) অধীনে এই কার্যক্রমগুলো ১৯৬০-এর দশকের ‘সবুজ’ বিপ্লব নামে মহাযজ্ঞের সঙ্গে খাপ খেয়ে যায়৷ ‘সবুজ’ বিপ্লব ছিল একটি প্যাকেজ কার্যক্রম যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল উফশী ধান বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং যান্ত্রিক সেচ৷
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর বাংলাদেশে পাকিস্তান আমলে গৃহীত কৃষির এই আধুনিকায়ন কার্যক্রম মূল্যায়ন করার কাজ কোন সরকারই গ্রহণ করে নি৷ বরং এটাকে সমর্থন দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ তাই এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যখন দেখা যায় যে, ১৯৫৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত ৪৮২টি ছোট, মাঝারী এবং বৃহৎ পানি বাঁধ প্রকল্পের মধ্যে, ‘প্রায় ৪০০টি প্রকল্প ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর বাস্তবায়িত হয়৷’ এই সমস্ত প্রকল্পের অধীনে ৮,২০০ কিলোমিটারের বেশি বাঁধ নির্মিত হয়৷ এছাড়া, ‘৪,৭০০ কিলোমিটারের বেশি সেচ খাল, ৩,৪০০ কিলোমিটার পানি নিষ্কাশন খাল, ৯,০০০ এর বেশি হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার (যেমন, স্লুইস গেট এবং রেগুলেটর), ৪,৩০০ ব্রিজ এবং কালভার্ট, ৯৬ পাম্পঘর এবং দু’টি ব্যারেজ নির্মিত হয়৷’
একইভাবে বিশ্ব ব্যাংকের সরাসরি উদ্যোগ এবং ঋণ সহায়তায় ১৯৬৫ সাল থেকে কৃষি উপকরণ কার্যক্রম দ্রুত বিস্তার লাভ করে৷ এর ফলে ১৯৭০ সালে বিশ্ব ব্যাংক রিপোর্ট করে যে, সার ব্যবহার প্রতি বছর ২৩ শতাংশ হারে বেড়েছে এবং ১৯৭০ সালে প্রায় ৩,৭৫,০০ টন ইউরিয়া, টি.এস.পি. এবং পটাশ সার ব্যবহৃত হয়েছে৷ ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ৮.৪ মিলিয়ন টন কীটনাশক ব্যবহৃত হয়েছে বলে হিসাব করা হয়৷ ধান উত্পাড়দন কার্যক্রম ত্বরান্বিতকরণ সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়, ‘১৯৭০ সালের জুলাই মাসে শুরু করা এই কার্যক্রমের অধীনে ফিলিপাইন থেকে ১৮০০ টন IR-20 (১,৮০,০০০ একরের জন্য যথেষ্ট) উফশী ধান বীজ এবং প্যাকেজের কার্যক্রমের অধীনে অন্যান্য উপকরণও সরবরাহ করা হয় ঋণের মাধ্যমে৷ ১৯৭১ সালে বর্ষা ঋতুতে ৫ লক্ষ একর জমিতে IR-20 বপন করা হয়’৷
১৯৭২ সালের দিকে অজানা কারণে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে ১৯৬০এর দশকে শুরু হওয়া কিছু প্রকল্পের সমালোচনা করা হয়৷ এ সময়ের অনেক প্রকল্পকে তারা ‘Poorly-Conceived’ এবং দেশের বিশেষ প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে ‘ill-suited’ হিসাবে আখ্যায়িত করে৷ তারা বিশেষভাবে একটি প্রকল্পের নাম করে, সেটা হলো গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প৷ প্রকল্পটিকে তারা ‘an example of a poorly-selected project’ হিসাবে আখ্যায়িত করে৷ কিন্তু ইতিমধ্যে এই প্রকল্প খাতে ১৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়ে গিয়েছে৷ বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্প সম্পর্কে বলে যে, after 16 years of construction, redesign and reconstruction, the project failed to perform at even 50 percent of the original design standard.’
এই একই সংস্থাটি আবার একই সময় একই ধরনের পুরনো প্রকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিল এবং নতুন প্রকল্প গ্রহণ করছিল৷ নতুন সরকার মুখে সমাজতন্ত্র ও দেশ গড়ার কথা বললেও ‘নতুন দেশ’ গড়ার উদ্দেশ্যে ধারণা, জ্ঞান এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শের জন্য নির্ভরশীল ছিল বিশ্বব্যাংকের ওপরই৷ এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮০ সালে বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব সরকারের সাফল্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, ‘Starting with reactivation of eleven ongoing projects in 1972-73 for a total credit of $ 151.40 million, we have moved a long way when the cumulative commitment of the Bank group stood at $ 1509 million on June 20, 1980.’৷
বিশ্বব্যাংকের নয় খণ্ড সমীক্ষা
১৯৬০ দশকের মধ্যভাগে বিশ্বব্যাংক তত্কা লীন পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর (বিশেষত কৃষি) এক ব্যাপক সমীক্ষা চালায়৷ সমীক্ষাটি স্বাধীনতার পরপরই প্রকাশিত হয় এবং নতুন সরকারের জন্য সেটাই ওয়ার্কিং ডকুমেন্ট হিসাবে ভূমিকা পালন করতে থাকে৷ সমীক্ষায় কৃষি এবং পানি সম্পদ বিষয়ে সরকারের জন্য বিশ্বব্যাংকের দর্শন অনুযায়ী দিক নির্দেশনা ছিল৷ কিন্তু রিপোর্টগুলির উপর ‘গোপনীয়’ সীল মেরে ওগুলো জনগণের অগোচরে রেখে দেয়া হয়৷
সরকারের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব সমীক্ষাই সুপারিশ অনুসরণ করা হয়৷ সমীক্ষা রিপোর্টটি ছিল ১৯৬৬ সালে কৃষি ও পানি সম্পদ খাতে ব্যাংকের সর্বশেষ পদক্ষেপ৷ ব্যাংক নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকারকে ‘আন্তর্জাতিক সংলাপ’-এর কথা বলে৷ ব্যাংক তার স্টাডি রিপোর্টকে ‘an initial contribution to such dialogue’ হিসাবে আখ্যায়িত করে৷ বিশ্বব্যাংক স্পষ্ট ভাষায় বলে যে, “The nine volume of Bangladesh land and water resources study (Report No. ps-13) provides an opportunity for the Bank group to assist the Bangladesh authorities in the development of a new nation’s major production sector. The study summarizes and provides a new analysis of all relevant data, introduces techniques for sectorial planning and for testing macro-economic consistency, and uses these techniques to construct a ‘sample’ program for the sector.” ব্যাংক এই রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী কাজ শুরু করে এবং সরকারও তা অনুসরণ করে৷
বিশ্বব্যাংক তার প্যাকেজ কার্যক্রমগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করে_’ন্যুনতম প্যাকেজ’ এবং ‘নিবিড় (intensive) প্যাকেজ কার্যক্রম’৷ ন্যুনতম প্যাকেজ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ছিল ১৯৭০ সালে চালু করা বর্ধিত ধান উত্পাপদন স্কীম যার অধীনে উপযুক্ত এলাকায় পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে IR-20 কে জনপ্রিয় করে তোলা যায়৷ স্টাডিতে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ধান উত্পাপদনের একটি অভিক্ষেপ (Projection) করা হয়৷ এ অভিক্ষেপে দেখানো হয় যে শুধু উপকরণ ব্যবহার করলে একর প্রতি ধান উত্পাcদন হবে ২২.৪০ মে. টন৷ ৩৭.৯০ মে. টন উত্পারদন হবে উপকরণ এবং সেচ ব্যবহার করলে এবং ৫০.৪৮ মে. টন উত্পা.দন হবে উপকরণ, সেচ এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অবলম্বন করলে৷ ২০০৫ পর্যন্ত সব ব্যবস্থা অবলম্বনের পর উত্পাউদন হয় ২৬.৭৫ মে. টন যা ছিল উল্লেখিত অভিক্ষেপের মাত্র পঞ্চাশ শতাংশ৷
ব্যাংক গ্রুপ মিশন কর্তৃক অক্টোবর ১ থেকে ২৮, ১৯৭২ বাংলাদেশ সফরের পর ১৯৭৩ সালে আরো একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়৷ মিশন, ‘কৃষি উপকরণের প্রয়োজন এবং কৃষি খাতে ভবিষ্যৎ প্রকল্প এবং কার্যক্রম’ নিয়ে সরকারী সংস্থাসমূহের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করে৷ যেহেতু ‘প্রয়োজন’ আগের স্টাডি থেকেই নির্ধারিত ছিল তাই রিপোর্ট সহজে মন্তব্য করে যে, গবেষণা কার্যক্রমসহ তাদের মনযোগ উফশী ধানের ওপরই নিবদ্ধ৷ এই উফশী ধান ফিলিপাইনের International Rice Research Institute (IRRI)উদ্ভাবিত, যা Bangladesh Rice Research Institute (BRRI) ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এর জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপকরণসহ স্থানীকরণ করে৷ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এ সমস্ত প্রকল্পের কোনটাই উন্নত স্থানীয় প্রজাতি নিয়ে কাজ করে নি, যা উদ্ভাবিত হলে হয়ত রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং ভূ-গর্ভস্থ পানিভিত্তিক সেচের জন্য বিনিয়োগ করতে হতো না৷
উপরে উল্লেখিত আধুনিকায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য একটি সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজন দেখা দেয়৷ রিপোর্ট জানায় যে, ব্যাংক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তিনটি উচ্চ সম্ভাবনাময় কার্যক্রমকে সহায়তা দেবে৷ প্রকল্পগুলো হলো : Integrated Rural Development Progamme (IRDP), Rural Works Programme (RWP) এবং Thana Irrigation Programme (TIP)৷ ব্যাংক অবশ্য, ‘RWP কার্যক্রমের ইঞ্জিনিয়ারিং উপকরণ শক্তিশালী করার জন্য’ জডচ-এর কর্মকাণ্ডকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে এবং কৃষি উত্পাচদন বৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র পানি-নিষ্কাশন এবং সেচ প্রকল্প গ্রহণ করতে RWP -এর কার্যক্রমের উপর গুরুত্ব আরোপ করে৷
মধ্য ৬০’র দশকে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের উদ্যোগে কীটনাশক, সার, বীজ এবং টিউবওয়েল ব্যবসা একটি ক্রমবর্ধমান তত্পনরতা হিসাবে দেখা দেয়৷ এ সমস্ত উপকরণের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে কৃষিতে ভর্তুকি প্রত্যাহারের বিষয়টা গুরুত্ব পেতে থাকে৷ ১৯৭২-৭৩ সালের মধ্যে সরকার ইউরিয়া সারের মূল্য একশ’ শতাংশ এবং ফসফেট ও পটাশ সারের মূল্য পঞ্চাশ শতাংশ বৃদ্ধি করে৷ বিশ্বব্যাংক এ পদক্ষেপকে যথার্থ এবং উপকারী হিসাবে আখ্যায়িত করে৷ তারা বলে যে, ‘রাসায়নিক সার ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে চাষীদের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বর্ধিত মূল্য সার ব্যবহারে কোন প্রভাব ফেলবে না৷’ তারা কীটনাশকের মূল্যের দিকেও নজর দেয়৷ ব্যাংক বলে যে, ‘উফশী ধান বীজ ব্যবহারের ফলে কীটনাশক ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷’ এ সময় পর্যন্ত কীটনাশক বিনামূল্যে সরবরাহ করা হতো৷ যখন চাষীরা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তখন পরিস্থিতি ক্রমশ বদলাতে থাকে৷ বলা হয়, ‘অপচয় হ্রাসের উদ্দেশ্যে সরকার আগামী বছরের শুরুতে ন্যুনতম মূল্য ধার্য করার পরিকল্পনা নিচ্ছে’৷ সরকারের এই পরিকল্পনা অবশ্যই কখনোই বিশ্বব্যাংকের ধারণা এবং উদ্যোগের বাইরে ছিল না৷ (সার বাজার উদারীকরণের পদক্ষেপ বিষয়ে সারণী ২ দেখুন)
১৯৭৬ সালে FAO কনসালট্যান্ট এইচ, ব্র্যামার সম্পাদিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনও (BADC) একই ধরনের মন্তব্য করে৷ প্রতিবেদনটি ইঙ্গিত দেয় যে, ক্রমবর্ধমান সারের চাহিদার প্রেক্ষিতে কৃত্রিম অভাব তৈরী করা হচ্ছে এবং কালো-বাজারী ঘটছে৷ এই সঙ্কটের প্রেক্ষিতে আরেক দফা মূল্য বৃদ্ধি যথার্থ বলে মনে করা হয়৷ সার বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত (BADC) তার একটি টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে বলে, ‘সারের বর্তমান সঙ্কট এবং এর কালোবাজারীর জন্য উচ্চ মূল্য সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল বয়ে আনবে… সারের সঙ্কট এবং এর উচ্চ মূল্য সম্পর্কে আলোচনা সারের গুরুত্বের ব্যাপারে চাষীদের অনেক সচেতন করেছে৷ এটা স্বাভাবিক সরবরাহ থাকা অবস্থায় সারের উপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দেয়৷’ রিপোর্ট আরো বলে, “চাষীরা বর্তমান সার সঙ্কটের সময় কালো বাজার থেকে সার ক্রয় করছে অর্থাৎ সারের ওপর থেকে অবশিষ্ট সরকারী ভর্তুকি সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা যায়৷”
সারণী ২ : সারের বাজার উদারীকরণ
সময় : ১৯৬৩
গৃহীত ব্যবস্থা : EPADC (পূর্ব পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) গঠন এবং সার সংগ্রহ বিতরণ করা
সময় : ১৯৭৭-৭৮
গৃহীত ব্যবস্থা : BADC এর ভূমিকা হয়ে পড়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সংস্থাটি ট্রানজিট, মাধ্যমিক পর্যায়ে গুদাম এবং TCS এর মাধ্যমে বিতরণ করতে থাকে৷
_ সীমিত এলাকায় প্রাইভেট ডিলাররা সার বিক্রয়ের অনুমতি পায়
_ তাদের রেজিস্টার রাখতে হতো
সময় : ১৯৭৮-৮৩
গৃহীত ব্যবস্থা : পাইকারী ও খুচরা বিক্রয় বন্ধ করে দেয়া হয়
সময় : ১৯৮২-৮৩
গৃহীত ব্যবস্থা : বিক্রয় লাইসেন্স এবং সার চলাচল ব্যবস্থার উপর থেকে বাধা অপসারণ করা হয়
সময় : ১৯৮২-৮৪
গৃহীত ব্যবস্থা : মূল্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা হয়
সময় : ১৯৮৯
গৃহীত ব্যবস্থা : প্রাইভেট ডিলাররা কারখানা গেট থেকে এবং বন্দর থেকে সরাসরি সার কেনার সুযোগ পায়
সময় : ১৯৯২
গৃহীত ব্যবস্থা : বিশ্ব বাজার থেকে সার আমদানীর ব্যবস্থা করা হয়
উত্স : Sapri, 2001
টাস্ক ফোর্স অন্যদিকে দেখতে পায় যে উফশী প্রজাতি কৃষকরা গ্রহণ করে নি৷ মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায় যে উফশী আমনের ব্যবহারের ব্যাপারে দেশের প্রায় সব এলাকার জন্য উচ্চাভিলাষ হিসাব করা হয়েছিল৷ BADC -এর রিপোর্টে বলা হয়, ‘স্বাভাবিক হারকেও ৩-৪ গুণ বেশি হিসাব করা হয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে কুড়িগুণ বা তারও বেশি হিসাব করা হয়েছে৷’ রিপোর্ট উফশী’র বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধের কথাও জানায়৷ টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ‘পরিকল্পনা এবং মাঠ কর্মীরা এটা স্বীকার করতে বাধ্য হন যে প্রার্থিত হারে উফশী চাষ সম্প্রসারণের পথে কারিগরি সমস্যার চেয়ে সামাজিক বাধাই প্রবল৷’ এই অনিচ্ছার বাধা দূর করে আমদানী-করা কৃষিকে জনপ্রিয় করার জন্য সরকার ব্যাপক প্রচার শুরু করে৷ এটা খুবই কার্যকর ফল দেয়৷ রাসায়নিক সার ব্যবহারের দিকে মানুষ ঝুঁকে পড়ে এবং ক্রমে তাতে আসক্ত হয়ে ওঠে৷ প্রায় দুই দশক পর ১৯৯৫ সালে সার সঙ্কটের সময় সার সংগ্রহ করতে-আসা উত্তেজিত চাষীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়৷ সে বছর সার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের গুলিতে ১৭ জন চাষী নিহত হন৷
বাংলাদেশে ‘সবুজ বিপ্লব’ কার্যক্রম সফল করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ যুক্তরাষ্ট্র কৃষি এবং পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিবিড় প্রকল্প গ্রহণ করতে শুধু বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংককে প্রভাবিত করে নি, তারা USAID এর মাধ্যমে সরাসরি এ ধরনের প্রকল্পে অংশ নেয়৷ বাংলাদেশে সংস্থার ‘উন্নয়ন সহায়তা কার্যক্রম’-এর মূল লক্ষ্য ছিল কৃষি, জনসংখ্যা, স্বাস্থ্য এবং জ্বালানী খাত৷ এ ছাড়াও সংস্থাটি অনেক শিক্ষা ও গবেষণা সহায়তা প্রদান করে৷ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কৃষিবিষয়ক প্রধান প্রধান সকল প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্র-বিশ্বব্যাংকের কৃষি ও পানি সম্পদ বিষয়ক কার্যক্রমের পরিপূরক করে স্থাপন করা হয়৷ ফলে এ সমস্ত ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দক্ষতা গড়ে ওঠে, ঐ সমস্ত প্রয়োজন ও লক্ষ্যকে সামনে রেখেই৷ যার দরুন এটা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয় যখন দেখা যায় যে, বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা বহুলাংশে গড়ে উঠেছে বহুজাতিক কোম্পানীর চাহিদানুযায়ী৷
ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার
বিশ্বব্যাংক বার বার গৃহস্থালী এবং কৃষিকাজের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের বিপুল সম্ভাবনার কথা বলে৷ উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ১৯৭৩ সালে তারা বলে, ‘লো-লিফট পাম্প সেচের জন্য সবচেয়ে সস্তা এবং নমনীয় উপায়, তাই এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার কাজ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে৷’ রিপোর্টে আরো বলা হয় যে, ‘বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে ভূগর্ভে সম্ভাবনাময় পানি সম্পদ রয়েছে৷ শ্যালো টিউবওয়েল ব্যবহার করে এই সম্পদ ব্যবহারে উচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে৷’
একই ধরনের কার্যক্রম প্রণয়নে ও সহায়তায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়৷ সংস্থাটি সরকার কর্তৃক এ জাতীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এবং ‘উপকরণ সরবরাহ বেসরকারীকরণ এবং শস্য সংগ্রহ এবং গুদামজাতকরণ, প্রয়োজনীয় সার, কীটনাশক, ক্ষুদ্র সেচ যন্ত্রপাতি এবং কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরী ও সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক জিনিস আমদানীর’ সহায়তা দানের জন্য ১৯৮২ সালে দেয়া অঙ্গীকার পুনরুল্লেখ করে৷ তারা ‘পানি সম্পদ ব্যবহারের জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন আশু প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করে৷ এভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন নির্বিচারে বৃদ্ধি পায়৷ যার সঙ্গে ৯০ দশক থেকে আর্সেনিক প্রকোপ বৃদ্ধির যোগ আছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন৷
বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সেচ প্রকল্প : মূল্যায়ন
অসংখ্য দলিলপত্র এবং প্রতিবেদনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন এবং সেচ (FCD) প্রকল্প সমূহের উদ্যোগ প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে৷ কিন্তু খুব কম প্রতিবেদনে এগুলোর সমাপ্তি-উত্তর মূল্যায়ন করা হয়েছে৷ ১৯৮৮ সালে এ্যালেন সি. লিন্ডকুইস্ট UNDP এর পৃষ্ঠপোষকতায় সম্পাদিত কৃষি খাত পর্যালোচনা বিষয়ক এক নিরীক্ষা করতে গিয়ে এর আগের তিন দশকের কিছু বৃহৎ প্রকল্প সমীক্ষা করে কিছু তিক্ত সত্যের সন্ধান লাভ করেন৷
বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক উভয়ই (FCD) প্রকল্প উদ্যোগে মুখ্য ভূমিকা পালন করে৷ তারা পানি সম্পদ বিষয়ক উভয় ধরনের প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল_বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্থ ভূ-উপরিস্থ পানি প্রকল্প এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনস্থ ভূ-গর্ভস্থ পানি প্রকল্প৷ আশির দশকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এ সমস্ত প্রকল্পগুলোর ৭০ শতাংশ ছিল এই সংস্থা দুটোর অধীনে৷ পরবর্তীতে তা ৭৪.৫৫ শতাংশে উন্নীত হয়৷
লিন্ডকুইস্ট তার রিপোর্টে বলেন যে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক যদিও ‘প্রকল্প সমাপ্তি’র পর প্রকল্প সমাপ্তি রিপোর্ট তৈরী করে, ‘বাংলাদেশে অনেক প্রকল্প পুরোপুরিভাবে সমাপ্ত হয় নাই যদিও তা শুরু হয় দশ বত্স র পূর্বে৷’ তাঁর মতে ‘ঢাকার এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অফিস পানি সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক একটি প্রকল্প সমাপ্তি রিপোর্টও দেখাতে পারে নাই৷’ লিন্ডকুইস্ট বাংলাদেশ পানি সম্পদ বিষয়ক অন্য একটি পর্যালোচনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, ‘১৯৭৩ সাল থেকে ADB প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাত্র তিনটি সমাপ্ত হয়েছে এবং ওগুলো সমাপ্ত করতে গড়ে নির্ধারিত সময়ের ৭২% সময় বেশি লেগেছে৷’
অন্যদিকে লিন্ডকুইস্ট বিশ্বব্যাংকের কাগজপত্রগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় পান; যদিও, ‘কূটনীতিক ভাষা এবং রিপোর্টের চাকচিক্য বিতর্কিত বিষয়গুলোকে আড়াল করে দেয় এবং খোলাখুলি আলোচনার বাইরে রাখা হয়৷’ তিনি আরো দেখেন যে, ‘অর্থনৈতিক লাভের হার ১৫ শতাংশের বেশি কমে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য’ প্রকল্পের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন এবং অনুমিতিগুলোকে সেই মতো বিন্যাস করা হয়েছে৷
লিন্ডকুইস্ট একই ধরনের দু’টি প্রকল্পের মধ্যে খরচের ব্যাপক তারতম্য দেখতে পান৷ মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে প্রতি হেক্টরে খরচ হয় ৪ হাজার মার্কিন ডলার, পক্ষান্তরে বরিশাল সেচ প্রকল্পে খরচ হয় হেক্টর প্রতি ৩৬০ মার্কিন ডলার৷ এ সমস্ত প্রকল্পের প্রধান সুবিধাভোগী ছিল কনসালট্যান্টরা৷ এগুলো ‘সাহায্য’ নির্ভর প্রকল্প হওয়ায় দাতারা তাদের পছন্দমাফিক বাধ্যতামূলকভাবে কনসালট্যান্ট চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ পায়৷ যোগ্যতা বিবেচনা না করে তাদের বিপুল অঙ্কের ফি দেয়া হয়, যা ছিল প্রকল্প ব্যয়ের একটা বড় অংশ৷ আর একটি স্টাডির সূত্র ধরে লিন্ডকুইস্ট লেখেন যে, ‘বিদেশী কনসালট্যান্টদের ব্যয় স্থানীয় কনসালট্যান্টদের তুলনায় ৬.৮ থেকে ২৫ গুণ বেশি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড বা BWDB এর কাউন্টারপার্টদের তুলনায় ৫৭ থেকে ৭৩ গুণ বেশি৷’ পানি খাতে ‘সাহায্য’ নির্ভর প্রকল্পগুলোকে বিদেশিক কনসালট্যান্ট / দেশী প্রকৌশলী এবং / আমলা / সবাই অত্যন্ত লোভনীয় প্রকল্প হিসাবে দেখে থাকে৷ এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা যা এর ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনায় আনা হয় না৷ Hugh Brammer বহু দিন বাংলাদেশের পানি বিষয়ক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ তিনি একটি ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেন, ‘একজন প্রধান প্রকৌশলী একটি বিস্তারিত খসড়া ভূমি জরিপ প্রতিবেদনের সুপারিশে লেখা ‘সেচের জন্য উপযুক্ত নয়’ থেকে ‘নয়’ কথাটি কেটে দেন৷ কর্তৃপক্ষ সেই অনুযায়ী বিদেশি সূত্রে তহবিল সংগ্রহে সমর্থ হয়, কিন্তু এর ফলাফল হয়েছিল ভয়ংকর৷’ তিনি আরো লেখেন, ‘এ ধরনের জরিপ (এবং প্রকল্প মূল্যায়ন) কাজের জন্য নিয়োজিত কনসালট্যান্টরা জানতেন যে বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টের চেয়ে ‘সুখকর’ রিপোর্টে ব্যবসা পাওয়া যাবে৷’
ফ্লাড এ্যাকশন প্ল্যান
১৯৮৭ সালে এবং এর পরপরই ১৯৮৮ সালের বিধ্বংসী বন্যার কবল থেকে বিপুল ব্যয়ে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ কাঠামোগুলো বাংলাদেশকে রক্ষা করতে পারে নাই৷ কিন্তু এতদসত্ত্বেও পানি বিষয়ক কার্যক্রমগুলো আরো জোরদার এবং ব্যাপকভাবে চলতে থাকে৷ বিশ্বব্যাংক পূর্বের মতো ঋণ দিয়ে যায়৷ এটি অবশেষে ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ’ এবং ‘পানি ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রমে পরিণত হয়৷ জুন ১৯৮৯ বিশ্ব ব্যাংক এই কার্যক্রমে ‘সরকারের অনুরোধে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সমন্বয়ের জন্য সহায়তা করতে সম্মত হয়৷’ এরপর বিশ্বব্যাংক একটি রিপোর্ট দেয় যাতে একটি এ্যাকশন প্ল্যানের রূপরেখা দেয়া হয়, যেটিকে ‘বাংলাদেশে ব্যাপক ভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়৷ বিশ্ব ব্যাংক ১৯৮৯ সালের জুলাই ১১-১৩ তারিখ ওয়াশিংটনে এই বিষয়ে এক সভা আহ্বান করে৷ সেচ, পানি উন্নয়ন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল সভায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে৷ সভায় উপস্থিত ‘বিশেষজ্ঞগণ’ ‘এই মর্মে সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে সভার প্রথম কাজ হবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য একটি এ্যাকশন প্ল্যান তৈরীতে মনোনিবেশ করা৷’ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জুলাই-আগস্ট, ১৯৮০, একটি খসড়া এ্যাকশন প্ল্যান রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়৷ রিপোর্টটি, ‘ডিসেম্বর, ১৯৮৯ লন্ডনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে৷ এই সম্মেলনে অনেক দেশ ও সংস্থা এ্যাকশন প্ল্যানের প্রতি তাদের সমর্থন জ্ঞাপন করে’৷ এভাবে ফ্লাড এ্যাকশন প্ল্যান (FAP) নামে একই পুরাতন কার্যক্রমের নতুন এবং ব্যাপক পর্যায়ে যাত্রা শুরু হয়৷
বিশ্বব্যাংক ইঙ্গিত দেয় যে, Embankments must be seen as elements of a comprehensive water control system planned and designed to modify the water regime in the interests of more profitable land use in an environmentally sound manner Nit is the above considerations that have led to the ‘compartment’ approach proposed in UNDP-GOB Flood Policy Study and other studies for the development of areas protected by continuous sections of river embankments.’৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বিশ্বব্যাংক বন্যা সমস্যা সমাধানের জন্য সব সময় অত্যন্ত ব্যয়বহুল কাঠামোগত সমাধান সুপারিশ করে থাকে৷ এটা সম্ভবত এই কারণেই করা হয় যে, এতে দেশী বিদেশী সুবিধাভোগীরা ভালো লাভের মুখ দেখে৷ বিশ্ব ব্যাংক পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং তার পূর্বসূরীদের দ্বারা সফল ভাবে নির্মিত ৫ হাজার পানি-নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং ৬ হাজার কিলোমিটার বাঁধের জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করে৷ পরবর্তীতে অবশ্য দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার কারণে ফ্লাড এ্যাকশন প্ল্যান পরিত্যাগ করা হয়৷ এর পরিবর্তে যা গ্রহণ করা হয় সেটি প্রকৃতপক্ষে এরই পরিবর্তিত রূপ৷
ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশে অবাধে পানি প্রবেশ করে, তা কিছু সময় অবস্থান করে এবং অবশেষে নিষ্কাশিত হয়ে সাগরে চলে যায়৷ সেই দেশকে বদ্ধ জলাশয়ের দেশে পরিণতকরণের মত বহু চেষ্টা এ যাবত নেয়া হয়েছে এবং এই পানি খাতকে সবসময় বিদেশী বিনিয়োগের একটি লোভনীয় ক্ষেত্র হিসাবে দেখা হয়েছে৷ ভূগর্ভস্থ আর্সেনিক সমস্যা সাড়ে তিন কোটি মানুষকে আজ এক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে৷ এটা পুরোনো সংস্থাগুলোকে মিলিয়ন ডলারের নতুন প্রকল্প গ্রহণের সুযোগ এনে দিয়েছে৷ বিশ্ব ব্যাংকের কাছাকাছি একটি কনসালট্যান্ট ফার্ম তাদের ১৯৯২ সালে প্রণীত রিপোর্টে পানি সম্পদ খাতে পুনরায় বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেছে৷ সুপারিশে বলা হয়, “Privatization program has implication for further water development as follows : (a) Growth in demand for non-agricultural water supplies and for these irrigated crops which have high income elasticity of demand, and (b) Reduced public sector involvement in activation which can be undertaken efficiently by the private sector (e.g. under water supply and sanitation), and stricter scrutiny of proposed public investments than in the past.”
চিংড়ী চাষ : বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন
বিশ্ব ব্যাংক এবং এ ধরনের অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় রপ্তানীমুখী চিংড়ী শিল্পের উন্নয়ন করা হয়েছে৷ বিশ্বসংস্থা এখানে ঋণ দিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ‘বাংলাদেশকে সাহায্য’ করার জন্য৷ ১৯৮৬ সালে বিশ্ব ব্যাংক মত্স্য এবং চিংড়ী চাষ বিষয়ে কিছু প্রকল্প অনুমোদন করে৷ প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করতে গিয়ে ১৯৯৪ সালে বিশ্ব ব্যাংক দাবী করে যে, ‘লক্ষ্য অর্জনে প্রকল্পগুলো বহুলাংশে সফল হয়েছে৷’ ব্যাংক আরো জানায় প্রকল্পগুলোর কারণে পরিবেশের ওপর কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে নি৷ ব্যাংক যুক্তি দেয়, “Privatization program has implication for further water development as follows : (a) Growth in demand for non-agricultural water supplies and for these irrigated crops which have high income elasticity of demand, and (b) Reduced public sector involvement in activation which can be undertaken efficiently by the private sector (e.g. under water supply and sanitation), and stricter scrutiny of proposed public investments than in the past.”
ব্যাংক যাই বলুক, বহু স্টাডি থেকে এর বিপরীত চিত্র পাওয়া যায়৷ অবশ্য ব্যাংক পরে পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়টা ঘুরিয়ে স্বীকার করে৷ ১৯৯০ সালে মত্স্যা প্রকল্পের মূল্যায়ন বলা হয় যে, ‘চিংড়ী চাষের সম্প্রসারণ উপকূলীয় এলাকায় ভূমি ও পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন বিষয়ের জন্ম দিয়েছে৷’ রিপোর্টে এ জন্য ‘অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষ’কে দায়ী করা হয়৷ এতে বলা হয়, “Unplanned shrimp-farming development has led to degradation of agricultural land and negatively affected the livelihood of local people.” স্ট্রাকচারাল এ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম রিভিউ ইনিসিয়েটিভ চিংড়ী চাষ বিষয়ে অনেক স্টাডি পর্যালোচনা করে যার সংক্ষিপ্ত সার সারণী ৩ এ দেয়া হলো৷
সারণী ৩ : বাংলাদেশে চিংড়ী চাষ : সংক্ষেপে পরিবেশগত দিক
কাজ : বহিরাগত কর্তৃক জমি ভূমির লিজ গ্রহণ না করে আশু লাভের জন্য ভূমির টেকসই ব্যবহার বিষয়ে চিন্তা
উন্নয়ন ফলাফল : বন নিধন
পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া : ম্যানগ্রোভ ব্যবস্থা ধ্বংস (জীব বৈচিত্র)
কাজ : সরকারী (খাস) জমি সনাতন ধানের পরিবর্তে চিংড়ী চাষের জন্য লিজ
উন্নয়ন ফলাফল : বিকল্প জীবিকার উপায় ধ্বংস, ভূমিহীনদের বঞ্চনা বৃদ্ধি
পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া : বাঁধের ভেতরে দীর্ঘ সময় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি – জমির গুণগত মানের অবনতি, পরিবেশ বিরোধী ব্যবস্থা গড়ে ওঠা
কাজ : চিংড়ী চাষ
উন্নয়ন ফলাফল : ধান চাষে ক্ষতি, দারিদ্র্য বৃদ্ধি
পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া : লবণ পানির অবস্থান সোডিয়াম ক্লোরাইড সঞ্চয় এবং
চিংড়ী চাষে বিস্তৃত পদ্ধতি অবলম্বনের ফলে দীর্ঘ সময় ব্যাপক এলাকা পানি নিমগ্ন থাকা, গৃহস্থালী শাকশব্জি ফলমূল চাষ ধ্বংস, অবাধ পোনা সংগ্রহ এবং মাত্রাতিরিক্ত মত্স্য আহরণ, জীববৈচিত্র ধ্বংস, মাছের জীবনধারণ চক্রের অবসান, অধিকমাত্রায় মত্স্যক আহরণ
অর্থনৈতিক এজেন্ডা এবং সংস্কার
১৯৯৬ সালে বিশ্বব্যাংক নব-নির্বাচিত সরকারের কাছে একটি ‘agenda for action’ উপস্থাপন করে যাতে সরকারী খাতগুলোকে বেসরকারীকরণের ওপর জোর দেয়া হয়৷ এর উদ্দেশ্য ছিল এগুলোর ওপর বিশ্ব সংস্থাগুলোর, বিশেষত বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএমএফ-এর প্রভাব বিস্তার নিশ্চিত করা৷ এজেন্ডায় বেসরকারী মালিকানাধীন ‘রুগ্ন’ শিল্পগুলো পুনর্বাসনের যে কোন সরকারী প্রচেষ্টার বিরোধিতা করা হয়৷ ব্যাংক অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধিরও সুপারিশ করে৷ ব্যাংকের এজেন্ডার মধ্যে ছিল:
১. যথা শীঘ্রই সম্ভব আইএমএফ-এর সঙ্গে পরামর্শ করে একটি তিন বত্সির মেয়াদী নীতি-কাঠামো প্রণয়ন;
২. কর সুবিধা দিয়ে রুগ্ন শিল্পগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার ধারণা পরিত্যাগ করা;
৩. আর্থিক খাত পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা; এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে বেসরকারীকরণ, ছয় মাসের মধ্যে দু’টি রাষ্ট্রীয় ব্যাংককে বেসরকারীকরণ এবং অবশিষ্ট দু’টিকে আগামী দুই বত্সারের মধ্যে বেসরকারীকরণ;
৪. সারের মূল্য বৃদ্ধি করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে আসা;
৫. কার্যক্ষম ধারায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে পুনর্গঠনকরণ এবং স্বাধীন ও কর্পোরেট ভিত্তিক উত্পাদন, ট্রান্সমিশন ও বিতরণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা; এটা Independent Power Producer (IPP)নামে বহুজাতিক বিদ্যুৎ উত্পাশদন কোম্পানীগুলিকে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়৷ কিছু IPP পরে এই খাতে বিনিয়োগ করে৷ এখানে বলে রাখা ভালো যে, IPP সমূহের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে PDB ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, ফলে রাষ্ট্রীয় খাতের বিপুল ক্ষতি হয়;
৬. নিজস্ব মালিকানায় নির্মাণ-পরিচালনার ভিত্তিতে বেসরকারী উদ্যোগে বিদ্যুৎ উত্পাাদন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য পরিবেশ তৈরী;
৭. বাংলাদেশ টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ বোর্ডকে বিরাষ্ট্রীয়করণ;
৮. রেলওয়ের জনশক্তি হ্রাস এবং টিকিটের দাম বৃদ্ধি; এবং
৯. প্রাকৃতিক গ্যাস খাতের মিশ্র মালিকানা এবং পরবর্তীতে বিরাষ্ট্রীয়করণের জন্য নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরী৷
১৯৯৭ সালে বিশ্বব্যাংক বেসরকারীকরণ বোর্ডকে আরো ক্ষমতা প্রদানের সুপারিশ করে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ উত্পাংদনের ধারণার বিরোধিতা করে৷ বিশ্বব্যাংক কারখানাগুলোকে বেসরকারীকরণের প্রস্তাব দেয়৷ খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ‘গ্যাস কোম্পানীগুলোতে পেট্রোবাংলা এবং সরকারী নিয়ন্ত্রণ হ্রাস এবং ওগুলো ক্রমবর্ধমান হারে বেসরকারী মালিকানায় দেয়া’ সংক্রান্ত তাদের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে৷ ২০০১ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে৷ ক্ষমতাসীন হওয়ার পূর্বে নতুন সরকার কর্তৃক বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত ম্যারি এ্যান পিটার্স প্রকাশ্যে পাঁচ দফা এজেন্ডা পেশ করেন৷ এই এজেন্ডা এবং বিশ্বব্যাংকের এজেন্ডা ছিল একই সুরের৷
পাট খাত সংস্কার প্রকল্প
প্রকৃতপক্ষে বেসরকারীকরণ ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধ করে দেয়া সবসময়ই বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সহায়তা প্রাপ্ত সকল প্রকল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে পরিগণিত৷ পাটখাতের সংস্কার এধরনের একটি প্রকল্প৷ পাটখাত সংস্কার বিশ্বব্যাংকের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প৷ এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হিসাবে বলা হয়েছিল বাংলাদেশকে ‘শিল্পায়নে’ সহায়তা করা৷ ১৯৯৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান IDA ‘Jute Sector Adjustment Credit’ (JSAC)নামে ২৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ঋণ অনুমোদন করে৷ বিশ্ব ব্যাংক স্পষ্টভাবে বলে যে, “It was anticipated that at the completion of the JSAC most of the jute sector would be in the private hands.”৷ ব্যাংকের মতে ঋণের অন্যতম সুবিধা হবে সকল সরকারী মিল কারখানার বেসরকারীকরণ কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ যা বাংলাদেশের ব্যাপক বেসরকারী উন্নয়নের অঙ্গিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷ এই কার্যক্রমের মধ্যে ছিল,
১. ২৯ টি মিলের মধ্যে ৯টি বন্ধ করে দেয়া এবং দু’টি বৃহদাকার মিল ক্ষুদ্রায়তন করা;
২. ব্যয় সঙ্কোচনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় খাতের ২০০০ কর্মী ছাঁটাই;
৩. রাষ্ট্রীয় খাতের অবশিষ্ট ২০টি মিলের মধ্যে ১৮টি বিরাষ্ট্রীয়করণ৷
মার্চ ১৯৯৫ ছিল শর্তসাপেক্ষে ঋণের দ্বিতীয় অংশ ছাড়ের প্রকল্পিত সময়সীমা৷ শর্তগুলোর মধ্যে ছিল
১. IDA এর সন্তুষ্টি অনুযায়ী পাটখাতের মজুরী নীতি পর্যালোচনা;
২. চারটি বন্ধ জুট মিলের যন্ত্রপাতির বিক্রির ব্যবস্থা করা;
৩. পাঁচটি নির্দ্দিষ্ট মিল বন্ধ করে দেয়া এবং একটি মিলের উত্পায়দন ক্ষমতা কমিয়ে ২,৭০০ তাঁতে নিয়ে আসা; রাষ্ট্রীয় মিলসমূহের স্থায়ী কর্মচারীদের সংখ্যা আরো ৮,০০০ কমানো;
৫. কমপক্ষে নয়টি মিল বেসরকারীকরণ বা অন্যকোন উপায়ে তাতে সরকারী অংশ ৭ হাজারে নামিয়ে আনা; এবং
৬. বাংলাদেশ পাট সংস্থা গুটিয়ে আনা৷
ঋণের দ্বিতীয় অংশ ছাড় করতে বিলম্ব হয়, কারণ সরকার শর্ত অনুযায়ী ১৪টি মিল বেসরকারীকরণ করতে বা বন্ধ করে দিতে ব্যর্থ হয়৷ পরবর্তী সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে নয়টি রাষ্ট্রীয় জুট মিল বিরাষ্ট্রীয়করণ করে এবং আরো পাঁচটি মিল বিরাষ্ট্রীকরণের ইঙ্গিত দেয়৷ এক পর্যায়ে এসে ২০০২ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী পাটকল৷ এতে বিশ্বব্যাংক উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে৷
পাটের বেসরকারী খাতের কি হলো? ঋণপ্রাপ্তি, বিশ্ব ব্যাংকের চাপ এবং পরবর্তী সরকারী পদক্ষেপের ফলে এই খাতের কি উন্নতি হয়েছে? এ সকল বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনেও নেতিবাচক উত্তর পাওয়া যায়৷ বিশ্ব ব্যাংকের ইন্সপেকশন প্যানেলের রিপোর্ট অনুযায়ী পাট খাতের বেসরকারীকরণ দ্বারা যাদের লাভবান হওয়ার কথা এ-ধরনের একদল ব্যক্তি আগস্ট, ১৯৯৯ একটি আবেদনপত্র পেশ করেন৷ আবেদন পত্রটি নভেম্বর, ১৯৯৯ পুনরায় পেশ করা হয়৷ আবেদনকারীরা দাবী করেন যে, সংস্কার কার্যক্রমের ‘নক্সা প্রণয়নে কিছু ত্রুটি’ থাকায় তারা উপকৃত হওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ তারা স্পষ্টভাবে জানান যে, সংস্কার ঋণ লাভের পর তাদের অবস্থা ঋণ প্রাপ্তির পূর্বের চেয়ে খারাপ হয়েছে৷ তারা আরো অভিযোগ করেন যে, ‘বেসরকারী খাতের উত্পা্দন ক্ষমতা হ্রাসের জন্য JSAC দায়ী৷ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ সালের বেসরকারী ৫,৯৫৫ চালু তাঁত সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ১৯৯২-৯৩ অর্থ বত্স রে ৩,৯৬৯টিতে এসে দাঁড়ায়৷’ তারা ১১টি বেসরকারী মিলের উত্পাাদন হ্রাস বা অস্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার জন্যও JSAC কে দায়ী করেন৷ এছাড়াও আবেদনকারীরা এই খাতে ভবিষ্যতে আরো ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যেমন,
১. স্থায়ীভাবে বেসরকারী মিল বন্ধ হয়ে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হওয়া, আয় হ্রাস পাওয়া এবং চাকুরিচ্যুতি ঘটা;
২. হাজার হাজার কর্মী র চাকুরী হারানো;
৩. বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক কল্যাণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া’৷
বিশ্বব্যাংক যথারীতি তার সিদ্ধান্তে অটল থেকে এবং উদ্ভূত সমস্যার জন্য ‘সংস্কার বাস্তবায়ন না করা,’ ‘সরকারী খাতে মজুরী বৃদ্ধি করা’ এবং ‘রাষ্ট্রীয় খাতে ভর্তুকি’কে দায়ী করতে থাকে৷
স্বাস্থ্যসেবা
স্বাস্থ্যসেবা খাতে ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাত স্ট্র্যাটেজি’ (HPSS)নামে একটি বিস্তৃত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে৷ বিশ্বব্যাংক যথারীতি দাবী করছে যে, স্ট্র্যাটেজিটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত এবং সরকার এজন্য ঋণ চাইছে৷ প্রকৃতপক্ষে এটি বিশ্বব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রণীত একটি স্বাস্থ্য কার্যক্রম৷ বিশ্বব্যাংক স্বাস্থ্য খাতের কিছু কার্যক্রমে সমর্থন ও সহায়তা দেয় এবং কিছু কার্যক্রমের বিরোধিতা করে৷ এর উদ্দেশ্য স্বাস্থ্য খাতকে কঠোরভাবে HPSS অনুসারী করে রাখা৷ যেহেতু এটি একটি প্যাকেজ প্রোগ্রাম এবং এর উদ্দেশ্যও একই, তাই একে স্বাস্থ্য খাতের SAP বলা যেতে পারে৷
বিশ্বব্যাংক ১৯৯৮-২০০৩ সালের জন্য স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা স্ট্র্যাটেজি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ‘উল্লেখযোগ্য অবদান, এবং স্বাস্থ্যনীতি (NHP) প্রণয়ন প্রচেষ্টার জন্য সরকারকে অভিনন্দিত করে, অতঃপর আনুষ্ঠানিকভাবে HPSS গ্রহণের জন্য বলে৷ ব্যাংক সরকারকে ‘৯৮ অর্থ বত্সিরের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং TYFIP 96-98 ৯৬-৯৮ পুনঃপরীক্ষা করে HPSS এ নির্ধারণকৃত অগ্রাধিকার এবং সরকারের ভূমিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকল্প পুনর্বিন্যাস, বাস্তবায়ন পর্যায় বিন্যাস অথবা প্রশ্নসাপেক্ষ ও অগ্রাধিকার নির্ধারণ পূর্বক কিছু বাদ দিতে’ বলে৷ ব্যাংক সরকারকে ‘১৯৮২ সালের ঔষধনীতি আধুনিকায়ন ও সংস্কার’ করতে পরামর্শ দেয়৷ এডিপিতে বিভিন্ন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তকরণ বা বাদ দেয়ার সঙ্গে অনেক কারণ এবং গ্রুপের স্বার্থ-জড়িত থাকে৷ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত জন্য প্রভাব বিস্তার করে৷ বিশ্ব ব্যাংক যথার্থই লেখে, ‘এডিপি’তে একবার কোন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত হলে এর পরবর্তী অনুমোদন নিছক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র৷’ প্রচুর অসমাপ্ত প্রকল্প পূর্ববর্তী বছর থেকে পরবর্তী বছরে স্থানান্তরিত করতে হয়৷ উদাহরণ হিসাবে ব্যাংক দেখায় যে, ১৯৯৭ অর্থ-বত্সতরের প্রথম আট মাসে, উল্লেখিত অর্থ বত্সউরের মাত্র ৪০ শতাংশ প্রকল্প অনুমোদিত হয় এবং তখনো অনুমোদিত হয় নি এ ধরনের প্রকল্পের ৬০ শতাংশ অর্থ ইতিমধ্যে খরচ হয়ে গিয়েছে_এমনও দেখা যায়৷ সকল সংস্থার মধ্যে নেতৃস্থানীয় বলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্প অনুমোদনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে৷ তবে সব সময় সব সিদ্ধান্তই সরকার অনুমোদন বা গ্রহণ করে না৷
আমরা ১৯৯৭ সালের সরকারী ব্যয় দলিল থেকে ব্যাংকের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে পারি৷ অনেক সময় শক্তিশালী স্থানীয় গ্রুপের বিরোধিতার মুখে বিশ্বব্যাংকের কোন কোন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হয় না৷ তবে সাধারণত দেশীয় এলিটদের স্বার্থ এবং বিশ্ব ব্যাংকের স্বার্থের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা যায় না৷ অবশ্য তাদের উভয়ের স্বার্থ মানে যে জনগণের স্বার্থ নয়, তা বলাই বাহুল্য৷ ১৯৯৭ সালে সরকারী ব্যয়ের ওপর বিশ্ব ব্যাংকের মন্তব্য থেকে তার অগ্রাধিকার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়৷ বিশ্বব্যাংক মিরপুরে ২০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপনের বিরোধিতা করে৷ যুক্তি হিসাবে ব্যাংক দেখায় যে, টার্শিয়ারী স্তরের স্বাস্থ্যসুবিধাগুলো দরিদ্র শ্রেণীকে যথেষ্ট সেবা দিচ্ছে৷ এছাড়া ঢাকায় এনজিও ও বেসরকারী ক্লিনিকগুলো তো রয়েছেই৷ ব্যাংক IPGMR কে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার সিদ্ধান্তেরও বিরোধিতা করে৷ ব্যাংক মনে করে যে, এই সিদ্ধান্ত HPSS -এর স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়৷ তবে সরকার যখন VIP ও উচ্চবিত্তদের জন্য ২০০ কেবিন নির্মাণ করে তখন বিশ্বব্যাংক এ-বিষয়ে কোন বিরোধিতা করে নি, কারণ প্রকল্প বাস্তবায়নকালে তথাকথিত VIP দের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়৷ ব্যাংক আরো বলে যে, ব্যবস্থাপনায় স্টেকহোল্ডারদের যথাযথ প্রতিনিধিত্বসহ সরকারী হাসপাতালগুলোকে বেসরকারী সংস্থা এবং এনজিওদের সহায়তায় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা উচিত৷ ব্যাংক নতুন জায়গায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট স্থাপনের বিরোধিতা করে৷ ব্যাংক ২৫টি থানা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ এবং খুলনার ২৫০ শয্যা হাসপাতালকে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীতকরণেরও বিরোধিতা করে৷ কারণ হিসাবে ব্যাংক HPSS এর বরাত দিয়ে বলে যে, তৃণমূল পর্যায়ে Essential Services Package (ESP) অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে যখন সম্পদ স্বল্পতার সম্মুখীন হয়েছে এমন অবস্থায় হাসপাতাল সম্প্রসারণ অত্যাবশ্যকীয় নয়৷
এভাবে বিশ্বব্যাংক জনস্বাস্থ্য সেবায় রাষ্ট্রীয় খাতে ভূমিকা হ্রাস এবং বেসরকারী খাত ও স্বাস্থ্য খাতের বাজারীকরণে HPSS প্যাকেজ কার্যক্রমকে সমর্থন দিয়ে যায়৷
কাঠামো বিন্যাস : পূর্ব এবং পরবর্তী অবস্থা
কাঠামো বিন্যাস কার্যক্রম (SAP) একটি প্যাকেজ কার্যক্রম যা সাধারণত ‘সংস্কার কার্যক্রম’ হিসাবে পরিচিত৷ বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ তাদের ঋণ গ্রহীতা দেশগুলোকে এধরনের কার্যক্রম সুপারিশ করে থাকে এবং এর বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করে৷ সমন্বিত উপায়ে নিজেদের কর্মসূচী উপস্থাপনের জন্য এটিকে একটি সুবিধাজনক পদ্ধতি হিসাবে দেখা হয়৷ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টাডি থেকে এর বিপর্যয় এবং তার বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাংক পুরো কার্যক্রমটি পর্যালোচনা করতে সম্মত হতে বাধ্য হয়৷ ব্যাংক সমালোচকদের এই বলে আশ্বস্ত করে যে, বিভিন্ন দেশের কার্যক্রমের প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনার জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে৷ বিশ্বব্যাপী এই পর্যালোচনা কার্যক্রম Structural Adjustment Programme Review Initiative (SAPRI) নামে পরিচিত৷ এতে বাংলাদেশের জন্যও একটি অংশ ছিল, যাতে বাংলাদেশের SAP অভিজ্ঞতা এবং এর ফলাফলগুলো পর্যালোচনা করা হয়৷ নীচে SAPRI, 2001এর বাংলাদেশ অংশের প্রধান প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো৷
১. শিল্পখাতের SAP পূর্ব পরবর্তী অবদান পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে জিডিপিতে এই খাতে অবদান বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ০.৯ শতাংশ (পৃ. ৩১)৷ ১৯৯২-৯৩ সালে শিল্প খাতে অনুপাত ছিল যেখানে ৯.১ শতাংশ ১৯৯৮-৯৯ সালে জিডিপি তে শিল্প খাতের অংশ ছিল ১০.৫ শতাংশ, ১৯৯৮-৯৯ সালে তা বৃদ্ধি পায় ১১.২ শতাংশে (পৃ ৩৯)৷
২. SAP পূর্বকালীন সময়ের তুলনায় ৯০ এর দশকে টার্মস অব ট্রেড-এ অবনতি ঘটতে দেখা যায়৷
৩. অর্থনৈতিক উন্মুক্তকরণ সূচক (আমদানী-রপ্তানীর যোগফল ও জিডিপি’র অনুপাত) ১৯৯১ অর্থবত্স রে ১৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯৯ অর্থ বত্সযরে ৩৫ শতাংশ হয়৷ … নিষিদ্ধপণ্যের সংখ্যা ১৯৯০ এর অর্থ বত্সশরের তুলনায় বর্তমানে অনেক কম৷ শুল্কের সর্বোচ্চ হার ৯৪ শতাংশ থেকে ২০০০ অর্থ বত্স্রে ৩৭.৫ শতাংশে হ্রাস করা হয়…৷ নব্বইয়ের দশকে সরাসরি রপ্তানি উত্সাাহ বৃদ্ধি করা হয়৷ একশভাগ রপ্তানীমুখী শিল্পের জন্য কাঁচামাল এবং যন্ত্রপাতি আমদানী শুল্কমুক্ত করা হয়৷ রপ্তানীকারকদের ২৫ ভাগ ক্যাশ ক্ষতিপূরণ, আয়কর রিবেট, ট্যাক্স হলিডে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সিলিং বৃদ্ধি করা হয় (পৃ ৩৮)৷
৪. শিল্পখাতে মোট কর্ম সংস্থান ১৯৮৯ অর্থবত্সষরের তুলনায় ১৯৯৬ অর্থ বত্সবরে ৭-৮ মিলিয়ন থেকে ৫.২ মিলিয়নে (৩৩%) হ্রাস পায়৷ এর মধ্যে উত্পায়দন খাতে হ্রাস হয় ব্যাপকভাবে, ১৯৮৯ অর্থ-বত্স২রে ৭ মিলিয়ন থেকে ১৯৯৬ অর্থ বত্সযরে ৪.১ মিলিয়ন (পৃ ৪৭)৷
৫. কৃষি খাতে ব্যাংক ঋণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়৷ ১৯৮৭-৯৮ সালে ২৪.৯৪ শতাংশ থেকে ১২.২৩ শতাংশে নেমে আসে৷ একই সময় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ব্যাংক ঋণের অংশ ৩.৩২ শতাংশ থেকে ১.৫৩ শতাংশে নেমে আসে৷ বৃহৎ এবং মাঝারী শিল্পে ঋণের অংশ সামান্য বৃদ্ধি পায়৷ নির্মাণ খাতে বড় রকমের বৃদ্ধি ঘটে ৩.২২ শতাংশ থেকে ৫.৩৬ শতাংশ (পৃ ৫৭)৷
৬. ১৯৪৭ সালে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ঋণগ্রহীতা মোট ঋণের ৭২.৩৬ শতাংশ গ্রহণ করেছিল, যা ১৯৯৮ সালে বেড়ে ৭৫.৬৩ শতাংশে দাঁড়ায়৷ অন্যদিকে সর্বনিম্ন ৯৫ শতাংশ ঋণ গ্রহীতা যারা একই সময়ে মোট ঋণের ১৭.৯২ শতাংশ নিয়েছিল তাদের ঋণের পরিমাণ হ্রাস পায় ১২.৮০ শতাংশে (পৃ ৬২)৷
৭. ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহে মোট ঋণ তহবিলের ৩০ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছিল৷ ১৯৯৯ সালে ৩৮.৩ শতাংশ ঋণকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় যার মধ্যে ৮০ ভাগ ঋণকে মন্দ ঋণ বলে উল্লেখ করা হয় (পৃ ৭০)৷
৮. ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ এই সাত বত্সংরের মধ্যে ৫ বত্সশর ৭৪ শতাংশ কাপড়ের কল ক্ষতির সম্মুখীন হয়৷ রাষ্ট্রীয় খাতে BTMC এর ৬২ শতাংশ মিল ক্ষতির সম্মুখীন হয় (টেক্সটাইল মিলের উপর BIDS এর স্টাডি)৷ ১৯৮২-৮৩ সালে ৩৫টি জুট মিল ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করা হয়৷ বর্তমানে এসব মিলের সবগুলোই অলাভজনক এবং ঋণ সমস্যায় জর্জরিত (পৃ ৭৪)৷
৯. ১৯৮৩-৮৪ সালে ভূমিহীন গৃহস্থের সংখ্যা (০.৪৯ একর পর্যন্ত জমি আছে যাদের) ছিল ৪৬.৩০ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে এই সংখ্যা ৫৬ শতাংশে বৃদ্ধি পায় (পৃ ৮৭)৷
১০. ছয়টি সেক্টর কর্পোরেশনে সর্বমোট ৮৯,৯৭১ শ্রমিক চাকুরীচু্যত হন৷ এই চাকুরিচ্যুতির অধিকাংশ ঘটে ১৯৯১-৯৯ সালের মধ্যে৷ আরো ৮৮,৬১২ জন বেসরকারীকরণের ফলে আগামী দুই থেকে তিন বত্স৯রের মধ্যে চাকুরী হারাবে৷ এই চাকুরীচু্যতদের মধ্যে ৪২ শতাংশ দক্ষ, ২১.৫ শতাংশ আধা-দক্ষ এবং ২৮ শতাংশ অদক্ষ (পৃ ১০৯)৷
উল্লেখ্য, এই পর্যালোচনা ফলাফল প্রকাশের পর বিশ্বব্যাংক এ নিয়ে আর অগ্রসর হয় নি৷
প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ
১৯৯৪ সাল থেকে জ্বালানী এবং বিদ্যুৎ খাতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ শুরু হয়৷ বাংলাদেশের জ্বালানী খাতের উপর বিশ্ব ব্যাংকের প্রথম বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে৷ এটা ছিল জ্বালানী খাতের পর্যালোচনা কার্যক্রমের অধীনে UNIDO / World Bank এর একটি যৌথ রিপোর্ট৷ সংস্থাগুলোর অন্যান্য রিপোর্টের মত এটাও গোপন রাখা হয়৷ বলা হয় যে, ‘এই দলিলের বিতরণ সীমাবদ্ধ থাকবে৷ এর বিষয়বস্তু সরকার, অথবা বিশ্ব ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া প্রকাশ করা যাবে না’ (প্রথম পৃষ্ঠা)৷
১৯৮১ সালে সম্পাদিত Energy Assessment Mission এর অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রণীত হয় এই রিপোর্ট৷ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইন্দোনেশিয়া, মৌরিতানিয়া, কেনিয়া, শ্রীলংকা, জিম্বাবুয়ে, হাইতি, পাপুয়া নিউগিনি, বুরুন্ডি, রোয়ান্ডা ও মালাওয়ি এর জন্যও একই ধরনের রিপোর্ট প্রণয়ন করা হয়৷
রিপোর্টে বাংলাদেশে গ্যাসের পরিমাণ সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, যদিও এ ব্যাপারে কোন বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ ছিল না৷ রিপোর্টে ১০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট (TCF) গ্যাস রিজার্ভকে বলা হয় ‘অর্থনৈতিকভাবে উত্তোলনযোগ্য প্রচুর গ্যাস রিজার্ভ’ এবং তাদের হিসাব মতে ‘বর্তমান হারে ব্যবহার চললে এই গ্যাস আরো কয়েক দশক ব্যবহার করা যাবে৷’ রিপোর্টে ‘এই প্রধান সম্পদের দ্রুত ও কার্যকর ব্যবহারের’ তাগিদ দেয়া হয়৷ রিপোর্টে বলা হয় গ্যাস বাংলাদেশের বর্তমান ব্যয় পরিশোধ এবং জ্বালানী খাত উন্নয়নে অতীব গুরুত্বপূর্ণ৷ রিপোর্টে বাংলাদেশ কিভাবে এই সম্পদ থেকে সুবিধা পেতে পারে তার সুপারিশ করা হয়৷ এতে বলা হয়, “গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার জন্য বিদেশী তেল কোম্পানীগুলোকে এ কাজে অংশগ্রহণ করানোর জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিতে হবে৷” রিপোর্টে আরো বলা হয়, “বাংলাদেশের অনুমানকৃত দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের পরও প্রচুর গ্যাস উদ্বৃত্ত থাকবে৷” রিপোর্টে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেয়া হয়৷ যেমন,
ক. পাইপ লাইনে ভারতে গ্যাস রপ্তানী;
খ. তরলীকরণ করে গ্যাস রপ্তানী; এবং
গ. গ্যাসকে ফিডস্টক হিসাবে ব্যবহার করে (যেমন মিথানল উত্পােদনকারী) এ ধরনের গ্যাস ভিত্তিক রপ্তানীমুখী শিল্পকে আকর্ষণ করা৷
তাই গ্যাস রপ্তানীর ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়৷ বিশ্ব ব্যাংক ও তার সহযোগীরা দুই দশক পূর্বে গ্যাস বিক্রয়ের বিভিন্ন পন্থা সুপারিশ করেছিল৷ পরবর্তীতে আমরা দেখতে পাই বিশ্ব ব্যাংক ও তার সহযোগীরা বিকল্প সুপারিশ একটিতে নামিয়ে এনেছে এবং তা হলো ব্যাংকের দৃষ্টিতে ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যতের’ জন্য পাইপ লাইনের মাধ্যমে ভারতে গ্যাস রপ্তানী৷ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (ADB)বক্তব্যেও একই মতামত প্রতিফলিত হয়৷ বিশ্ব ব্যাংক যে বছর জ্বালানী খাতের উপর স্টাডি করে একই বছর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক জ্বালানী খাতের উপর বড় ধরনের একটি স্টাডি করে এবং বিদ্যুৎ মাস্টার প্ল্যান আধুনিকায়ন করে৷
‘সবচেয়ে কার্যকর গ্যাস ব্যবহার’ সম্পর্কে ADB’র রিপোর্ট ছিল অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট৷ রিপোর্টে বলা হয়, “A potentially important possibility is that India might be the logical (most remunerative) customer for any gas which Bangladesh decides to export as such. A pipeline to the Calcutta area could prove to be the most efficient way to get gas to their major market. The possibility of gas sales was studied by a British consultant which found that it could be feasible.” একই রিপোর্টে ADBবিশ্বসংস্থাসমূহের জ্বালানী খাতের প্রকল্পের প্রতি দুর্বলতার কথা জানায়৷ যদিও ৯০-এর দশকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের ট্রানজিটি দেয়া একটি রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত হয়, ১৯৮২ সালেই ADB বাংলাদেশকে ট্রানজিটের সুপারিশ করে ছিল৷
বিদ্যুৎ
একই দৃশ্য দেখা যায় বিদ্যুৎ উত্পািদন বিষয়ক প্রস্তাবনার ক্ষেত্রেও৷ বিদ্যুৎ খাতের অবস্থা বোঝার জন্য এটা জানা খুবই জরুরী কিভাবে বাংলাদেশ সরকার, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (REB) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (PBS) পরস্পরের সঙ্গে মিলে কাজ করেছে, REB এবং PBS কিভাবে বিশ্ব ব্যাংক এবং আইডিএ-এর এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে আছে৷ REB এবং PBS উভয়ের জন্ম হয় বিশ্ব সংস্থার অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পের মাধ্যমে৷ এ বিষয়ে আই.ডিএ’র সঙ্গে চুক্তি এবং সরকারী সম্মতি পর্যালোচনা করা যেতে পারে:
১. বাংলাদেশ সরকার প্রাপ্ত ঋণ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে (REB) প্রদান করবে, এবং বোর্ড এই তহবিল সমিতিকে হস্তান্তর করবে আইডিএ’র কাছে সন্তুষ্টিজনক শর্তসাপেক্ষে এবং প্রকল্পের স্থানীয় অংশ বাংলাদেশ সরকার অনুদান হিসাবে বোর্ডকে প্রদান করবে…;
২. ভবিষ্যতে বোর্ড আর্থিক ঘাটতির সম্মুখীন হলে বাংলাদেশ সরকার তা পূরণ করবে;
৩. বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ আরইবি’কে সরবরাহ করবে এর মূল্য আরইবি তার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রাপ্ত মূল্য দ্বারা পরিশোধে ব্যর্থ হলে সরকার তাতে ভর্তুকি দেবে এবং এ সকল বিষয়ে লেনদেন আইডিএ’র ফর্মুলা অনুযায়ী হবে;
৪. ১৯৮২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকার একটি সন্তুষ্টিজনক ফর্মুলা তৈরী করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ট্যারিফ হিসাব করবে এবং আরইবি’র সঙ্গে তা বিন্যাস করবে, এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেবে৷’ অতঃপর বিদ্যুৎ সঞ্চালন নেটওয়ার্কের কাজ শুরু হয়, বিশ্বব্যাংকের সকল শর্ত মেনে নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং এর ফলশ্রুতিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে আইডিএ’র সন্তুষ্টি অনুযায়ী অতিরিক্ত সকল ব্যয় বহন করতে হয়৷
ফলোআপ প্রকল্প হিসাবে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসে একটি বিদ্যুৎ উত্পা দন নীতি অনুমোদন করে৷ নীতিটি প্রকৃতপক্ষে বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশ ও পরামর্শের বাস্তবায়ন ছিল৷ এই নীতির মূল প্রতিপাদ্য ছিল যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (IPP)নামে বিদেশি কোম্পানীর মাধ্যমে নতুন উত্পাদদন ক্ষমতা তৈরী করা৷ এবং এই উত্পাসদন কাঠামো তৈরী করা হবে ‘তৈরী, পরিচালনা এবং মালিকানা লাভ’ এর ভিত্তিতে (BOO)৷ নবগঠিত পাওয়ার সেলের বিদেশি কোম্পানী নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এই সংক্রান্ত দরপত্র আহ্বান ও দর চূড়ান্ত-করণের কাজ করে৷ অবশেষে বিশ্বব্যাংক তার ‘প্রত্যাশা’ পরিষ্কার করে এবং জানায় যে ভবিষ্যতে এই সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো পাওয়ার সেল প্রক্রিয়াকরণ করবে৷
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণীয় করার জন্য বিশ্বব্যাংক বেশ কিছু সুপারিশ প্রদান করে৷ এর মধ্যে ছিল :
১. পিডিবি’র উত্পা দন সম্পদকে বাণিজ্যিকীকরণ এবং মুনাফা সেন্টার স্থাপন;
২. বিতরণ ইউনিটগুলিকে কর্পোরেশনে রূপান্তর ও বাণিজ্যিকীকরণ;
৩. বেসরকারী খাতের অংশ গ্রহণের জন্য সুযোগ তৈরীর উদ্দেশ্যে নির্বাচিত মুনাফা সেন্টারের পুনর্বাসন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কন্ট্রাক্ট প্রদান;
৪. পিডিবি’র প্রস্তাবিত চারটি (বড় পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উত্পা দন, শাহবাজপুর, বাঘাবাড়ী, সিলেট গ্যাস টার্বাইন) রাষ্ট্রীয় খাতের বিদ্যুৎ উত্পাতদন প্রকল্প স্থগিত করে IPP বা বিদেশি কোম্পানীর মাধ্যমে সম্পাদন করা৷
এভাবে তারা আরেকটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অবলুপ্তি ঘটিয়ে বিদ্যুৎ খাতকে বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর জন্য পথ পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নেয়৷
প্রক্রিয়াগুলো যথা নিয়মেই ঘটে যাচ্ছিল৷ বহুজাতিক কোম্পানীকে কন্ট্রাক্ট প্রদানের পর গ্যাসের মত বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিদ্যুতের দামও ২০০ শতাংশ বেড়ে যায়৷ একইভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও বিতরণে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় সংস্থা পেট্রোবাংলাকে দায়িত্ব দেয়া হয় বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে উচ্চমূল্যে বৈদেশিক মুদ্রায় গ্যাস কেনার৷ পিডিবি-কেও একই ধরনের দায়িত্ব দেয়া হয়৷ ফলে পিডিবি পেট্রোবাংলার মতই ক্ষতির সম্মুখীন হয়৷ এই ধারা ১৯৯৮ সালেই দৃশ্যমান হয়৷ তখন থেকে বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বহুজাতিক কোম্পানীগুলির পাওনা পরিশোধের জন্য সরকারকে চাপ দিতে থাকে এভাবে : “About $ 420 million IPP payments will be due shortly for the 120 MW plants being contracted out at present.” মাগুরছড়া অগ্নিকান্ডের জন্য UNOCAL এর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য সংস্থা সবসময়ই নীরব ছিল৷ অগ্নিকান্ডের পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ৬৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবী বিশ্ব সংস্থাগুলোর কাছে গুরুত্ব অর্জন করতে পারে নাই৷ বিশেষজ্ঞদের মতে পরিবেশগত ক্ষতি ধরলে এই পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে৷ ২০০৫ সালে টেংরাটিলায় নাইকো-র ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে৷
নব্বই এর দশকের মধ্য ভাগ থেকে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়৷ গ্যাস, টেলিযোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ খাতে বহুজাতিক কোম্পানীর আগমন ঘটে এবং নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ১৯৯৬ সাল থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ FDI আসে (১৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) গ্যাস খাতে এরপর বিদ্যুৎ খাতে (১১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় বিনিয়োগ ছিল তুলনামূলকভাবে কম (৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)৷ যদিও টেলিযোগাযোগ খাতের বিনিয়োগের অংক কম (১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), পরবর্তী বত্সারগুলোতে এই খাতে পুঁজির আগমন বৃদ্ধি ঘটে৷
দীর্ঘসময় ধরে পথ পরিষ্কারের কাজ করার পর ১৯৯৯ সাল থেকে বিশ্বব্যাংক তার কথা পরিবর্তন করে৷ ১৯৯৯ সালে বিশ্বব্যাংক বলে যে বৈদেশিক বিনিয়োগের ধরন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে খুব সামান্যই অবদান রাখতে পেরেছে৷ কারণ হিসাবে ব্যাংক জানায় যে বিদ্যুৎ খাতের বিশাল বিনিয়োগের জন্য প্রচুর আমদানী (যেমন, তৈরী করা বার্জমাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র) করতে হয় এবং গ্যাস খাতে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক কোম্পানীগুলোর মূলধন ব্যয় এবং টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগের জন্য টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি আমদানীতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়৷ ব্যাংক তাই পরিষ্কার ভাষায় জানায় যে, “The import-intensity of FDI inflows and subsequent project repatriation and interest payments imply a worsening current account deficit associated with FDI ” ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ১৯৯৮-৯৯ সালে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৯১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এর মধ্যে ৭৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয় প্রকল্প সংক্রান্ত আমদানীতে৷ ব্যাংক আরো অভিক্ষেপ করে যে ১৯৯৯-২০০০ সালে FDI সংক্রান্ত ব্যয় FDI কে ছাড়িয়ে যাবে৷ বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত স্বীকৃতির কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে তাদের পূর্বে (১৯৮২) দেয়া এই সুপারিশ পড়তে হবে : ‘There is no discernible accumulation of foreign exchange reserve in the absence of gas exports’ (ibid)৷ ১৯৮২ সালে গ্যাস রপ্তানীর যে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয় ১৯৯৯ সালে তা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে এসে দাঁড়ায়৷ তাই আমরা যদি জ্বালানী খাতে বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের চিত্র আঁকতে যাই তবে সেটা হবে এরকম :
পদক্ষেপ ১ : জ্বালানী বিষয়ক স্টাডি সম্পাদনা৷ বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্রীয় খাতকে সংকোচন ও পুনর্গঠনের জন্য নীতি ব্যবস্থাপত্র প্রদান৷
পদক্ষেপ ২ : যুক্তি দেখানো হয় যে বেসরকারী বৈদেশিক বিনিয়োগ হলে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়বে, জ্বালানী খাতের অভাবনীয় উন্নতি হবে, যা অন্যান্য খাতের উন্নয়ন ঘটাবে৷
পদক্ষেপ ৩ : গ্যাস এবং বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়৷
পদক্ষেপ ৪ : বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর কার্যক্রম শুরু৷ চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ তার নিজের গ্যাস দ্বিগুণ মূল্যে বৈদেশিক মুদ্রায় ক্রয় করতে থাকে৷ দেশীয় অনুসন্ধান সংস্থাকে অলসভাবে বসিয়ে রাখা হয়৷ বাজেট ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ বৃদ্ধি পায়৷ একই ঘটনা ঘটে বিদ্যুৎ খাতেও৷
পদক্ষেপ ৫ : পুনরায় সঙ্কট এড়ানোর জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং গ্যাস রপ্তানীর সুপারিশ৷
এ সমস্ত পদক্ষেপের পরিণতি হয় দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জন্য ধ্বংসাত্মক, কারণ :
জনগণের প্রতিরোধের মুখে গ্যাস রফতানি সম্ভব না হলেও চুক্তি এখনও বলবৎ রয়েছে৷ এর সঙ্গে নতুন নতুন কয়লা গ্যাস চুক্তি হতে হচ্ছে৷ এসব চুক্তির কারণে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে; প্রতিটি স্তরে উত্পাকদন মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া বাংলাদেশী পণ্যের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে; মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ক্রয় করতে হচ্ছে যেটা সহজেই দেশি মুদ্রায় করা যেতো; স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও উত্পাযদন দক্ষতা ধ্বংস; পেট্রোবাংলা এবং পিডিবি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন; ক্ষতি থেকে উত্তরণের জন্য বেসরকারীকরণ সমাধান আরোপ; গ্যাসের মত একটি গণসম্পদের বহুজাতিক কোম্পানির মালিকানায় হস্তান্তর৷
রাষ্ট্র তবে ঠিক কী করছে
উপরের বিশ্লেষণ দেখা যাচ্ছে যে,
১. বিশ্ব সংস্থাগুলো প্রকৃত পক্ষে বৃহৎ ব্যবসায়িক সংস্থা বিশেষত বহুজাতিক কোম্পানীর পক্ষে নয়া ক্লাসিকাল শাস্ত্রীয় বিধিমত কাজ করছে যাকে ‘অর্থনৈতিক মৌলবাদ’ হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে৷
২. এ সমস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা কোন দায়বদ্ধতা ছাড়া বাংলাদেশের মতো দেশে অবারিত ক্ষমতা ভোগ করে থাকে৷
৩. এ সমস্ত সংস্থা জি-৭ ভুক্ত দেশ এবং বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর ভ্যানগার্ড বা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রান্তিক অর্থনীতির দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক একচেটিয়া পুঁজির প্রয়োজন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত করে৷
৪. স্থানীয় শাসক শ্রেণী এদের প্রধান স্থানীয় শরীক হিসাবে কাজ করে থাকে৷ বিশ্ব সংস্থাগুলো তাদের চক্ষু, মস্তিষ্ক, কান হিসেবে কাজ করে৷
গত তিন দশকেরও বেশি সময়কালে বাংলাদেশ প্রচুর সংখ্যক ‘উন্নয়ন’ প্রকল্প পেয়েছে৷ এবং এই উন্নয়ন করতে গিয়ে প্রচুর ঋণ সঞ্চিত হয়েছে৷ এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রচুর কনসালটিং ফার্ম, থিংক ট্যাংক এবং এনজিও’র উদ্ভব ঘটেছে৷ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর বিশেষজ্ঞের জন্ম হয়৷ অনেক প্রকল্প আমলা, কনসালট্যান্টদের বিদেশ সফরের সুযোগ করে দিয়েছে৷ দিয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তৈরির সুযোগ৷ এখন আমাদের দেশে প্রচুর বিশেষজ্ঞ, কনসালট্যান্ট ও গবেষক আছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে৷ এরা আন্তর্জাতিক কমু্যনিটির অংশ হিসাবে প্রকল্প এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আশীর্বাদের জন্য সর্বদা বুভুক্ষু হয়ে থাকে৷
তথাকথিত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী দেশী বিদেশী কনসালট্যান্ট, আমলা, এনজিও মালিক এবং গবেষকদের যথেষ্ট বৈভব এনে দিয়েছে৷ কৃষি এবং পানি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, আমলা, কনসালট্যান্ট এবং কৃষি ব্যবসায় নিয়োজিত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রচুর ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে৷ জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাতে প্রকল্পগুলোতে ধ্বংসাত্মক বিনিয়োগ ঘটেছে হয়েছে এবং এর ফলে বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর পকেটে দ্রুত ব্যাপক মুনাফা যাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম এ দেশে ক্লোন বুদ্ধিজীবী এবং বিশেষজ্ঞ তৈরী করে একটি সমর্থক শ্রেণী নির্মাণে সমর্থ হয়েছে৷ কিছু মানুষের বিত্তশালী হওয়া এবং ব্যাপক সংখ্যক মানুষের দারিদ্র্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশে এ দুটোই পাশাপাশি চলছে৷
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর মত বিশ্ব সংস্থাগুলো বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, পরিবেশ, পেশা, পানি প্রবাহ, এবং এমনকি তথাকথিত সিভিল সোসাইটির মন মানসিকতা থেকে শুরু করে অর্থনীতি এবং সমাজের প্রায় সব কিছুর ওপরই একচেটিয়া পুঁজির আছর নিয়ে এসেছে৷ এটা ঘটছে এদেশকে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অঙ্গীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে৷ বাংলাদেশ সরকারের শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, পরিবেশ, দারিদ্র্য, নারী ইত্যাদি বিষয়ে নীতিগুলো প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বহুপূর্বে দেয়া নীতিগুলোরই রাষ্ট্রীয় উপস্থাপন৷ এগুলো এমন কিছু সংস্থা এদেশের মানুষের কাছে যাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই৷
তাই বাংলাদেশের মৌলিক নীতিমালা এখন দেশের ভেতর বা নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নির্ধারিত হয় না৷ এটা নির্ধারণ করে আমলাতান্ত্রিক চরিত্রধারী বিশ্ব সংস্থাগুলো যাদের কর্তৃত্ব আছে, কিন্তু এর জন্য কোন দায়দায়িত্ব নেই৷ বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী এই প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ এরা নীতি নির্ধারণী ক্ষমতা বিশ্ব সংস্থাগুলোর কাছে সঁপে দিয়েছে, বিনিময়ে তারা পাচ্ছে নিরাপত্তা এবং বিত্ত৷ রাষ্ট্র দায়িত্ব নিয়েছে এই ব্যবস্থা রক্ষায় তার যাবতীয় বল প্রয়োগ ও অনুগত গোষ্ঠী তৈরীর জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করার৷ আর এ সবের মধ্যে দিয়েই বাংলাদেশে তৈরী হয়েছে প্রান্তস্থ পুঁজিবাদের একটি নির্দিষ্ট ধরন৷

(প্রবন্ধটি ২০০৮ সালে প্রকাশিত ”কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ” শীর্ষক গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে)