বাংলাদেশে পাটশিল্প ও পাটশ্রমিকদের বিপর্যয় কেন

না খেতে পাওয়ার বিরুদ্ধে না খেয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে একজন দক্ষ পাটকল শ্রমিক বহু মাসের মজুরি না পেয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করলেন। সবার সম্মুখে মরলেন বলে আমরা জানতে পারলাম। কিন্তু মাসের পর মাস মজুরি না পেয়ে অনাহারে অসুস্থতায় মানসিক চাপে কতজন মৃত, অর্ধমৃত সে হিসাব আমাদের কাছে নেই। পাটকল এবং তার শ্রমিকদের আজকের অবস্থা হঠাৎ করে আসেনি, গত ২৫ বছর ধরে যে পরিকল্পিত নীতিমালার কারণে পাটকলে লোকসান বেড়েছে, যন্ত্রপাতি নবায়ন হয়নি, উৎপাদন বৈচিত্র্য আসেনি, পরিবেশবান্ধব এই শিল্পের বিকাশের জন্য কোনো পরিকল্পনাও হয়নি তারই পরিণতি শিল্প শ্রমিকের বিপর্যয়। বিভিন্ন সময়ে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা থেকে বোঝাই যায় এমন একটি পরিস্থিতি তৈরিই তাদের লক্ষ থাকে যাতে শ্রমিককর্মচারীরা মজুরি না পেয়ে, কাজের নিরাপত্তা হারিয়ে  এলাকা ত্যাগ করে। তারপর একটা সুবিধাজনক সময়ে চিরতরে বন্ধ ঘোষণা করা হয় এগুলো। অনেক কারখানাই বন্ধ হয়েছে, বাকিগুলোও সেই পথে। এসব কারখানার জমির দিকে এখন ভিআইপি দুর্বৃত্তদের নজর। একই নীতিকাঠামোর শিকার চিনিকলগুলোও। এসব প্রতিষ্ঠানের জমি দখলকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নীতিমালা তৈরি, তা বাস্তবায়নের কমিটিও গঠিত হয়েছে কয়েক বছর আগে।

বাংলাদেশে পাটশিল্পের প্রধান কেন্দ্রগুলোর একটি খুলনা। খালিশপুর দৌলতপুরের পাটকলগুলো এই পুরো অঞ্চলে পাটচাষ কারখানা, এবং সেইহেতু কর্মসংস্থানের অন্যতম ক্ষেত্র ছিল। খুলনাসহ পাশর্^বর্তী কয়েকটি অঞ্চলে পাটকলে  শ্রমিকের সংখ্যা একসময় ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পুরো অঞ্চলে এখন অবশিষ্ট আছেন ২০ হাজারেরও কম শ্রমিক। তাও কাজের নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। প্রায়ই তাদের মজুরি বকেয়া থাকে। বারবার একই ঘটনা ঘটান শ্রমিকরাÑ আন্দোলন করে নিজেদের রক্ষা করতে চেষ্টা করেন। এসব কারখানা আগে একাধিকবার লেঅফ করা হয়েছে। ২০০৭ সালে মিল চালু রাখার দাবিতে আন্দোলন করার অপরাধে নামঠিকানাবিহীন হাজার হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। শ্রমিক মিলের কলোনিগুলোর প্রতিটিতে দাঙ্গা পুলিশ প্রবেশ করেছে, হার্ট ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শ্রমিক আর সেই সঙ্গে শিশু, কিশোরী, তরুণী, নারীদের রাইফেলের বাঁট, লাঠি দিয়ে নির্মম নিষ্ঠুর অমানবিক নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছে।

১৯৫০ দশকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমর্থনে পাটশিল্প প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (ইপিআইডিসি) এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আদমজী বাওয়ানিসহ বিভিন্ন বৃহৎ ব্যবসায়িক গ্রুপ অল্প ইক্যুয়িটি দিয়ে ক্রমে এসব শিল্পের মালিকানা লাভ করে। এরপরও এসব মিল কারখানা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা ভর্তুকি পাওয়ার কারণেই অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকে বিকশিত হয়। ৬০ দশকে বাংলাদেশের পাট ছিল বৈষম্য নিপীড়নবিরোধী রাজনীতির কেন্দ্রীয় বিষয়। পুরো পাকিস্তানের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস ছিল পাট কিন্তু এই বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশ ব্যয় হতো তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে। স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম স্বপ্ন ছিল এই পাটকে ঘিরেই। ভাবনা ছিল এই পাট বাংলাদেশের মানুষেরই কাজে লাগবে এবং তা বাংলাদেশকে যথাযথ উন্নতির পথে নিয়ে যাবে। কিন্তু তা যে হয়নি তা আজকের কোথাও নিশ্চিহ্ন কোথাও বিধ্বস্ত পাটকলগুলোর এলাকা আর ততোধিক বিধ্বস্ত মানুষদের দেখলে বুঝতে কারও সময় লাগে না।

যখন পাটশিল্প আরও বিকশিত হওয়ার কথা : বাংলাদেশে স্বাধীনতা লাভের পর ২৬ মার্চ ১৯৭২ এক অধ্যাদেশ বলে পরিত্যক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। পাটকলগুলোর সামগ্রিক তত্ত্বাবধানের জন্য গঠন করা হয় বাংলাদেশ পাটকল সংস্থা (বিজেএমসি) পাটকলসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রায়ত্তকরণ খুব সুচিন্তিত সুপরিকল্পিত ছিল না। ব্যবস্থাপনা ছিল দুর্বল। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমে নতুন ধনিক শ্রেণি গড়ে ওঠার একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে এরপর পাটশিল্প সম্পর্কে সরকারি উত্তরোত্তর অবহেলা, বিকাশের কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করা, সরকারি দলের প্রভাব বলয় সৃষ্টির কাজে পাটশ্রমিকদের ব্যবহার, মিলগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নের নামে সরকারি মাস্তান বাহিনী তৈরির মধ্যে। বিজেএমসির অধীনে ৭৭টি জুট মিল ছিল। ১৯৮২৮৩ থেকে বিরাষ্ট্রীয়করণ শুরু হয়, প্রথম দফায় ৩৫টি জুট মিল তাদের আগের মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রাপথের ক্রমনিম্নমুখী রেখায় ২০০২ সালে বন্ধ হয় বিশে^ বৃহত্তম পাটকল আদমজী পাটকল। ২০০৭ সাল নাগাদ প্রায় সবগুলো বড় পাটকল বন্ধ হয়ে যায়। সবই হয় লোকসানের যুক্তি দেখিয়ে। এরপর কয়েকটি পুনরায় চালু হয় চুক্তিভিত্তিক। সেগুলোরও এখন জীর্ণদশা। বেসরকারি খাতের পাটকলগুলোও সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি।

পাটকলে লোকসানের কারণ : স্বাধীনতার পর থেকে পাটকলে যে লোকসান বাড়তেই থাকে তার পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখযোগ্য: () পাকিস্তান আমলে পাটশিল্পের জন্য যেসব সুবিধা ভর্তুকি ছিল সেগুলো অব্যাহত না রাখা। () যথাসময়ে পাট ক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ না দেওয়ায় বিলম্বে দুই বা তিনগুণ বেশি দামে পাট ক্রয়। () মেশিনপত্র কোনোরকম নবায়ন না করা। উৎপাদিত পণ্যে বৈচিত্র্য না আনা। () বিদ্যুতের সংকট সমাধানে এমনকি বিকল্প জেনারেটর ব্যবহারেও উদ্যোগ না নেওয়া। ()  দেশের মধ্যে পাটজাত দ্রব্য ব্যবহার বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ না নেওয়া। () আন্তর্জাতিকভাবে পাটজাত দ্রব্যের নতুন চাহিদা তৈরি না করা। বিদ্যমান চাহিদার বাজার ধরবার উদ্যোগ না নেওয়া। () ব্যাংকঋণ এবং চক্রবৃদ্ধি সুদের চাপ বৃদ্ধি। () সরকারি দলের কাজে শ্রমিকদের কর্মসময় ব্যবহার করা। () সরকারি দলের প্রভাববৃদ্ধির জন্য শ্রমিক নেতার নামে সন্ত্রাসীদের লালন পালন। (১০) মন্ত্রণালয় থেকে বিজেএমসি মিল ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত দুর্নীতিবাজদের আধিপত্য। স্বাধীনতার পর থেকে এরমধ্যে আমরা অনেক রকম সরকার দেখেছি, তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে তুমুল বিরোধ থাকলেও যেসব বিষয়ে তাদের ভূমিকা অভিন্ন ছিল তার মধ্যে এসব নীতিমালা অন্যতম। সেই কারণে ক্রমবর্ধমান লোকসানের এই কারণগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে লোকসানের অপরাধে পুরো শিল্প খাতের ওপর নতুনভাবে আক্রমণ শুরু হয়।

জনবৈরী উন্নয়ন দর্শনের শিকার : ৯০ দশকের শুরুতে যখন দুর্নীতি, লুণ্ঠন আর সরকারের বৈরী নীতির কারণে পাটশিল্পের জীর্ণদশা তখন বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে প্রবেশ করে, যথারীতি, ত্রাতা হিসেবে। পাট খাতে সংস্কার কর্মসূচির কথা বলে প্রথমে দুটো সমীক্ষা চালানো হয়। ১৯৯২ সালের ফেব্রুয়ারি সেপ্টেম্বরে পরিচালিত এই সমীক্ষা দুটির একটি হলো ইইসির অর্থ সংস্থানেদ্য জুট ম্যানুফ্যাকচারিং স্টাডিএবং আরেকটি হলো বিশ্বব্যাংকের আইডিএ অর্থসংস্থানে সমীক্ষাবাংলাদেশরিস্ট্রাকচারিং অপশনস ফর দ্য জুট ম্যানুফেকচারিং ইন্ডাস্ট্রি  বলা দরকার যে, এরকম সমীক্ষা করে নিজেদের পছন্দসই পথ পদ্ধতিকে বৈধতা দেওয়া যে কোনো খাতে এই গোষ্ঠীর রাহুগ্রাসের চেনাজানা পথ। তাই এসব সমীক্ষার ধারাবাহিকতাতেই ১৯৯৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিজুট সেক্টর অ্যাডজাস্টমেন্ট ক্রেডিটএর আওতায় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়। এতে ঋণ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ২৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সময়কালেই প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড গঠিত হয়। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় পাট খাতের ওপর সংগঠিত আক্রমণ। ট্রেড ইউনিয়নগুলো কব্জা করবারও নানা পথ নেওয়া হয়। নেতাদের বিদেশ সফর ছিল এর অন্যতম। ঋণ করে যেসব কাজ করবার চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকার আবদ্ধ হয় সেগুলোর মধ্যে পাটশিল্প নবায়ন, বৈচিত্র্যকরণ বা সম্প্রসারণের কোনো কর্মসূচিই ছিল না। যা ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : রাষ্ট্রায়ত্ত মিল বন্ধ সংকোচন, শ্রমিক ছাঁটাই, বেসরকারিকরণ এবং মজুরি বাড়ানো বন্ধ রাখা এবং মজুরির অনুপাত কমানো। বিশ্বব্যাংকের সেই সংস্কার কর্মসূচিতে আশাবাদ প্রচার করা হয়েছিল যে, সংস্কার শেষ হতে হতেই পুরো খাত ব্যক্তিমালিকানাধীনে চলে যাবে। বলা হয়েছিল, এসবের মধ্য দিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং এই খাতের উন্নয়ন ঘটবে। পরিষ্কার দেখা গেলÑ অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, উৎপাদনশীলতা কমেছে, কর্মসংস্থান শতকরা ৮০ ভাগ কমে গেছে আর সবমিলিয়ে শিল্প প্রসারের বদলে গুরুতর সংকোচন ঘটেছে।

পাটশিল্পের ভিন্নচিত্র : কিন্তু পাটশিল্পের এই দৃশ্যপট সর্বত্র একইরকম নয়। ভারতে আমরা একই সময়ে দেখছি সর্বাত্মক উদ্যোগের মাধ্যমে পাটশিল্পের নতুন যাত্রা। ভারতে দুর্বল পাটকলগুলোকে চাঙ্গা করবার জন্য দ্য জুট কোম্পানিজ (ন্যাশনালাইজেশন) অ্যাক্ট, ১৯৮০ প্রবর্তন করা হয়। শুধু পাটশিল্প নয়, শিল্প রক্ষা বিকাশের জন্য এখানে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।  বাংলাদেশে আদমজী পাটকল বন্ধের সময়েই ভারতীয় পাটশিল্প আধুনিকীকরণের নতুন যাত্রা শুরু হয, নতুনভাবে কর্মসূচি নেওয়া হয় পাটকলগুলো মেশিনপত্র নবায়নের,রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি প্রদানের। ২০০৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের বস্ত্র মন্ত্রণালয় খাদ্যশস্য চিনির বস্তা হিসেবে যথাক্রমে শতকরা ১০০ ৯০ ভাগ পাটব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৭ সালে পাটজাত বস্তা ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত পুরোপুরি পাল্টে এভাবেই নতুন জীবন লাভ করে পাটশিল্প। ২০০৫ এর ভারতের পাটনীতি পাট গবেষণা উন্নয়ন, প্রযুক্তি, অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন নির্দিষ্ট করে। লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় রপ্তানি ক্রমান্বয় বৃদ্ধি, থোক বরাদ্দ, রপ্তানি থেকে শুল্ক অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূর করা। উৎপাদন বৈচিত্র্যকরণের বিষয়েও দৃষ্টি দেওয়া হয়। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে বিকশিত করাটাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য।

তুলনামূলক সুবিধা সম্ভাবনা : অথচ পাট পাটশিল্পে বাংলাদেশের  তুলনামূলক সুবিধার ক্ষেত্র বহুবিধ। আবার এর গুরুত্ব এই দেশের অর্থনীতির একটি শক্ত মাজা দাঁড় করানোর জন্য অপরিহার্য। পাটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে এক বিশাল শিল্প বিপ্লব করবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পাট পাটশিল্প এখন সংকটজীর্ণ অবস্থায়। তুলনামূলক সুবিধার দিকগুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপে বলা যায়: () উৎকৃষ্ট মানের পাট উৎপাদনের উপযোগী মাটি প্রাকৃতিক পরিবেশ; () কয়েক দশকে গড়ে ওঠা অভিজ্ঞ দক্ষ শ্রমশক্তি; () আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি। অভ্যন্তরীণ বাজারেও এর বিস্তারের অসীম সম্ভাবনা; () পরিবেশ অনুকূল হওয়ায় পাটশিল্প বিকাশের সামাজিক পরিবেশগত ব্যয় প্রায় শূন্য; () পাট রপ্তানিতে বিদেশি মুদ্রা আয় শতভাগ, যেখানে গার্মেন্টসে তা ৫০৬০ ভাগ; চিংড়ি মাছে যা পরিবেশ সামাজিক উচ্চ ক্ষতির কারণ; () পাট একসঙ্গে কৃষি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকায় দুই খাতের বিকাশই এর ওপর নির্ভরশীল; () পাট পাটজাত দ্রব্য দুইক্ষেত্রেই বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ; এবং () পাট বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত।

যেখানে পাট পাটশিল্প বিকাশে বাংলাদেশের এসব অনেক অনুকূল উপাদান আছে, যেখানে পরিবেশ অনুকূল বলে পাটজাত দ্রব্যের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে শিল্পের বিকাশের কোনো সমন্বিত উদ্যোগ না নিয়ে ক্রমাগত কারখানা বন্ধ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কাজে বিভিন্ন সরকারের একনিষ্ঠ তৎপরতার এই পুরো অবিশ্বাস্য চিত্রটি বুঝতে গেলে আমাদের প্রতিষ্ঠিত উন্নয়ন দর্শন এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন কৌশলে বাংলাদেশের অবস্থানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাটশিল্প বিনাশমুখী সরকারের এই সক্রিয়তা তৈরি হয়েছে প্রথমত এই দেশের বিভিন্ন সময়ের শাসক গোষ্ঠীর লুটেরা ভূমিকা এবং দ্বিতীয়ত তার ওপর ভর করে বিশ্বব্যাংক আইএমএফএর প্রথমে কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচি পরে পাটশিল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকের নির্দিষ্ট ধ্বংসাত্মকউন্নয়নকর্মসূচি থেকে। উন্নয়নের নামে বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠী বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে কীভাবে সর্বনাশা জাল বিস্তার করে এবং বৃহৎ রাজনৈতিক দল, কনসালট্যান্ট, আমলা, বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী সহযোগে তার নকশা বাস্তবায়ন করে তার নির্মম দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের পাটশিল্প। এর শিকার শুধু পাট শ্রমিকরা নন, শিকার পুরো বাংলাদেশ। এই চক্র থেকে বের হতে পারলে অবশ্যই পাটকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশে পরিবেশসম্মত শিল্পায়নের উজ্জ্বল অধ্যায় নির্মাণ করা সম্ভব।

(১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে দৈনিক দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত)