পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চলে জনগণের টাকায়, সরকারের নিজের টাকা বলে কিছু নেই

images 3সরকারের টাকা কার টাকা? জনগণের টাকা কার প্রাপ্য? জনগণের সম্পদ কার দখলে?
আজকে ফেসবুকে একজনের স্ট্যাটাসে দেখলাম সে লিখেছে ‘যারা অপরাধী তারা নিরাপদে বসবাস করছে, আর যারা নিরাপরাধ তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে’। এটা হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতির একেবারে সার কথা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন নিয়েও আজকে এই পরিস্থিতি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের যে বিষয় তা শুধুমাত্র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিষয় নয়। এটা সারা বাংলাদেশের মানুষের বিষয়, কারণ মূল বিষয়টা হল বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষা তা কে লাভ করতে পারবে? যার মেধা আছে সেকি লাভ করতে পারবে নাকি যার টাকা আছে সে লাভ করতে পারবে? গত এক দশকে সরকার যে নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে তার মূল কথা হচ্ছে, যতই মেধা থাকুক যতই আগ্রহ থাকুক, টাকা যদি না থাকে তাহলে শিক্ষা লাভ করা যাবে না। কিন্তু সারা পৃথিবীতে পুজিবাদী ধারার অন্তর্ভুক্ত হয়েও বহু দেশ আছে- ইউরোপ, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকার বহু দেশ আছে যেখানে শিক্ষা এবং চিকিৎসার মূল দায়িত্ব রাষ্ট্র বহন করে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, আমলারা মাঝেমাঝেই নানাদেশে যান, আগ্রহ থাকলে এসব তথ্য তাদের অজানা থাকার কথা নয়। ঐসব রাষ্ট্র কেন এই ব্যয়ভার বহন করে? বহন করে কারণ এর জন্য যে অর্থ ব্যয় হয় সেই অর্থ আসে জনগনের কাছ থেকে, তাদের টাকা তাদের জন্য ব্যয় করাই যুক্তিযুক্ত। জনগণের টাকা দিয়ে জনগণের জন্য হাসপাতাল-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী করা এটা একটা ন্যূনতম মৌলিক অধিকারের বিষয়। জাতিসংঘ যখন বলে, বাংলাদেশের সংবিধান যখন বলে ‘সকলের জন্য শিক্ষা, সকলের জন্য চিকিৎসা’ তখন শিক্ষা এবং চিকিৎসায় জনগনের অধিকারের কথাই বোঝায়। কিন্তু একের পর এক সরকারের নীতি তার বিপরীত দিকে যাত্রা করছে।
লক্ষ্য করলে দেখা যায় ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় যা তৈরী হয়েছে তা হচ্ছে শপিং মল। বসুন্ধরা সিটি আছে, যমুনা ফিউচার পার্ক তৈরী হচ্ছে- যেখানে বিদেশ থেকে আমদানী করা জিনিস আসছে, বিদেশ থেকে ভোগ্য পণ্য আমদানী করতে, বিদেশি কোম্পানির সাথে চুক্তির কারণে বাংলাদেশে ডলারের মজুদ উজাড় হচ্ছে। আর ডলারের মজুদ শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে আমাদের অর্থমন্ত্রী গালভরা হাসি নিয়ে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ আনার জন্য গেছেন ওয়াশিংটন। শর্ত মাথায় ঢুকিয়ে গুলিয়ে নিচ্ছেন সব করণীয়। শিক্ষা, চিকিৎসা, পানি, সবকিছু ব্যক্তি মালিকানায় আরো বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে, বিদেশি কোম্পানির হাতে গ্যাস ব্লক তুলে দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে, তেলের দাম বাড়াতে হবে অর্থ্যাৎ জনগণের সবকিছু মুনাফাখোরদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।
এভাবে গত বিশ বছরে বিভিন্ন ঋণ নিয়ে, উন্নয়নের নামে বিভিন্ন চুক্তি করার মধ্য দিয়ে যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে তারই ফলাফল হচ্ছে আজকের বাংলাদেশ। ঢাকা শহরে আমাদের ৫০-৬০ টা শপিং মল দরকার নেই, আমাদের দরকার ঢাকা মেডিকেল কিংবা পিজি হাসপাতালের মত আরো ৫০ টা হাসপাতাল, আমাদের দরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। শপিং মলের বড় বড় ভবনের পরিবর্তে আমাদের দরকার থিয়েটার কেন্দ্র যেখানে গান হবে, নাটক হবে, গ্যালারী হবে। দরকার খোলা মাঠ। জনগণ শিক্ষা লাভ করবে, আনন্দ লাভ করবে, চিকিৎসা লাভ করবে। এসবকিছুর জন্য যা টাকা লাগে তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা বাংলাদেশ সরকারের কাছে আছে।
সরকারের টাকা মানে জনগণের টাকা, সরকারের নিজস্ব টাকা বলে কিছু নেই, জনগণ ট্যাক্স হিসেবে টাকা দেয়, ভ্যাট হিসেবে টাকা দেয়, প্রত্যেকটা জায়গায় জনগণ কর হিসেবে যে টাকা দিচ্ছে তা সরকারের কাছে জমা হচ্ছে। মন্ত্রীরা অনেক সময় এমনভাবে কথা বলেন যেন মনে হয় তারা তাদের পকেট থেকে টাকা দিচ্ছেন। পুলিশ-ডিবি-র‌্যাব ভুলে যাচ্ছে যে তারা জনগণের টাকায় চলে। মন্ত্রীদের সমস্ত শান-শওকত চলে জনগণের টাকায়। এসপি থেকে আইজি পর্যন্ত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী, জেনারেল, আমলা সকলের আরাম-আয়েশ-বিলাসিতা-বিদেশ সফর সমস্তকিছু পরিচালিত হয় জনগনের টাকায়। আজকে এর হিসাব নেবার সময় এসেছে, জবাবদিহি চাওয়ার সময় এসেছে, সবাইকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর সময় এসেছে।
আপনারা গাড়ি নিয়ে, বাড়ি নিয়ে, শান-শওকত নিয়ে চলাফেরা করছেন এই টাকা খরচ করার অধিকার আপনাদেরকে কে দিয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন টাকা দরকার তখন টাকা নাই, তেল-গ্যাস যখন জাতীয় সংস্থাকে দিয়ে উত্তোলনের কথা আসে তখন টাকা নাই, বাংলাদেশের পনেরো কোটি মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য যখন হাসপাতাল-ডাক্তার-ঔষধের প্রশ্ন আসে তখন টাকা নাই, রাস্তাঘাট যখন ঠিক করা দরকার তখন টাকা নাই, পাবলিক ট্রান্সপোর্টের জন্য নদীপথ-রেলপথ করার দরকার তখন টাকা নাই; কিন্তু নিজের দেশের গ্যাস বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দিয়ে তাদের কাছ থেকে ২৫-৩০ গুণ বেশি দামে গ্যাস কেনার টাকা ঠিকই থাকে, যখন এমপি-মন্ত্রীদের জন্য দামী দামী গাড়ি কিনতে হয় তখন টাকা ঠিকই থাকে, যখন বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় স্কুলের জন্য টাকা নাই, কিন্তু র‌্যাব কিংবা অন্যান্য বাহিনীর জন্য ঠিকই টাকা থাকে। এই টাকা জনগণের টাকা, জনগণের ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে সংগৃহীত টাকা। এর প্রতিটি পাইপয়সার হিসাব নেবার অধিকার জনগণের আছে।
গ্রামীণ ফোন থেকে শুরু করে বিভিন্ন বহুজাতিক ফোন কোম্পানী, শেভরন থেকে শুরু করে বিভিন্ন তেল কোম্পানী, তাদের মাধ্যমে প্রতি বছর প্রায় আট থেকে দশ হাজার কোটি টাকা ডলার হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের সর্বমোট ৩৫ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাজেট মাত্র এক হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ এই বিদেশি কোম্পানীগুলো মোবাইল নিয়ে, কিংবা আমাদের গ্যাস সম্পদ দখল করে প্রতিবছর প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে, যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট বাজেটের দশ গুণ বেশি টাকা। তাহলে কার টাকা কার পকেটে যাচ্ছে? তাহলে জনগণের টাকা কে পাবে? জনগণের টাকা কি জনগণ পাবে নাকি জনগণের টাকা লুন্ঠন করে বেশি-বিদেশি লুটেরারা বিরাট বিরাট মত্ত হস্তীতে পরিণত হয়ে জনগণের উপরেই এসে চড়াও হবে?
এই প্রশ্নটির আজকে আমাদের ফয়সালা করতে হবে। আজকে তথ্য, সত্য কথা, ছোটছোট লেখাতেও তাদের ভয়। একটা পত্রিকা বা একটা ব্লগে যখন যখন কোন লেখা ছাপা হয় সেটা কি সরকারের উপর সশস্ত্র কোন আক্রমণ? সেটা কি অস্ত্র, সেটা কি বন্দুক, সেটা কি স্টেনগান? এত কেন ভয় লেখা বা চিন্তার মুখোমুখি দাঁড়াতে? এত ভয় কারণ সমস্ত নীতিমালা, জনবিরোধী সমস্ত তৎপরতা চলছে সত্যকে গোপন করে। মানুষকে বোঝানো হচ্ছে মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পদক্ষেপগুলো নেয়া হচ্ছে জনস্বার্থে। মানুষের সম্পদ কেড়ে নেয়ার নীতিকে হাজির করা হচ্ছে ‘উন্নয়ন’ বলে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, তাদের নিরাপত্তা কেড়ে নেয়ার যাবতীয় ব্যবস্থাকে বোঝানো হচ্ছে ‘আইন-শৃংখলা এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা’ বলে। কাজেই এই মিথ্যাচার উন্মোচন করার জন্য যে কেউ যখন উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখন তাদের মধ্যে আতংক তৈরী হয়। আতংকিত-সন্ত্রস্ত্র মার্কিন দূতাবাস বিরাট দূর্গ বানিয়ে রেখেছে, তেমনি সমস্ত সন্ত্রাসী শক্তি আতংকে অস্থির।
আমরা বাংলাদেশে সরকারের পরিবর্তন দেখি, কিন্তু আসলে কি কোন পরিবর্তন হয়? আমি নিশ্চিত হয়েই বলতে চাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য কি কি নীতি গ্রহণ করা হয়েছে কিংবা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় ২০০৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইন যেটা করা হয়েছে সেটা কি? তারা জানেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন তিনি দিন বদল করবেন, কি কি দিন বদল করেছেন তিনি, কি কি নীতি-চুক্তি তিনি গ্রহণ করেছেন খালেদা জিয়ার কাছ থেকে তা কি তিনি জানেন? জানেন না। তিনি ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন। যদি দিন বদলের কথাই সত্য হয় তাহলে ২০০৫ সালে খালেদা জিয়ার সময়ে যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে সেই নীতিই ২০১১ সালে কেন বলবৎ আছে? কেন তা বাতিল করবার জন্য শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে হয়, কেন তাদের পুলিশ আার মাস্তানদের বুটের নিচে পিষ্ট হতে হয়? কেন তাদের গ্রেফতার হতে হয়? আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে তো অনেক বিরোধ, এইসব ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা যায় না কেন? তেল-গ্যাস লুন্ঠনের চুক্তি এক সরকার করলে আরেক সরকার কেন সেটা বাতিল করে না? শিক্ষা সংকোচন, চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রাইভেটাইজেশন-কমার্শিয়ালাইজেশনের কোন নীতি তো পরিবর্তন করতে দেখা যায় না? এর কারণ কী?
কারণ আমরা চোখে ঠিকই দেখি সরকার পরিবর্তন হয়, আসলে বাংলাদেশের সরকারের কোন পরিবর্তন হয় না। যারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যারা নীতি প্রণয়ন করে তাদের কোন পরিবর্তন হয় না। দখলদার কমিশনভোগীদের কোন পরিবর্তন হয় না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইনটি ২০০৫ সালে প্রণীত হয়েছে তার কাঠামোটা তৈরী হয়েছে ২০০০ সালে তিন খন্ডে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘এডুকেশন সেক্টর রিভিয়্যু’ তে। এরপর যখন যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের কাজ হয়েছে বিশ্বব্যাংকের তিন খন্ডে প্রকাশিত দলিলের বাস্তবায়ন করা। আমরা শিক্ষামন্ত্রী দেখি, আমলা দেখি, প্রধানমন্ত্রী দেখি- এগুলো সবই হচ্ছে মায়া। নীতির আসল ভিত্তিটা তৈরী হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের অফিসে, আইএমএফের অফিসে, এডিবির অফিসে, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে এবং বাংলাদেশের আমলা-কনসালট্যান্টদের দ্বারা, যাদের সাথে নির্বাচিত হওয়ার কোন সম্পর্ক নাই। এভাবেই সরকারের গতিমুখ নির্ধারিত হয়, আর যারা সরকারে থাকে তারা তাদের কাছ থেকে ক্ষমতার নিশ্চয়তা, কিছু কমিশন পেয়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করে মাত্র। কমিশনভোগী বাস্তবায়নকারী সংস্থা ছাড়া আমাদের দেশের গত কয়েক দশকের সরকারের অন্য কোন ভূমিকা নাই।
এই অবস্থা দেশকে যে ধারায় নিয়ে যাচ্ছে এই ধারার বিরুদ্ধে যখন মানুষ আন্দোলন করতে যায়, যখন পরিবর্তনের চিন্তাটা মানুষের মাথায় আসে, যখন মানুষ নতুন একটা গতিমুখ সন্ধান করে তখন আতংকিত-সন্তস্ত্র হয়ে যায় দেশের শাসক গোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক সমস্ত ক্ষমতাবানেরা। তখন তাদের স্বার্থেই জনগণের টাকায় চালিত গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ, র‌্যাব জনগণের উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই ঝাঁপিয়ে পড়বার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের উপর সংস্থাগুলোর একের পর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কি ভয়ংকর অবস্থা হয়েছে তা আমরা পত্রিকার পাতা খুললেই দেখতে পারি। গুপ্তঘাতক দলে যেনো ভরে গেছে দেশ। কিভাবে অপহরণ হচ্ছে, খুন হচ্ছে, উধাও হয়ে যাচ্ছে মানুষ! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কাদের কিংবা ঝালকাঠির লিমনের উপর যে ঘটনা তা এই পরিস্থিতির দুটো দৃষ্টান্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় কাদেরের কথা আমরা জানতে পারি, কিন্তু গহীন গ্রামের কোন ছাত্র কিংবা লঞ্চযাত্রী কিংবা রেলযাত্রী কিংবা একজন হকার কিংবা একজন পথচারীর ক্ষেত্রে যদি যদি ঘটে তা হলে আমরা জানতেও পারব না।
ক্রমাগত বড় থেকে ছোট পর্যায়ে একটা লুটেরা গোষ্ঠী এবং তাদের মাস্তান-সন্ত্রাসী, কেউ উর্দিপড়া কেউ উর্দিছাড়া, তাদের ভয়ংকর থাবার নিচে আটকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যেকারণে যদি কেউ এর বিরুদ্ধে কথা বলে তখন তাদের মধ্যে আতংক তৈরী হয় এবং পালটা আতংক তৈরী করে সেটাকে থামাতে চেষ্টা করে। তারা চায় আমরা আতংকিত হই, আমরা পিছিয়ে পড়ি, পরাজিতের বোধ নিয়ে আমরা রাস্তা ছেড়ে দেই। রাস্তা আমরা ছাড়তে পারিনা, এই দেশ আমরা ছেড়ে দিতে পারিনা, এই দেশের শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদেরকে দখলমুক্ত করতে হবে আমাদের দেশ, আমাদের রাস্তা, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আমাদের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, আমাদের দেশের সম্পদ এবং আমাদের দেশের ক্ষমতা। এই কাজে বাংলাদেশের তরুণেরা দিনে দিনে আরো আগুয়ান হচ্ছে, সক্রিয় হচ্ছে এটা্ই ভরসা।
ইন্টারনেট, ফেসবুক-ব্লগ যখন বহুমুখী অপরাধের জায়গায় পরিণত হয়েছে এখন সেই জায়গায় আলোর একটা রশ্মি আমরা দেখতে পাচ্ছি। সারা পৃথিবীব্যাপী তরুণরা এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সারা বিশ্বব্যাপী নতুন দুনিয়া তৈরীর চেষ্টা করছে। এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সারা পৃথিবীর মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে নতুন স্বপ্ন তৈরীর জন্য, নতুন ঠিকানা তৈরীর জন্য। এই সম্ভাবনায় ভীত-সন্ত্রস্ত্র যারা হচ্ছে তাদেরকে আরো ভীত-সন্ত্রস্ত্র করে সামগ্রিকভাবে সকলের সাথে যুক্ত হয়ে এই লড়াইকে আরো বেগবান করা ছাড়া আমাদের টিকে থাকার, আমাদের বেচে থাকার, আমাদের ভবিষ্যত রক্ষার আর কোন উপায় নাই। বাংলাদেশে এবং বিশ্বব্যাপী তরুণ প্রজন্মের চিন্তা ও সক্রিয়তাই নতুন আলোর সন্ধান দিচ্ছে। যখন একজন নতুন চিন্তা ধারণ করে, যখন একজন সমষ্টির স্বার্থের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে সক্ষম হয়, যখন একজনের চিত্ত নি:শঙ্ক হয়, তখন তাকে দমন করার ক্ষমতা কোন রাষ্ট্রশক্তির নাই।

[২ অক্টোবর ২০১১ শাহবাগে ‘জাতীয় স্বার্থে ব্লগার-অনলাইন একটিভিস্ট’ আয়োজিত সংহতি সমাবেশে পদত্ত বক্তব্য। অনুলিখন- আনহা এফ খান]