অধ্যাপক মুহাম্মদ আনিসুর রহমান। সবার কাছে যিনি আনু মুহাম্মদ নামে পরিচিত। আনু মুহাম্মদের জন্ম ১৯৫৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর জামালপুর জেলায়। ১৯৮২ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিদ্যা বিভাগেও তিনি অধ্যাপনা করেন। বর্তমানে তিনি তেল, গ্যাস, বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ, জ্বালানি সংকট ও সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন বার্তা ডটকমের কাছে তার একান্ত মতামত প্রকাশ করেন। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন নতুন বার্তা ডটকমের স্টাফ রিপোর্টার রানা হানিফ।
নতুন বার্তা ডটকম: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংকট ও বর্তমান সরকারের ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আনু মুহাম্মদ: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের যে সংকট তা শুরু হয়েছে নব্বইয়ের দশক থেকে। সে সময় বিশ্ব ব্যাংকের নির্দেশনায় সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে পরিবর্তন আনতে বেশ কিছু নীতি অবলম্বন করে। আর এসব নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ক্রমান্বয়ে বহুজাতিক ও বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া। এই সংকটটি শুরু হয় রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনামল থেকে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকারের এই ভুল নীতি ও তাদের ক্রমবর্ধন দুর্নীতির ফলে বর্তমান সময়ে এসে বিদ্যুতে এ দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান মহাজোট সরকার পূর্বেকার সরকারের মতো ধারাবাহিকভাবে ভুলনীতি ও দুর্নীতি অবলম্বন করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থায় বেশ কয়েকটি দেশ বিরোধী পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে কুইক রেন্টালের মতো কুইক দুর্নীতির করার পথ সৃষ্টি করে। অন্যটি হলো, দেশের সমুদ্রে তেল, গ্যাস ব্লকগুলো বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেয়া। সমুদ্র ব্লক কনকো-ফিলিপসের মতো মার্কিন কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার ফলে দেশও নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে। কারণ এক সময় দেখা যাবে এসব ব্লকে কাজ করতে এসে মার্কিন কোম্পানিগুলো তাদের নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনীও এদেশে নিয়ে আসবে। ইতিমধ্যে আমরা তার নমুনা দেখতে পেয়েছি। কিছুদিন আগে শোনা গেছে, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌ-বহর পাঠাচ্ছে। আবার আঞ্চলিক নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে মার্কিন সামরিক অফিসারও এদেশে সফরে আসছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে সরকারের নীতি সম্পূর্ণই দেশবিরোধী ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
নতুন বার্তা ডটকম: অভিযোগ আছে, চার দল সরকার ও পরবর্তী দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বিদ্যুতের কোনো অগ্রগতি হয়নি। সেখানে বিদ্যুৎ সমস্যার দ্রুত সমাধানে বর্তমান সরকারের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প কি সুফল বয়ে আনেনি?
আনু মুহাম্মদ: চারদলীয় সরকারের শাসনামলে নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতির ফলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরবর্তী সময়ে যখন কেয়ারটেকার সরকার ক্ষমতায় ছিল তখন আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানের জন্য তাদেরকে খাতওয়ারি নির্দেশনা দিয়েছিলাম। তারা তা বাস্তবায়ন করেনি। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ২০০৯ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠিত হয়। এ সময় আমরা মহাজোট সরকারকেও বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু দেখা গেল, সরকার তাদের প্রথম একটা বছর বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না করে বিগত সরকারের সমালোচনায় ব্যস্ত থাকলো। এরপর যখন বিদ্যুৎ সমস্যা আরো প্রকট হলো, জনগণ যখন গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির জন্য রাস্তায় নেমে আসলো তখন সরকার বিদ্যুৎ দেয়ার নাম করে তড়িঘড়ি করে কুইক রেন্টালের পথ বেছে নিলো। এতে সরকারের জন্য একটা সুবিধায় ছিল, আর সেটা হলো ওই সময় জনগণ চেয়েছে বিদ্যুৎ, তা যেভাবেই দেয়া হোক না কেন। এটা আসলে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ফয়দা আদায় করা ছাড়া কিছু না। একইসঙ্গে তারা কুইক রেন্টালের জন্য ইনডেনিটি বিল (দায়মুক্তি বিল) পাস করলো। কারণ যাতে করে ভবিষ্যতে কুইক রেন্টাল নিয়ে কেউ কোনো দুর্নীতি মামলা করতে না পারে। এতে স্পষ্ট যে, এই কুইক রেন্টালের পেছনের সরকারের একটা বৃহৎ স্বার্থ কাজ করেছে। আর তা হলো নিজেদের কিছু লোককে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়া। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, যারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ পেয়েছে তারা সবাই সরকারের বা আওয়ামী লীগে কাছের কেউ। অন্য কাউকে কিন্তু এসুযোগ দেয়া হয়নি।
নতুন বার্তা ডটকম: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের যে সংকট ছিল সেই মুহূর্তে কি কুইক রেন্টালের বিকল্প কিছু ছিল?
আনু মুহাম্মদ: অবশ্যই ছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে, সরকার গঠনের পর আমরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলাম, শুধু পুরাতন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে ওই সময়ের বিদ্যুতের যে সংকট ছিল তা সমাধান করা সম্ভব। দেশের সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতার চাইতে কম উৎপাদন করছে। অনেক কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। শুধু কিছু ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিলে আর যন্ত্রাংশ পাল্টে ফেললেই উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে যেত। আমরা সরকারকে বলেছি, মাত্র ৭০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ক্ষমতা বাড়ালে কুইক রেন্টালের মতো ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণে প্রয়োজন হবে না। কিন্তু সরকার আমাদের কথায় কর্ণপাত না করে শুধু ব্যক্তিস্বার্থের কথা চিন্তা করেই কুইক রেন্টালের সিদ্ধান্ত নেয়। যদি তারা পুরাতন কেন্দ্রগুলো ক্ষমতা বাড়াতো তাহলে আজ বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় হতো দুই থেকে আড়াই টাকা। অথচ বর্তমানে সরকার কুইক রেন্টাল থেকে ১৪ থেকে ১৭ টাকা দরে বিদ্যুৎ কিনছে।
নতুন বার্তা ডটকম: বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে সরকারের কুইক রেন্টাল প্রকল্প ও পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আনু মুহাম্মদ: আমি আগেই বলেছি, বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী সরকারের ভুল নীতি ও দুর্নীতিকে অবলম্বন করে কুইক রেন্টালের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা যদি দেখি, বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে দুর্নীতি ছিল পুরোটায় অনিয়ন্ত্রিত। হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক দুর্নীতির কথা সবার জানা। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে হাওয়া ভবনের সব দুর্নীতির রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এখন আর সরকার একক হাওয়া ভবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সরকার তাদের নিজেদের দুর্নীতির রেকর্ড নিজেরাই ভাঙছে। এই সরকারের সময়ে শেয়ার বাজার, প্রশাসনে নিয়োগ বাণিজ্য, সহযোগী সংগঠনের টেন্ডারবাজি, রেলের দুর্নীত, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ এবং সর্ব শেষ আলোচিত হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক কেলেঙ্কারির মতো বিদ্যুৎ খাতও সরকারের দুর্নীতিতে ভিকটিম। একমাত্র কুইক রেন্টালের জন্য সরকারি ব্যাংকের রিজার্ভ কমে গেছে, ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে। কুইক রেন্টাল চালু হওয়ার পর জনগণ এর প্রভাবটা টের পায়নি। কিন্তু ২০১২ ও ১৩ সালে এসে জনগণ এর কুপ্রভাবটা টের পাচ্ছে। কুইক রেন্টাল করতে সরকারের প্রায় এক বছরের উন্নয়ন বাজেটের সমান পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। যা পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের সমান। এই বছর সরকারকে কুইক রেন্টালের জন্য নয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এভাবে ভর্তুকি দেয়া সম্ভব নয় তা সরকার জেনেই এক বছরে তিন বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার আসলে জনগণে পকেট কেটে নিজের লোকদের পকেট ভরছে।
নতুন বার্তা ডটকম: সরকারের নেয়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আনু মুহাম্মদ: রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে সরকারের সঙ্গে রাশিয়া কী চুক্তি হয়েছে তা এখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। আমাদের এধরণে প্রকল্প পরিচালনার ব্যাপারে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। প্রকল্পে যা হবে তা হলো, এখানে রাশিয়ান কোম্পানি আসবে ব্যবসা করতে। আর তারা এই প্রকল্পের জন্য কি ধরণে প্রযুক্তি আনবে তা যাচাই করার ক্ষমতা আমাদের নেই। এছাড়া পারমাণবিক প্রকল্পের প্রধান সমস্যা হলো নিউক্লিয় বর্জ্য নিষ্কাশন। সরকার বলছে, রাশিয়া পারমাণবিক বর্জ্য নিয়ে যাবে। আসলে চুক্তিতে তা আছে কি না এটা দেখতে হবে। এমন অভিযোগ আসছে রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তির ব্যাপারে প্রধান ভূমিকা পালন করছে প্রধানমন্ত্রী অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান। তাই এখানেও যেন কোনো দূর্নীতি এবং দেশ বিরোধী ভুলনীতি হয়নি তা বলা যাবে না।
নতুন বার্তা ডটকম: বর্তমান সরকারের খসড়া কয়লানীতি ও বাগেরহাটের রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
আনু মুহাম্মদ: বিএনপি সরকারের মতো আওয়ামী লীগ সরকারও কয়লানীতির ব্যাপারে উদাসীন। যদি তারা ফুলবাড়িয়া কয়লানীতিটাকে বাস্তবায়ন করে, তাহলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আর এতে করে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। তবে সরকার কয়লানীতি গ্রহণ না করে, ভারতের সঙ্গে এক তরফা চুক্তির মাধ্যমে বাগেরহাটের রামপালে আমদানী নির্ভর কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিন বিষয়ে এই প্রকল্পে বিরোধিতা করছে জাতীয় কমিটি। প্রথমত, মাত্র ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করে ভারত এই প্রকল্পে অর্ধেক মালিক হচ্ছে। এখানে দেশের স্বার্থ রক্ষা হলো না। দ্বিতীয়ত, রামপালের বিদ্যুৎ প্রকল্পটি হবে সুন্দরবনের জন্য একটা হুমকি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কোন সমীক্ষা করা হয়নি। আর তৃতীয় বিষয়টি হলো, আমাদের নিজস্ব কয়লা থাকা সত্ত্বেও কেন ভারতের নিম্নমানের কয়লা আমদানি করে প্রকল্পটি করা হবে।
নতুন বার্তা ডটকম: একটা বিষয় আশ্চার্যজনক সত্য যে, তেল-গ্যাস ও খনিজ সম্পদ নিয়ে জাতীয় কমিটি সব সরকারের সময়ে আন্দোলন করে এসেছে এবং বিরোধী দল এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা পালা বদলে দলগুলো ক্ষমতায় গেলে আর জাতীয় কমিটির পক্ষে থাকে না। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আনু মুহাম্মদ: আসলেই বিষয়টি অনেক মজার। তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি সব সরকারের সময়ই বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে। যেমন বিএনপির আমলে আমরা যখন ফুলবাড়ী আন্দোলন করেছি, তখন আমাদের আন্দোলনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ একাত্মা ঘোষণা করে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই আন্দোলনে শরিক হন। কিন্তু এখন ক্ষমতায় এসে সেই ফুলবাড়ী চুক্তিটা তারা বাস্তবায়ন করছে না। তারা এখন জাতীয় কমিটিকে তাদের প্রতিপক্ষ মনে করে। কিন্তু জাতীয় কমিটি কোন রাজনৈতিক সংগঠন না। এটা একটা সামাজিক সংগঠন। আমাদের দাবি দেশে তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদের মালিক হবে দেশের জনগণ। বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা যাবে না। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এর বাইরে আমাদের অন্য কোনো চাহিদা নাই।
নতুন বার্তা ডটকম: জাতীয় কমিটি কি রাজনৈতিক সংগঠনে রূপান্তরিত হবে?
আনু মুহাম্মদ: আপাতত রাজনৈতিক কার্যক্রমে বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো পরিকল্পনা জাতীয় কমিটির নেই। তবে ভবিষ্যতে সময় বলে দেবে কী করতে হবে। আমরা যদি এখন রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিই তবে জনগণ আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তাছাড়া আমাদের কমিটিতে বাম রাজনৈতিক ধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি সম্পৃক্ত রয়েছেন। তারা ভিন্ন মতাদর্শের হলেও একটি জায়গায় তারা আমাদের সঙ্গে এক হয়েছে। এখনই যদি আমরা রাজনৈতিক দল গঠন করি, তাহলে কমিটির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে।
নতুন বার্তা ডটকম: তেল-গ্যাসের বাইরে জাতীয় অন্যান্য সমস্যায় যেমন বর্তমানে সর্বাধিক আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় কমিটি কি কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বা করার সিদ্ধান্ত আছে কি না?
আনু মুহাম্মদ: তেল-গ্যাসের বাইরে আমাদের মাঠ পর্যায়ে কোনো আন্দোলন হয় না। তবে মাঝেমধ্যে আমরা অন্যান্য সমস্যা যেমন শেয়ার বাজার, ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো কথা বলতে চাই না। সময় হলে বলে কিছু তো একটা করব। চুপচাপ বসে থাকব না।
নতুন বার্তা ডটকম: বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই নাম- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এই দুটি দলের বাইরে ক্ষমতা গ্রহণের মতো তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক শক্তি বাংলাদেশে গড়ে ওঠেনি। এই দুটি দলের মধ্যে কোন দলটিকে জাতীয় কমিটির বন্ধু হিসেবে দেখেন?
আনু মুহাম্মদ: বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কোনো দলই জাতীয় কমিটির বন্ধু নয়। আবার শত্রুও বলছি না। তারা ক্ষমতায় গেলে আমাদের দাবি, জনগণের দাবি মানে না।
নতুন বার্তা ডটকম: প্রত্যেকটি আন্দোলন কর্মসূচি পরিচালনা ও বাস্তবায়নের পেছনে একটি রাজনৈতিক শক্তি কাজ করে। জনসম্পৃক্ত যেকোনো আন্দোলনে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার দরকার হয় অথবা নিজেদের রাজনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হয়। এক্ষেত্রে জনগণ কিসের ভিত্তিতে জাতীয় কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে?
আনু মুহাম্মদ: এটা সত্য যে, কোনো রাজনৈতিক শক্তি ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল করা সম্ভব হয় না। তবে আমরা জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে একটি রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়া যায়। এখন আমরা জনগণকে বলে দেবো, কাকে ভোট দিলে তার অধিকার অক্ষুণ্ন থাকবে।
নতুন বার্তা ডটকম: আগামী নির্বাচনে জাতীয় কমিটি এই দুই রাজনৈতিক শক্তির কোনটিকে সমর্থন করবে? নাকি তৃতীয় কোন শক্তির অপেক্ষায় আছে জাতীয় কমিটি?
আনু মুহাম্মদ: নির্বাচনের এখনো দেড় বছর বাকি। নির্বাচনে এই দুই শক্তির কোনটিকে সমর্থন দেয়ার প্রশ্ন আসে না। তবে যদি কোন রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তির উদ্ভব হয় তবে বিবেচনা করবো সে শক্তিটা কতটুকু জনবান্ধব। আর যদি কোনটায় না হয়, তবে জনগণকে বলে দেবে কাকে ভোট দেয়া যাবে না। তবে তৃতীয় শক্তিটা অবশ্যই রাজনৈতিক হতে হবে।
(নভেম্বর ১৮,২০১২ তারিখে নতুন বার্তা ডটকম এ প্রকাশিত)