বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন কমতে শুরু করেছে, তখন হঠাৎ করে সে তেলের দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তের পক্ষে ন্যূনতম কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম কমেছে ৯০ ডলারেরও কম, যেখানে মাত্র দুই মাস আগে ছিল ১৩০ ডলার। বাংলাদেশ সরকার তার সিদ্ধান্তের পক্ষে এ কথা বলে যুক্তি দেখাচ্ছে, গত ক’মাসে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান করেছে। এ প্রসঙ্গে একটি কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া জরুরি, বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন কম ছিল, বাংলাদেশে তখন সে অনুযায়ী তেলের দাম কমানো হয়নি। ওই সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে বেশি দামে তেল বিক্রির মাধ্যমে মাত্র কয়েক বছরে বিপিসি প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। তাহলে সরকার কেন আগের মুনাফার মাধ্যমে সঞ্চিত তহবিলের সঙ্গে বর্তমান লোকসানকে সমন্বয় করল না? অতীতে সাধারণ মানুষের কাছে বেশি দামে তেল বিক্রির মাধ্যমেই তো বিপিসি এ মুনাফা অর্জন করেছে!
দামের এ বৃদ্ধির নেপথ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কোনো অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে কিনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত জানি না, সরকার থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। তবে এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কেননা, আইএমএফ এবং তার সহযোগী বিশ্বব্যাংক (এডিবিও একই ধরনের নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হয়) যখনই কোনো দেশকে ঋণ দেয়, তখন সেখানে তাদের নিজস্ব মতাদর্শভিত্তিক নীতিকাঠামো চাপিয়ে দিতে বিভিন্ন ধরনের শর্ত আরোপ করে থাকে। সবকালে সব দেশের জন্য তাদের একই ধরনের নীতি ও শর্ত দেখা যায়। এগুলোর অন্যতম দিক হচ্ছে, সংস্কারের নামে সর্বজনের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব সংকুচিত করা, সর্বজনের সম্পদ বা প্রতিষ্ঠান ধনিক গোষ্ঠীর ব্যক্তিমালিকানায় নিয়ে যাওয়া; গ্যাস, বিদ্যুৎ, তেল, পানির মতো কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গণদ্রব্যকে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করে তার দাম বৃদ্ধি—এমনকি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোও বাণিজ্যিক মুনাফামুখী খাতে পরিণত করা—এসব খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ, সর্বজনের মালিকানা যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন কিংবা এগুলোর ব্যয় সাধারণ মানুষের ওপর অনেক প্রভাব ফেললেও তাতে তাদের শর্তের কোনো পরিবর্তন হয় না। রাজস্ব ঘাটতি, বাণিজ্য ঘাটতি, লেনদেন ভারসাম্যে সমস্যা থেকে পরিত্রাণের নামে এ শর্তগুলো আরোপ করা হয়। এর মাধ্যমে এ খাতগুলোয় মুনাফাভিত্তিক তত্পরতার পথ প্রশস্ত হয়। অনুসন্ধানে পরিষ্কার দেখা যায়, অঘোষিতভাবে এসব সংস্থার মূল কাজ হলো বৃহৎ পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করা। তাই এ অনুমান একেবারেই অযৌক্তিক নয় যে ঋণ পাওয়ার জন্য আইএমএফকে খুশি করতে সরকার এ বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তবে এতে দেশী ব্যবসায়ীপুষ্ট সরকারেরও স্বার্থ আছে, বিপদ সর্বজনের।
জ্বালানি তেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পণ্য দাম বাড়ানোর আগে এর বহুমাত্রিক পরিণতি সম্পর্কে ভাবার কথা, তা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় আসার কথা। বিশেষ করে যখন দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামছে না, তখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো ঘটনা। এর ফলে পরিবহন খরচ ও ভাড়া বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্য বহু পণ্যের দাম আরো লাফিয়ে বাড়তে থাকবে। করোনাকাল ও তার পরবর্তী কাজ এবং আয়ের সংকটে একটি বিশালসংখ্যক মানুষ এরই মধ্যে তাদের স্বল্প ভোগের পরিমাণ আরো কমিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে, তাদের অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, পুরনো ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলেছে, শিক্ষা ও চিকিৎসায় বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর ওপর আরেক দফা বড় আকারের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কীভাবে তাদের পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব?
এ রকম সময়ে এ রকম উচ্চ হারে (৪২-৫২ শতাংশ) ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল, অকটেনের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যুক্তি দিতে গিয়ে সরকার থেকে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও তেল আমদানিতে বিপুল ভর্তুকি দেয়ার সমস্যার কথা বলা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দুটিই ভুল। কেননা, বিশ্ববাজারে তেলের দাম এখন কমে যাচ্ছে আর সরকারের প্রধান তথ্যসূত্র সর্বশেষ বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউ ২০২২ (জুন ২০২২-এ প্রকাশিত) ভর্তুকি সম্পর্কে পুরো উল্টো তথ্য দিচ্ছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার তেল আমদানিতে কোনো রকম ভর্তুকি দেয়নি, বরং শুল্ক থেকে আয় ছাড়াও বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২৩ মে, ২০২২ পর্যন্ত সরকারের এ মুনাফার পরিমাণ মোট ৪৮ হাজার ১২২ কোটি ১১ পয়সা।
বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লেও সরকারের সামনে অনেক বিকল্প পথ স্পষ্টই দেখা যায়। একটি হচ্ছে, বিশ্ববাজার থেকে কম দামে তেল ক্রয় করে জনগণের কাছে উচ্চমূল্যে তা বিক্রির মাধ্যমে এত দিন সরকার যে মুনাফা করেছে, তার সঙ্গে গত কয় মাসের বা সম্ভাব্য লোকসানকে সমন্বয় করা। অন্য বিকল্পটি হতে পারত, আমদানীকৃত তেলের ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেয়া, যা স্বাভাবিকভাবেই তেলের দাম কমিয়ে দিত, এর পরিমাণ বছরে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্যাস উত্তোলনের সময় উপজাত হিসেবে উৎপাদন হয় বলে দেশেই অকটেন ও পেট্রলের মজুদ রয়েছে এবং তা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি আছে। তাহলে বৈশ্বিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি দিয়ে এগুলোর দাম বাড়ানো কেন? তাছাড়া উপজাত হিসেবে উৎপাদিত হলে তো ওই পণ্যের উৎপাদন খরচ প্রায় শূন্য, সেক্ষেত্রে এগুলোর দাম তো কমানো সম্ভব। এ ধরনের অনেক অসংগতির উত্তর চাওয়ার অধিকার জনগণের আছে।
জ্বালানি সার্বভৌমত্ব অর্জনের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অধীনে বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী গ্যাস অনুসন্ধানের পথ খুব কার্যকর ছিল। কিন্তু সরকার সে পথে যায়নি। সরকারের নীতি-দর্শন বুঝতে ১৩ বছর আগে জনমত মাড়িয়ে মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা কনোকোফিলিপসের সঙ্গে সরকারের এ বিষয়ক চুক্তিটি অন্যতম উদাহরণ হতে পারে। আমরা বরাবর জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তিতে শতভাগ মালিকানায় প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস উত্তোলন ও ব্যবহারের দাবি জানিয়ে আসছি। সে কারণে ২০০৯ সালে কনোকোফিলিপসের সঙ্গে গ্যাস রফতানিমুখী চুক্তির আমরা বিরোধিতা করি। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশের সক্ষমতা নেই, গ্যাস উত্তোলন এ মুহূর্তে এত জরুরি যে এখনই চুক্তি করতে হবে। আমরা বলেছি, সক্ষমতার ঘাটতি যেখানে, সেখানে শুধু নির্দিষ্ট কাজের জন্য কাউকে যুক্ত করা যায়, তবে অবশ্যই মালিকানা নিজেদের হাতে রেখে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কোনোভাবেই রফতানিমুখী চুক্তি করা চলবে না। না, সরকার সে পথে গেল না। প্রতিবাদ করার কারণে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে জখম করে তারা জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস উত্তোলনের কথা বলে কনোকোফিলিপসের সঙ্গে চুক্তি করল। ফল কী হলো? চুক্তি স্বাক্ষরের পর কনোকোফিলিপসের শেয়ারের দাম বেড়ে গেল। কোম্পানিটি আবার সাবকন্ট্রাক্ট করল অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে, কিছু লোকদেখানো কাজ করল, তারপর চলে গেল। ২০০৯-এর পর গত ১৩ বছরে গ্যাস অনুসন্ধান আর উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো চেষ্টাও হয়নি, এ বিষয়ে কার্যক্রম আর অগ্রসর হয়নি।
আমাদের দক্ষতার যেখানে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেখানে আমরা প্রয়োজনে বিদেশী বিশেষজ্ঞ বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতেই পারি, কিন্তু আমরা সবসময়ই বিদেশী কোনো কোম্পানির সঙ্গে ওই ধরনের চুক্তির বিরোধিতা করি, যা আমাদের মালিকানা ও সম্পদের ওপর তাদের কর্তৃত্ব করার সুযোগ দেবে। শুধু গ্যাস উত্তোলন নয়, নবায়নযোগ্য শক্তি উৎসগুলোর ক্ষেত্রেও আমরা আমাদের নিজস্ব জাতীয় সক্ষমতা তৈরির ওপর জোর দিয়েছিলাম। আমি মনে করি, সরকার যদি সে সময় ওই পন্থা অনুসরণ করত, গ্যাস উত্তোলনের কাজে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ত, তাহলে বাংলাদেশকে আজকের এ অবস্থার মুখোমুখি হতে হতো না। অথচ সরকার সে পথে না গিয়ে এলএনজি আমদানি ব্যবসায় যুক্ত স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠীসহ কয়লা ও পারমাণবিক গোষ্ঠীর হাতের পুতুল হয়ে উঠেছে। জ্বালানি চাহিদা পূরণে দেশ ক্রমে আমদানি, বিদেশী কোম্পানি ও বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, জবাবদিহিহীনভাবে দেশী কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকেও অনিয়ন্ত্রিত সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে এমন একটি অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছে, যা দেশকে আর্থিকভাবে ভঙ্গুর করে তুলেছে, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষেত্রেও ভয়ংকর হুমকি হয়ে উঠেছে।
শ্রীলংকায় যা ঘটছে তা আমাদের বিশেষ সতর্কবার্তা প্রদান করে। দুটি দেশের মধ্যে আমরা বিশেষ কিছু মিলও লক্ষ করি। যেমন যথাযথ বিচার-বিবেচনা ছাড়াই মেগাপ্রকল্প গ্রহণ, দুর্নীতি, ঋণনির্ভরতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, সরকারপুষ্ট কয়েকটি গোষ্ঠীর একচেটিয়া প্রভাব ও জবাবদিহিতার অভাব ইত্যাদি। বাংলাদেশের কিছু আপেক্ষিক সুবিধা আছে, উচ্চ রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়—যা মোটা দাগে দুর্নীতি ও বিদেশে ব্যাপক অর্থ পাচারের পরও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বহু বছর ধরে রেখেছে। কিন্তু সবকিছুরই সীমা আছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আর্থিক স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ চাপ যখন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে তখন তা থেকে মুক্তির কথা বলে সরকার বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এডিবির দ্বারস্থ হচ্ছে। তা বরং দেশের জন্য আরো বিপজ্জনক ভবিষ্যৎ তৈরি করছে। প্রশ্ন হচ্ছে কী কী বিষয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর কিংবা অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে? প্রথমত, ক্যাপিটাল ফ্লাইট বা প্রভাবশালী ধনিক গোষ্ঠী কর্তৃক বিদেশে অর্থ পাচার। আন্তর্জাতিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে বর্তমানে যার পরিমাণ বছরে ৭০-৮০ হাজার কোটি টাকা। যদিও স্বাধীন কিছু বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সংখ্যাটি দ্বিগুণও হতে পারে। এ পাচার বন্ধ করা না গেলেও অন্তত নিয়ন্ত্রণ করা বর্তমান সংকট থেকে বের হওয়ার একটি পথ। অথচ সরকার সে পথে না গিয়ে তাদের নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বড় আকারের দুর্নীতির কারণে মেগা প্রকল্পে অনিয়ন্ত্রিত ব্যয় বৃদ্ধি বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, এর জন্য উচ্চমূল্যে পণ্যসামগ্রী আমদানিও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতিতে অপ্রয়োজনীয় আমদানি বন্ধ, স্বচ্ছতা ছাড়া যেসব মেগা প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে সেগুলো বন্ধের পাশাপাশি দুর্নীতি ও অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি জবাবদিহি নিশ্চিত করাই বর্তমান সময়ের সংকট থেকে বের হওয়ার সবচেয়ে কার্যকর পথ হতে পারত, কিন্তু সরকারের সে পথে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
সরকার যদি আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেয় এবং অর্থনীতি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে সংকটের সমাধান হবে না, বরং দুর্নীতি, সম্পদ পাচার, একতরফা সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ক্রমবর্ধমান ব্যক্তিগতকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ, মূল্যবৃদ্ধি সর্বজনের জীবন আরো দুর্বিষহ করে তুলবে। অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক-কর্মীসহ দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর নতুন নতুন আক্রমণের মধ্যে পড়বে—যাদের বেশির ভাগই মহামারীর কারণে আরো বেশি দরিদ্র হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বৃহত্তর এ জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের গৃহস্থালির খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে—যা পরবর্তী সময়ে পুষ্টি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন, অযৌক্তিক এবং নির্দয়ভাবে জ্বালানি তেলের পাশাপাশি আবারো গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তত্পরতা সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে বিপর্যস্ত করছে এবং অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতাকেও খাদের মুখে ফেলছে। এর পাশাপাশি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি আরো ঋণের বোঝা আর তাদের পরিচিত শর্ত নিয়ে যুক্ত হতে থাকলে সর্বজনের বিপদ আরো বাড়বে।
[আগস্ট ১৪, ২০২২, বণিক বার্তায় পত্রিকায় প্রকাশিত]