জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে চাই মৌলিক পরিবর্তন

২০১০ সাল থেকে বৃহত্তর সুন্দরবনের রামপালে ১ হাজার ৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ ও বালি ভরাটের কাজ শুরু হয়। জোরপূর্বক মানুষ উচ্ছেদ করা হয়। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) ও বাংলাদেশ বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) যৌথ উদ্যোগে ইন্ডিয়া বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির মাধ্যমে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের জন্য পরিবেশগত সমীক্ষার (ইআইএ) কাজ শেষ হয় অনেক পরে। ২০১৩ সালের ১২ এপ্রিল এ সমীক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এক পরামর্শ সভার আয়োজন করে পিডিবি। এর আগে এ সমীক্ষার ভয়াবহ দুর্বলতা সম্পর্কে লিখিতভাবে আপত্তি জানায় তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত্ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন। উপস্থিত সব বিশেষজ্ঞ এ সমীক্ষার উদ্দেশ্যমূলক ও প্রতারণামূলক বক্তব্য, অসম্পূর্ণতা, স্ববিরোধিতা ইত্যাদি চিহ্নিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সমীক্ষা যথাযথভাবে সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত রামপালে বিদ্যুেকন্দ্র-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানান। কিন্তু এর এক সপ্তাহের মাথায় ২০ এপ্রিল ২০১৩তে রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুত্ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ), বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ), যৌথ উদ্যোগ চুক্তির সম্পূরক (এসজেভিএ) স্বাক্ষরিত হয়।

সব বিশ্লেষণ, অধ্যয়ন, গবেষণা, অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে দেখা যায়— প্রথমত. এ প্রকল্প নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি অসম ও অস্বচ্ছ। দ্বিতীয়ত. এ প্রকল্পের জন্য যে স্থান নির্বাচন করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বের অমূল্য সম্পদ, দেশে ঘন ঘন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে শক্তিশালী প্রাকৃতিক রক্ষা বর্ম এবং অসাধারণ জীববৈচিত্র্যের আধার সুন্দরবনকে বাঁচানো যাবে না।

তৃতীয়ত. এ প্রকল্প গ্রহণের প্রথম থেকেই অনিয়ম, নিপীড়ন শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় সমীক্ষার শর্তপূরণ না করেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সন্ত্রাসী ও পুলিশ দিয়ে জোরপূর্বক কৃষকদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।

সুন্দরবন এমনিতেই বিপন্ন। সামগ্রিক অর্থনীতিতে দখল প্রবণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনেও কাঠসহ বনজ সম্পদের নির্বিচার লুণ্ঠন ও জমি দখল প্রবণতা বেড়েছে। সুন্দরবনের এই বিপন্ন অবস্থার কারণ প্রশাসন-দখলদার-লুটেরা চক্রের ক্রমবর্ধমান তত্পরতা। এ-যাবত্কালে এসব তত্পরতা বেআইনিভাবে চলেছে, এখন আইনি প্রক্রিয়াতেই সুন্দরবন অঞ্চল দখল, লুণ্ঠন ও ধ্বংসের ব্যবস্থা চলছে। শিপইয়ার্ড, জাহাজ ভাঙা শিল্প ছাড়াও জমি দখলের শকুনি উত্সব দেখা যাচ্ছে। সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় গেলেই একটু পর পর ভূমিদস্যুসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক কোম্পানির সাইনবোর্ড দেখা যায়। সুন্দরবন ধ্বংস নিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করতে সবচেয়ে বড় আক্রমণ কয়লাভিত্তিক একাধিক বিদ্যুত্ প্রকল্প।

এ প্রকল্প যে সুন্দরবন ধ্বংসের ব্যবস্থা করবে, সে বিষয়টি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ দল নিবিড় গবেষণা করে নিশ্চিত করেছেন। পরিষ্কার দেখানো হয়েছে, কীভাবে এ প্রকল্প সুন্দরবন ও তার বেঁচে থাকার অবলম্বন পানি, বায়ু ও জীববৈচিত্র্যকে বিনাশ করবে। শুধু তাই নয়, এ দূষণ ২৫ কিমির মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা শহরকেও বসবাসের অনুপযোগী করে তুলবে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মতামত, ভারতের অভিজ্ঞতা, পরিবেশ সমীক্ষা নিয়ে প্রহসন ইত্যাদি নিয়ে বিস্তৃত বিশ্লেষণ এখন সহজলভ্য। কিন্তু দেশী-বিদেশী মুনাফালোভী গোষ্ঠীর স্বার্থে পরিচালিত হওয়ার কারণে সরকার কোনো যুক্তি-তথ্য শুনতে রাজি নয়। বিশেষজ্ঞের মত ও জাতীয় জাগরণ উপেক্ষা করে ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ২৫০ কিমি দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে রামপালে সেই ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেছেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্প

রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ ধরনের প্রকল্পের সঙ্গে যে ঝুঁকি, আর্থিক বোঝা, পরিবেশ-সংক্রান্ত ভয়াবহতা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো সমীক্ষা ছাড়াই রাশিয়ার ঋণে এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উচ্চ সুদে ঋণ নেয়া হয়েছে রাশিয়ার কাছ থেকে। এ বিষয়ে কোনো মতামত দেয়ার পথ বন্ধ করার জন্য এ অঞ্চলে নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে।

অভিশপ্ত সম্পদ মডেলের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ

বস্তুত, স্বাধীনতার পর সত্তরের দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশ ভালোভাবেই যাত্রা করেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি নয়া উদারনৈতিক (রক্ষণশীল) উন্নয়ন ধারণা, নীতি ও প্রচারণায় নিমজ্জিত হয় এবং আরেকটি অভিশপ্ত সম্পদের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে থাকে। প্রাকৃতিক সম্পদের বেসরকারীকরণ, একে বহুজাতিক কোম্পানির হাতে হস্তান্তর, গ্যাস ও কয়লা রফতানির প্রকল্প, উন্মুক্ত খনি, সুন্দরবনধ্বংসী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ প্রকল্প, পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্প মূলত বাংলাদেশকে সম্পদের অভিশাপের দিকে দ্রুত ঠেলে দিচ্ছে। এ মডেল বাস্তবায়নে কার্যকর আছে স্থানীয় ও বৈশ্বিক গোষ্ঠী, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও ক্ষমতাধর দেশগুলো (যেমন— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, রাশিয়ার সরকার এবং বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান)।

যদিও এ গতি এখনো শক্তিশালী, তবুও অন্যান্য সম্পদ অভিশপ্ত দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের বিশিষ্টতাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বিভিন্ন জনপন্থী রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, বিশেষত ১৯৯৮ থেকে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত্ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অব্যাহত বহুমুখী কার্যক্রমে একটি বিপরীতমুখী জাতীয় চৈতন্য ও প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। এর উদাহরণ ১৯৯৯-২০০৪ সময়কালে গ্যাস রফতানির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ইজারা দেয়ার চক্রান্ত বানচাল, টাটার ক্ষতিকর প্রকল্প বাতিল, ফুলবাড়ী গণঅভ্যুত্থান এবং এর চলমানতা। ফুলবাড়ীমুখী সর্বশেষ লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয় ২০১০ সালের ২৪-৩০ অক্টোবর। ২০১২, ২০১৩, ২০১৪তে এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) এলাকায় প্রবেশের নানামুখী চেষ্টা করে। প্রতিবারই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ তাদের অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের বিরুদ্ধে গণআদালত (২০০৮), কনকোফিলিপসের সঙ্গে গ্যাস চুক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিবাদ অন্দোলন গড়ে ওঠে। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০০৯ ও ২০১১তে দুটি সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এছাড়া সুন্দরবনধ্বংসী কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ঢাকা-সুন্দরবন লংমার্চসহ নানা কর্মসূচি, জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের ব্যাপারে জনগণের মনোযোগ, সর্বজনের মালিকানা ও কর্তৃত্ব বিষয়ে সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় ভূমিকার প্রশ্ন সামনে এনেছে।

বিদ্যমান আধিপত্যবিরোধী এ ধারাবাহিক প্রচেষ্টা জনস্বার্থবিরোধী বিভিন্ন নীতি, চুক্তি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক ঐকমত্য তৈরি করেছে। তাই নিজ দেশ, অর্থনীতি ও মানুষের স্বার্থে সম্পদ ব্যবহারের পক্ষে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশকে অভিশপ্ত মডেল থেকে রক্ষা ও ভিন্ন গতিমুখ তৈরির সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। এর মধ্য দিয়ে যেসব দাবি বিশেষভাবে সামনে এসেছে সেগুলো হলো—

১. সর্বজনের সম্পদে সর্বজনের পূর্ণ মালিকানা ও কর্তৃত্ব; ২. মুনাফামুখী ‘নয়া উদারনৈতিক’ উন্নয়ন ধারণার স্থলে সর্বজনকেন্দ্রিক উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন; ৩. বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবির ধ্বংসাত্মক নীতি প্রত্যাখ্যান। তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা। তাদের দায়মুক্তি সুবিধা বাতিল; ৪. খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার প্রদান; ৫. জনগণের জীবন-জীবিকা ও পানিসম্পদ ধ্বংস করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ নিষিদ্ধকরণ; ৬. দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে জনগণের সম্মতি ও অংশগ্রহণ উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা; ৭. নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টি মূলধারায় নিয়ে আসা।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, জ্বালানি শক্তি উত্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সৌরশক্তি ও বায়ুশক্তি বাংলাদেশের সর্বত্রই সারা বছর ধরে সুলভ এবং এর প্রাচুর্য গবেষকদের মনোযোগ বাড়িয়েছে (Kamal, ২০১১)। অন্য বহু দেশের চেয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আপেক্ষিক সুবিধা অনেক বেশি। যদিও এর উত্পাদন ব্যয় এখনো বেশি। সঠিক পথে এবং সঠিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গবেষণা ও আবিষ্কার দ্রুতই নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুেক সুলভ করে তুলতে সক্ষম।

বিদ্যুত্ সংকটের সমাধান ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কীভাবে সম্ভব?

জ্বালানি খাতকে ঢালাওভাবে ব্যক্তিমালিকানায় নিয়ে যাওয়া এবং এ খাতে বহুজাতিক পুঁজি যুক্ত করতে বিভিন্ন সংস্কার সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো নিম্ন জ্বালানি ভোগকারী দেশগুলোর একটি, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু নেপাল থেকে উপরে অবস্থান করছে। যখন বিশ্বে মাথাপিছু বিদ্যুত্ ব্যবহারের হার ২ হাজার ৮৭৫ কিলোওয়াট/ঘণ্টা, সেখানে বাংলাদেশে তা মাত্র ২৩৬ কিলোওয়াট/ঘণ্টা। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ এখনো বিদ্যুত্ সুবিধাবঞ্চিত; যারা বিদ্যুতের লাইনের সঙ্গে যুক্ত, তারাও সবসময় এটি পাচ্ছেন না। (WB, ২০১১; বাংলাদেশ সরকার ২০১৪)

সরকারের সর্বশেষ প্রকাশনা থেকে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ সময়কালে দেশের বিদ্যুত্ উত্পাদনের সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার মেগাওয়াট। তবে প্রকৃত উত্পাদন ৬-৭ হাজার মেগাওয়াট। ২ ডিসেম্বর (২০১৪) বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ বিদ্যুত্ উত্পাদন ছিল ৫ হাজার ৯৮৭ মেগাওয়াট। ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১২ পর্যন্ত সর্বোচ্চ উত্পাদন ছিল ৫ হাজার ২১৪ মেগাওয়াট (২৮ জানুয়ারি, ২০১২)। ২০১১তে তুলনামূলক বেশি উত্পাদন ছিল— ৫ হাজার ১৭৪ মেগাওয়াট, ২০০৯-এ ৪ হাজার ২৯৬ মেগাওয়াট, ২০০৭-এ ৪ হাজার ১৩০ মেগাওয়াট। ২০১১ সালে বিদ্যুত্ উত্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারি খাতের অংশ ছিল ৬০ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতের অংশ (বিদেশী কোম্পানিসহ) ৪০ শতাংশ। ২০১৪ সালে এ হার হয়েছে যথাক্রমে ৪৭ ও ৫০ শতাংশ, এখন ভারত থেকে বিদ্যুত্ উত্পাদনের হার ৩ শতাংশ। বিদ্যুত্ উত্পাদনের প্রাথমিক জ্বালানির শতকরা হারেও এই কয়েক বছরে পরিবর্তন হয়েছে। ২০১১ সালে জ্বালানি উেসর শতকরা অনুপাত ছিল: গ্যাস ৭৭ দশমিক ৩১, ডিজেল ১০ দশমিক ৪৫, ফার্নেস তেল ৫ দশমিক শূন্য ৩, কয়লা ৩ দশমিক ৭৬, পানি ৩ দশমিক ৪৫। ২০১৪ সালে এ অনুপাত দাঁড়িয়েছে: গ্যাস ৬৪ দশমিক ৪৩, ডিজেল ৬ দশমিক ৬০, ফার্নেস তেল ১৯ দশমিক ৪৯, কয়লা ২ দশমিক ৪২, পানি ২ দশমিক ২২ (বাংলাদেশ সরকার ২০১১; বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ )।

জোগানের ক্ষেত্রে করপোরেট স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার ফলে (ক্রমবর্ধমান আইওসি অনুপাত এবং আইপিপির প্রভাব, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ইত্যাদি) বিদ্যুতের দাম ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে এবং এর জোগানও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে।

জোগানের সংকট অব্যাহত থাকায় শিল্প, কৃষি, এমনকি চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানও প্রায়ই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যদিকে সীমিত জোগানের জন্য যখন লোডশেডিং করা হয়, তখন সর্বজনের অগ্রাধিকার থাকে না। অপ্রয়োজনীয় অপচয়ী বিলাসী তত্পরতায় বিদ্যুতের ব্যবহার এখনো অনিয়ন্ত্রিত। তাই যখন শিল্প, হাসপাতাল ও কৃষিক্ষেত্র লোডশেডিংয়ের কবলে ভুগছে, তখন অনুত্পাদনশীল ও বিলাসের কারণে বিদ্যুত্ ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শপিংমল, ভোগবিলাস যেমন— এয়ার কন্ডিশন ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে।

জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহ পেতে জাতীয় কমিটি বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান ছাড়াও জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস ও বিদ্যুত্ সমস্যা সমাধানে করণীয় প্রস্তাব করেছে। জরুরি ভিত্তিতে করণীয়:

১. জাতীয় সংস্থার আওতাধীনে বৃহত্ গ্যাসক্ষেত্র যেমন— তিতাস ও হবিগঞ্জে গ্যাস উত্পাদন বাড়ানো; ২. ১২টি বন্ধ গ্যাসক্ষেত্র চালু করা; ৩. বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে তাদের আওতাধীন এলাকায় অনুসন্ধান চালাতে বাধ্য করা। যে ক্ষেত্রগুলোয় তারা অসমর্থ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ, সেগুলো জাতীয় সংস্থার আওতায় নিয়ে আসা; ৪. বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত্ প্রকল্পসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিদ্যুেকন্দ্র মেরামত, নবায়ন ও সংস্কার করে বিদ্যুত্ উত্পাদন বাড়ানো। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে এসব পদক্ষেপ নিতে খরচ হতো মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ যোগ করতে পারত (রহমতুল্লাহ ২০১১)।

মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে, ৫. সব গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানে জাতীয় সংস্থা বাপেক্সকে সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল যেহেতু স্পষ্টভাবে দেখায় যে, বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে পিএসসি চুক্তির ফলে অর্থনীতির শুধু ক্ষতিই বেড়েছে, সুতরাং একই কাঠামোতে আর কোনো পিএসসি স্বাক্ষর করা যাবে না (জাতীয় কমিটি ২০১১, ২০১২; মোস্তফা ২০১০; Report, ২০০২)।

তাছাড়া ৬. স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ছোট ছোট বিদ্যুেকন্দ্রকে উত্সাহিত করতে হবে; ৭. স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সৌরবিদ্যুত্ ও অধিক ব্যাটারি প্রস্তুত করতে উত্সাহিত করতে হবে; ৮. বিদ্যুত্ অপচয়ী শপিংমল, বহুতল ভবন ও অফিস ভবন নিরুত্সাহিত করতে হবে; ৯. শপিংমল, তথাকথিত ভিআইপি বাসভবন ও বিল বোর্ডের পরিবর্তে হাসপাতাল, শিল্প-কারখানা ও কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে; ১০. হাসপাতাল ও গবেষণাগার ব্যতীত এয়ারকন্ডিশনারের ব্যবহার নিরুত্সাহিত করতে হবে। (একটি ছোট এসি চালাতে যে পরিমাণ বিদ্যুত্ খরচ হয়, তা দিয়ে ৫০টি ফ্যান চালানো সম্ভব)।

বিভিন্ন তথ্য, গবেষণা ও অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে নির্দ্বিধায় বলা যায়, বর্তমানের বিদ্যুত্ ও জ্বালানির ঘাটতি মূলত সরকারের শ্রেণীগত অবস্থান, জনপন্থী উন্নয়ন দর্শনের অভাব, দুর্নীতিদুষ্ট চুক্তি এবং অপরিণামদর্শী পদক্ষেপের ফলাফল। এ কারণে জাতীয় কমিটি বারবার একটি সামগ্রিক জ্বালানি নীতি ও প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখার প্রস্তাব করেছে। আমাদের পূর্বোক্ত আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, জাতীয় সক্ষমতা বর্তমানে নয়া উদারবাদী নীতি ও বিদ্যমান দুর্নীতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানি খাতকে তার পূর্ণ ক্ষমতায় বিকশিত করার জন্য উন্নয়ন দর্শনে পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি। ভবিষ্যত্ প্রয়োজনীয় নীতিকাঠামো নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই চালিকাশক্তি হিসেবে থাকতে হবে: ১. প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জনগণের কর্তৃত্ব ও মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে;  ২. যেহেতু এগুলো অনবায়নযোগ্য সম্পদ, সেহেতু গ্যাস, কয়লা এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদ রফতানি আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করতে হবে; ৩. ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে; ৪. পরিবেশবান্ধব উপায়ে কয়লা সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের পথ অনুসন্ধানের জন্য জাতীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে; ৫. সমুদ্রসীমানা ও সমুদ্রসম্পদ রক্ষা করতে হবে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একে কাজে লাগাতে হবে; ৬. মাগুরছড়া ও টেংরাটিলায় ব্লো আউট ও অনিয়মের শাস্তি/জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে এবং জ্বালানি অবকাঠামো তৈরিতে এ টাকা কাজে লাগাতে হবে; ৭. টেকসই উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করতে হবে; ৮. জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ, বাপেক্স, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ (জিএসবি) এবং খনিজ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএনডি) উপযুক্ত উন্নয়ন ঘটাতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রাসঙ্গিক বিভাগ খোলা উচিত যেন খনিজ সম্পদ যথাযথ ব্যবহারের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে ওঠে। এ উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে দেশ থেকে ভিন্ন দেশে বিশেষজ্ঞ পাঠানো ও দেশের বাইরের বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে;  ৯. সুন্দরবনধ্বংসী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র বাতিল করতে হবে; ১০. বিপুল সম্ভাবনাময় নবায়নযোগ্য সম্পদের সম্ভাবনা অনুসন্ধান করতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে সৌরবিদ্যুত্, বায়ুকল, বায়োগ্যাস প্লান্ট ইত্যাদি তৈরি করতে উত্সাহিত করতে হবে।

উপসংহার

বিশ্ব পুঁজি আর তাদের রাজনৈতিক বাহন সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে জনগণের সংঘাত বিশ্বজুড়ে। এ সংঘাতের পেছনে তিনটি প্রশ্ন বিশেষভাবে চিহ্নিত করা যায়: ক. নিজের জীবন ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর দেশ ও জনগণের মালিকানা থাকা উচিত, নাকি তা বিশ্ব পুঁজির হাতে তুলে দেয়া উচিত? খ. প্রাকৃতিক সম্পদ দেশের উন্নয়ন কাজে ব্যবহার ও সংরক্ষণ করা উচিত, নাকি বহুজাতিক কোম্পানি ও তার ক্ষুদ্র সহযোগীদের মুনাফা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এগুলো তাদের স্বার্থে উত্তোলনের সুযোগ দেয়া উচিত? গ. এসব সম্পদ সর্বজনের সম্পদ হিসেবে গণ্য করা উচিত, নাকি বিভিন্ন করপোরেশনের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হতে দেয়া উচিত?

অন্য অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশ এসব প্রশ্নের জালে হাবুডুবু খাচ্ছে নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে। ‘অভিশপ্ত সম্পদের’ মডেলে বাংলাদেশকে পুরোপুরি টেনে নেয়া যায়নি জনগণের প্রতিরোধের কারণেই। কিন্তু এই প্রতিরোধ এখনো বাংলাদেশকে মুক্ত করার মতো যথেষ্ট শক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য যেমন নেই, তেমনি অভাবও নেই। নানা মাত্রায় এর সম্পদ ছড়িয়ে আছে। যেমন— উর্বর ভূমি, ভূগর্ভস্থ ও উপরিস্থ পানি, সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য এবং মানবসম্পদ। গ্যাস, কয়লার মতো খনিজ সম্পদও এ দেশের আছে, যদিও তা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অপ্রতুল। নবায়নযোগ্য অসীম সম্পদ সৌর ও বায়ুশক্তিও এখানে পর্যাপ্ত। কিন্তু এ দেশে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের পাশাপাশি দুর্নীতি ও কমিশনের মাধ্যমে পুঁজি সঞ্চয়নে ব্যস্ত শাসকগোষ্ঠীর কারণে সম্পদই হয়ে উঠছে দুশ্চিন্তার কারণ, অভিশাপ। প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে সমন্বিত উন্নয়ন পথ তৈরি করা যাচ্ছে না।

বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা আমাদের দেখায় যে, জ্বালানি সার্বভৌমত্ব হলো জাতীয় জনসার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের চাবিকাঠি। পুঁজির কর্তৃত্ব নয়, জীবন ও সম্পদের ওপর সর্বজনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাই পথ। ফলে আমাদের এ উপসংহার অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য ‘অভিশপ্ত সম্পদের’ মডেল থেকে চিরতরে বেরিয়ে এসে টিকে থাকতে এবং উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উন্নয়নের দর্শন ও রাজনীতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই।

তথ্যসূত্র

জাতীয় কমিটি (২০০৫, ২০০৭, ২০০৮, ২০১১, ২০১২). তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত্ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি: বিভিন্ন প্রকাশনা।

বাংলাদেশ সরকার (২০১১); অর্থ মন্ত্রণালয়: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, জুন

বাংলাদেশ সরকার (২০১৪); অর্থ মন্ত্রণালয়: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, জুন

মোস্তফা প্রমুখ (২০১০)। কল্লোল মোস্তফা, মাহবুব রুবাইয়াত্ এবং অনুপম সৈকত শান্ত: জাতীয় সম্পদ, বহুজাতিক পুঁজি ও মালিকানার তর্ক, সংহতি।

মুহাম্মদ, ২০০৭. আনু মুহাম্মদ: ফুলবাড়ী কানসাট গার্মেন্টস, শ্রাবণ।

মুহাম্মদ, ২০০৮. আনু মুহাম্মদ: কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ, সংহতি।

মুহাম্মদ, ২০১২. আনু মুহাম্মদ: বিপ্লবের স্বপ্নভূমি কিউবা, বিশ্বায়িত পুঁজিবাদে ল্যাটিন আমেরিকা, শ্রাবণ

রহমতুল্লাহ (২০১০). বিডি রহমতুল্লাহ: জ্বালানি ও বিদ্যুত্ সংকট- কারণ ও প্রতিকার। সংহতি

Blum 2003. William Blum: Killing Hope: U.S. Military and CIA Interventions Since World War II, revised edition.

BP, 2010. Statistical Review of World Energy.

Dashgupta 1982. Partha Dashgupta: The Control of Resources, Cambridge.

ECLAC 2006. Economic Commission for Latin America and the Caribbean, Social Panoroma of Latin America (United Nations).

Engdahl, 2011. F. William Engdahl: http://www.globalresearch.ca/index.php?context=va&aid=8878)

Fouskas and Gokay, 2005. Vassilis K. Fouskas and Bulent Gokay: The New American Imperialism: Bush’s War on Terror and Blood for Oil, UK.

Galeano 1973. Eduardo Galeano: Open Veins of Latin America, MR.

Ghosh 2011. Jayati Ghosh: ‘The Global Oil Price Story’, networkideas.org

Islam 2006. Nurul Islam et al: ‘Report of the Expert Committee (REC) to Evaluate Feasibility Studz Report and Scheme of Development of the Phulbari Coal Project, submitted by Messieurs Asia Energy Corporation, (Bangladesh) Pvt. Ltd. (AEC) in Bangla, September. Summary of the report is available in English in http://ncbd.org/?p=553

Journal 2006. `Institutions and the Economic Growth’, Economic Journal, Royal Economic Society, January 16, 2006.

Kalafut & Moodz (2010). Jen Kalafut & Roger Moodz: A Phulbari Coal Project: Studies on Displacement, Resettlement, Environmental and Social Impact. Samhati, Dhaka.

Kamal, 2011. Sajed Kamal: The Renewable Revolution, earthscan, UK

Mehlum et al, 2005. Halvor Mehlum, Karl Moene and Ragnar Torvik: Institutions and the Resource Curse, March.

Meier and Stiglitz 2001. Gerald M. Meier and Joseph E. Stiglitz (ed): Frontiers of Development Economics, World Bank.

Moodz 2007. Roger Moodz, Rocks and Hard Places: the Globalization of Mining. Zed Books. London.

Muhammad, 2003. Anu Muhammad: “Bangladesh’s Integration into Global Capitalist Szstem: Policy Direction and the Role of Global Institutions”, in Matiur Rahman (ed) Globalisation, Environmental Crisis and Social Change in Bangladesh, UPL, Dhaka.

Muhammad, 2004. Anu Muhammad: “Foreign Direct Investment and Utilization of Natural Gas in Bangladesh” in http://www.networkideas.org/featart/jul2004/fa26^FDI^Gas.htm.

Muhammad, 2006. Anu Muhammad: ‘Phulbari and the people’s verdict’

http://www.thedailystar.net/2006/09/24/d609241501130.htm.

Muhammad, 2011. Anu Muhammad: Development or Destruction, Essays on Global Hegemony, Corporate Grabbing and Bangladesh, Sraban.

Perkins, 2006. John Perkins: Confessions of an Economic Hitman, UK.

Perkins, 2007. John Perkins: The Secret History of the American Empire, US.

Petrobangla 2011. ‘Model Production Sharing Contract 2008’ and briefing note by Petrobangla on the contract with Conoco Philips, June 16.

Rahman, 2008. Taiabur Rahman: Parliamentary Control and Government Accountability in South Asia: A Comparative Analysis of Bangladesh, India and Sri Lanka, Routlege, London,

Report (2002): Committee Report on ‘Utilization of Natural Gas in Bangladesh’, prepared for the Government of Bangladesh, headed by Azimuddin Ahmed. August.

Roy 2011. Arundhati Roy: Walking With The Comrades, Penguin

Sachs and Warner, 1997. Jeffrey D. Sachs and Andrew M. Warner: Natural Resource Abundance and Economic Growth, HIID, Harvard University, November.

SAPRI (2001): Debapriya Bhattacharya and Rashed A M Titumir: Bangladesh Experience with Structural Adjustment: Learning from a Participatory Exercise, Structural Adjustment Partcipatory Review Initiative (SAPRI), Dhaka, March.

Stiglitz 2002. Joseph E. Stiglitz: Globalization and its Discontent, Norton & Co

Tsalik and Schiffrin, 2005. Svetlana Tsalik and Anya Schiffrin edited, Covering Oil, Open Society Institute.

UN, 1987. Our Common Future, The Brundtland Commission, formally the World Commission on Environment and Development (WCED) report, United Nations.

UNCTAD, 2006. The Least Developed Countries Report.

WB 2011. World Bank: World Development Indicators, Internet, accessed 6.9.11

WB, 1999. World Bank: Foreign Direct Investment in Bangladesh: Issues of long run Sustainability, October.

WB, 2011a. (http://web.worldbank.org/WBSITE/EXTERNAL/TOPICS/EXTOGMC/0,,menuPK:463288ƒcontentMDK:20219974ƒpagePK:148956ƒpiPK:216618ƒtheSitePK:336930,00.html).

The Economist (April 4, 2002)

Other Links:

http://www.washingtonpost.com/world/national-security/massive-us-saudi-arms-deal-seen-as-a-foreign-policy-security-and-economic-boon/2011/12/29/gIQATNWQPP^story.html

http://www.france24.com/en/20120219-oil-reliance-fuels-nigerias-poverty-say-analysts?ns^campaign=editorial&ns^source=RSS^public&ns^mchannel=RSS&ns^fee=0&ns^linkname=20120219^oil^reliance^fuels^nigerias^poverty^say)

http://www.dominionpaper.ca/articles/119) .

http://www.waronwant.org/Fanning%20the%20Flames+15142.twl .

www.petrobangla.org.bd.

http://www.bapex.com.bd

http://www.adb.org/Documents/Reports/SAPE/BAN/SAP-BAN-2009-36/SAP-BAN-2009-36.pdf)

http://www.guardian.co.uk/world/2010/dec/21/wikileaks-cables-us-bangladesh-coal-mine

http://www.bdinn.com/news/conoco-phillips-chevron-contracts-pm%E2%80%99s-adviser-us-envoy-agreed-deals- wikileaks/

http://www.bpdb.gov.bd/bpdb/index.php?option=com^content&view=article&id=126&Itemid=17
(
০৬ জুন ২০১৫ তারিখে দৈনিক বনিকবার্তায় প্রকাশিত)