সরকার যখন দেশকে ‘স্বাভাবিক’ অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে তখন করোনা রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধির দিকে, মৃত্যুর হারও বাড়ছে। আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ মানুষের চিকিৎসার সুযোগ নেই, বিনা চিকিৎসায় কতজন মরছেন তার হিসাব নেই, স্স্থুতার হার অন্য বহু দেশের তুলনায় অনেক কম। অনাহার-অনিশ্চয়তার ভয় কোটি কোটি মানুষের মধ্যে।
যে দেশে ‘স্বাভাবিক’ সময়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না, সেখানে করোনা যে সবাইকে মহাসমুদ্রে ফেলে দেবে এটা বিস্ময়কর কিছু নয়। করোনা অচলাবস্থা যখন থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকেই বহু মানুষের আরও বেশি মাত্রায় কর্মহীনতা, অনাহার, অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রীর অভাব। প্রথমদিকে যখন সরকার অপ্রস্তুত, বিভিন্ন বড় গোষ্ঠীও এগিয়ে আসেনি তখন সমাজের বিভিন্ন সংগঠন ও গোষ্ঠীর উদ্যোগই ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় মার্চ মাসের ৮ তারিখ। সরকার ১৮ মার্চ থেকে ক্রমে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে থাকে। সরকারের প্রস্তুতির দৈন্য ও সমন্বয়ের সমস্যাও প্রকট হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের বিভিন্ন অংশের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা ছাড়াও জরুরি করণীয় নিয়ে সরকারের উদ্দেশে বিভিন্ন সুপারিশ হাজির করা হয়।
এর প্রথমটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি (২২ মার্চ, ২০২০), দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি ছিল যুক্ত বিবৃতি, দেওয়া হয় যথাক্রমে ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল। এ ছাড়া করোনাকালে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় ১৩ এপ্রিল। ২২ এপ্রিল স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে করণীয় সুপারিশমালা প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া গার্মেন্টস মালিক, বিজিএমইএ এবং সরকারের ভূমিকা কীভাবে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে নিষ্ঠুর তৎপরতা চালিয়েছে তার প্রামাণ্য চিত্র হিসেবে ‘মারণখেলার টাইমলাইন (২১ মার্চ-২৫ এপ্রিল ২০২০)’ এবং ত্রাণের দাবিতে ও ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনগণের বিক্ষোভের একটি টাইমলাইন প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া ত্রাণ তৎপরতা মনিটরিংয়ের উদ্যোগও নেওয়া হয় এপ্রিল মাস থেকে।
২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে মূল দাবিগুলো ছিল- (১) শ্বেতপত্রের মাধ্যমে করোনা মহামারী রোধের পরিকল্পনা ও তা কার্যকর প্রণালি জনসমক্ষে প্রকাশ করা। (২) দেশের সর্বত্র বিনামূল্যে টেস্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ এবং তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার জোগান নিশ্চিত রাখা। কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে দ্রুত খালাস ও ট্যাক্স-মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণ। (৩) দেশের সব প্রবেশপথ- বিমান, নৌ, স্থলবন্দর, রেলস্টেশন, নৌঘাট সতর্ক নজরদারির আওতায় আনা। (৪) কোয়ারেন্টিনের জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে বড় হোটেল-মোটেল-রিসোর্টসহ উপযোগী ভবনগুলো অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট করা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, খালি ভবনে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা। সিএমএইচ, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সমন্বিত পরিকল্পনায় যুক্ত করা। (৫) ডাক্তার-নার্স-চিকিৎসাকর্মীসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপদ পোশাক ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা। স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। দেশের গার্মেন্টস কারখানা ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই সরবরাহ। (৬) গণপরিবহন ও গণপরিসরগুলো নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ।
জেলখানার ঝুঁকিপূর্ণ জনচাপ দূর করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা, জনচাপ কমাতে বিনা বিচারে আটক, মেয়াদোত্তীর্ণদের মুক্তিদান। ছিন্নমূল ভাসমান মানুষদের জন্য নিরাপদ স্থানে আশ্রয় শিবির খুলে তাদের সরিয়ে নেওয়া। গাদাগাদি বাস করা বস্তিবাসীদের নিরাপত্তায় প্রতিটি বস্তিতে পরিচ্ছন্নতার উপকরণ সরবরাহ এবং করোনা মনিটর সেল বা ক্যাম্প স্থাপন করা। রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রেও অনুরূপ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করবার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ। (৭) করোনাসংক্রান্ত জরুরি কাজ ছাড়া পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের আপৎকালীন সবেতন ছুটি প্রদান। ছুটিকালীন শ্রমিকদের মজুরি যাতে ঠিকমতো পরিশোধ হয়, সরকারের তা নিশ্চিত করা। (৮) নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুদদারি বন্ধ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয়, নিম্ন আয়ের এবং রোজগার হারানো মানুষদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ।
উদ্বাস্তু, দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, বস্তিবাসী, কারখানার শ্রমিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, ছোট ব্যবসায়ীসহ যাদের জীবিকা হুমকির মুখে তাদের জন্য বিশেষভাবে অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রদান। ঋণখেলাপি, চোরাই টাকার মালিকদের কোনো বাড়তি সুবিধা না দেওয়া। (৯) বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্যকর্মী, ধর্মীয় নেতাদের সাহায্যে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় ক্লাব, সংগঠন ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করে তাদের প্রচার ও রোগ প্রতিরোধে কাজের সুযোগ দিতে হবে। (১০) এর পাশাপাশি ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা প্রকাশ।
৩১ মার্চ যুক্ত বিবৃতিতে করোনা বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ এবং মতপ্রকাশের অধিকারের দাবি জানানো হয়। ২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক, সংগঠকদের পক্ষ থেকে দেওয়া আরেক যুক্ত বিবৃতিতে করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারের করণীয় বলে ছয়টি কাজ নির্দেশ করা হয়। এগুলো হলো- (১) অন্তত তিন মাসের জন্য এক কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে খাদ্যসহ অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যাদির জোগান। (২) বিনামূল্যে সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করা। (৩) কৃষকের ফসল, সবজি, ফলের সঠিক দাম নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কৃষিপণ্য ক্রয়ব্যবস্থা সম্প্রসারণ। (৪) সব প্রতিষ্ঠানে বেতন মজুরি নিশ্চিত করা। (৫) খুদে উদ্যোক্তা ও কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সহজলভ্য করা। এবং (৬) পাহাড় ও সমতলে আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং উদ্বাস্তু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সহায়তা প্রদান করা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে ৭০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার একটি প্যাকেজ বরাদ্দ প্রয়োজন। আর এই বরাদ্দের জন্য জনগণের ওপর নতুন বোঝা চাপানোর দরকার হবে না। কয়েকটি গোষ্ঠীর কাছ থেকে জনগণের লুণ্ঠিত সম্পদের কিয়দংশ উদ্ধার করলেই এই বিপদ থেকে জনগণকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। কারণ গত দশ বছরে দেশ থেকে বাইরে পাচার হয়েছে কমপক্ষে ৭ লাখ কোটি টাকা। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণ প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ কোটি টাকা, এর মধ্যে দশটি গ্রুপের হাতেই আছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারের পক্ষে এদের চিহ্নিত করা খুবই সহজ, এদের অর্থ বিদেশ থেকে ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ হলে দেশে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকার এই বিপদকালীন তহবিল গঠন করতে পারে।
এর পর ২২ এপ্রিল অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশিত বিস্তারিত সুপারিশমালার উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো- (১) কর্মহীন, স্বল্প আয়ের মানুষদের (মজুর, বেকার, খুদে ব্যবসায়ী) ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী, নগদ অর্থ ও ত্রাণ পৌঁছানো। (২) সব শিল্প ও প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারী, পেশাজীবীদের বকেয়া পরিশোধ, ছাঁটাই বন্ধ এবং ছুটিকালীন পূর্ণ মজুরি নিশ্চিত করা। (৩) কোভিড-১৯সহ সব রোগের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বতন্ত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন, প্রতি জেলায় ল্যাব স্থাপন করে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো। সব ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত ও মানসম্মত পিপিই প্রদান করা, আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউসগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা।
যে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। (৪) সব কৃষক ও খামারির পণ্য বাজারজাতকরণ এবং যুক্তিসঙ্গত দামে বিক্রয় নিশ্চিত করা। সরাসরি কৃষক ও খামারি থেকে সরকারের খাদ্যপণ্য ক্রয়ের পরিধি বাড়ানো। কৃষককে স্বল্পসুদে দেয় ঋণের পরিধি ও পরিমাণ বাড়ানো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকার, ব্যাংক ও এনজিও প্রদত্ত ঋণের সব কিস্তিত স্থগিত করা। (৫) মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় অবাধ তথ্যপ্রবাহ এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা। (৬) দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা, বাজারে খাদ্যদ্রব্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ অব্যাহত রাখা। মজুদদার, চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। সারাদেশের ত্রাণচোরদের কঠোর হস্তে দমন। (৭) জাতীয় সক্ষমতা বিকাশে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও গবেষণা বাড়ানো। এবং (৮) দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়ন দর্শনে মৌলিক পরিবর্তন আনা।
২৫ মার্চ থেকে সরকার একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করে। তাতে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এগুলোর প্রধান অংশ ছিল রপ্তানিমুখী শিল্প ও অন্যান্য দেশি শিল্পের জন্য ভর্তুকি সুদে ঋণ প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণ। কৃষিক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট কিছু পণ্য উৎপাদনে ভর্তুকি সুদে ঋণের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মহীন ও আশ্রয়হীন মানুষের খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়নি। ফলে লকডাউনও অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এককালীন অপ্রতুল ত্রাণ সরবরাহের যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তাতেও দুর্নীতির অভিযোগ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ নগদ টাকার ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ উঠছে।
৩০ এপ্রিল নাগরিকদের আরেকটি উদ্যোগে গঠিত ‘দুর্যোগ সহায়তা মনিটরিং কমিটি’ তার প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২৩ মে প্রকাশ করে দ্বিতীয় রিপোর্ট। কমিটি সরকারি দলিলপত্র ও পরিসংখ্যান ব্যবহার করে সর্বশেষ রিপোর্টে জানায় যে, ১৪ মে পর্যন্ত সারাদেশের ৬৪টি জেলায় মোট ১ লাখ ৬২ হাজার ৮১৭ মেট্রিক টন চাল, ৭২ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ নগদ টাকা এবং শিশুখাদ্য ক্রয় বাবদ ১৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারের চাল ক্রয় নীতিমালা অনুযায়ী ৩৬ টাকা কেজি ধরলে সর্বমোট বরাদ্দ টাকার হিসাবে ৬৭৭ কোটি ৬১ লাখ ৮৪ হাজার ২৬৪ টাকা। দেশে বর্তমানে মোট দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪৫ জন। অর্থাৎ ১৪ মে পর্যন্ত মোট দরিদ্র জনসংখ্যার মাথািপছু বরাদ্দ চাল, নগদ টাকা ও শিশুখাদ্য মিলিয়ে ১৬২.২০ টাকা। আর দরিদ্রতম এলাকায় মাথাপিছু বরাদ্দ আরও অনেক কম- সর্বোচ্চ ৩২ টাকা, সর্বনিম্ন ৭ টাকা।
সর্বশেষ সরকার ৫০ লাখ গরিব মানুষের জন্য মাথাপিছু ২ হাজার ৫০০ টাকা প্রদানের জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ‘প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার’ হিসেবে অভিহিত এই অর্থ নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বরে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু এই বরাদ্দ নিয়েও দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গরিবদের নামে টাকা আত্মসাৎ করার জন্য এক মোবাইল নম্বর দু’শবারও দেওয়া হয়েছে। যদি এই বরাদ্দ টাকা পুরোপুরি ঠিকভাবে বিতরণ হয় তার পরও দেশের গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ মোট দাঁড়াবে ২ হাজার কোটি টাকার কম। মনিটরিং কমিটি পাশাপাশি তুলনা করে দেখিয়েছে, দেশে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে গত বছর ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা, একটি বেসরকারি কোম্পানির শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে ৩ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। দেশ থেকে প্রতিবছর পাচার হয় প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা।
ওপরের বর্ণনা দেখে যে কেউ উপলব্ধি করবেন যে, নাগরিকদের বিভিন্ন উদ্যোগ ও সুপারিশে সরকার সাড়া দিলে বাংলাদেশ এখন অনেক নিরাপদ থাকত। বিশ্বব্যাপী করোনা সংকট পরিবর্তনের অনেক বার্তা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সর্বজনের সম্পদ কিছুজনের হাতে স্থানান্তর, নাগরিকদের জীবন তুচ্ছ করা এবং নাগরিকদের কোনো মতামত গ্রহণ না করার রাষ্ট্রনৈতিক চর্চা অব্যাহতই থাকছে। তাই বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের বিপদ আর বিপন্নতাও বাড়ছে।
( ০৬ জুন ২০২০ তারিখে দৈনিক আমাদের সময়ে প্রকাশিত)