আমাদের অর্থনীতির বড় একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে দুর্নীতি

downloadআনু মুহাম্মদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিবও তিনি। গতকাল অতিথি হয়ে এসেছিলেন বণিক বার্তা কার্যালয়ে। কথা বলেন উন্নয়ন, পরিবেশ, দুর্নীতিসহ অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে

আমাদের অর্থনীতির একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে দুর্নীতি। বর্তমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতি বড় ভূমিকা রাখছে। কারণ দুর্নীতি খরচের সঙ্গে সম্পৃক্ত। খরচ যত বাড়বে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার তত বেশি হবে। বর্তমান অবস্থায় দুর্নীতি কমলে জিডিপি বাড়বে— এ ধারণা সঠিক নয়। বরং দুর্নীতি কমলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও কমে যাবে।

বণিক বার্তা কার্যালয়ে গতকাল এ অভিমত ব্যক্ত করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। আলোচনার শুরুতে পাঠ্য হিসেবে অর্থনীতির নানা দিক নিয়ে কথা বলেন তিনি। এ অর্থনীতিবিদ বলেন, পাঠ্য হিসেবে অর্থনীতির আওতা অনেক বড়। সে কারণে এখানে বিভিন্ন চিন্তকের মতের মধ্যে পার্থক্যও থাকে অনেক। দুজনের আলোচনার মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্যও দাঁড়িয়ে যেতে পারে। কারণ অর্থনীতিবিদ্যার প্রকৃতিই এমন। উন্নয়ন ধারণার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা সবসময় নজরে আসে না। বিশেষ করে করপোরেট জগতের সঙ্গে এটির সরাসরি সংযোগ থাকায় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ কম হয়। বিভিন্ন ধারণা বিশ্লেষণ না করেই তা গ্রহণের প্রবণতা অধিকাংশ মানুষের মধ্যে বিদ্যমান।

উন্নয়ন নিয়ে বলতে গেলে বহুমাত্রিক দিক নিয়ে আলোচনা করতে হয়। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। অর্থনীতিবিদ, গণমাধ্যম, বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে তেমন ভূমিকা রাখছে না। সবাই উন্নয়নের বিভিন্ন বিশ্লেষণ দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও তার মাধ্যমে প্রাপ্ত উপযোগকে বিবেচনা করে সেটাকেই উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করছেন। কিন্তু এর সঙ্গে আরো যে অনেক বিষয়ের সংযোগ থাকতে পারে, সে বিষয়ে তেমন আলোচনা হয় না।

আনু মুহাম্মদ বলেন, উন্নয়ন পরিমাপ করা হয় মূলত জিডিপি প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে। প্রশ্ন ওঠায় সত্তরের দশক থেকে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হয় উন্নয়ন পরিমাপের ক্ষেত্রে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, মানব উন্নয়ন সূচক। এ ধারণাটি প্রবর্তনে অমর্ত্য সেন ও মাহবুবুল হকের অবদান রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় পরিবেশ ও অন্যান্য উপাদান। এর মধ্যে রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচন সূচক। সত্তরের দশক থেকে এ ধারণাগুলো চলে আসছে। কিন্তু এগুলো এখনো সহযোগী উপাদান হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। উন্নয়ন পরিমাপে এগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় প্রবৃদ্ধিকে। প্রবৃদ্ধি কী পরিমাণ হচ্ছে এবং মাথাপিছু জিডিপি কত, এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই মূলত উন্নয়নকে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এছাড়া মাথাপিছু আয়, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ই বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ এগুলো নিয়েই ব্যস্ত।

তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ নিয়ম রয়েছে। তা হলো একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগের মাধ্যমে কী পরিমাণ লাভ পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের কথা বলা যেতে পারে। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী তার মুনাফা অর্জনের জন্য যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করে, তার একটি বাহ্যিক প্রভাব পড়ে। যেমন পরিবেশ ও সমাজের ওপর সেটার প্রভাব। উন্নয়ন ধারণা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। সত্তর-আশির দশকে এগুলো নিয়ে আলোচনা হতো বেশি। রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিখাত উভয় ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। যেমন ব্যক্তিখাতের কোনো প্রতিষ্ঠানের মুনাফার জন্য যদি তার চেয়েও বেশি পরিমাণে পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতিসাধন হয়, তাহলে সেটি চলতে দেয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। সামাজিক মুনাফা যদি সামাজিক বিনিয়োগের চেয়ে বেশি না হয়, তাহলে সেটা চলতে দেয়া যায় না।

উদাহরণ হিসেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম খরচ হয় কলয়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে। কিন্তু এটির মাধ্যমে পরিবেশ ও সমাজের ওপর যে প্রভাব পড়ে সেটা বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে, বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে যে পরিমাণ বিনিয়োগ লাগে, এটির খরচ তার চেয়েও বেশি। এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশের যে ক্ষতিসাধন হবে, কোনোভাবেই তা পূরণ করা যাবে না। যেমন: রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান সুন্দরবনের খুব কাছে। এটি ছাড়াও সুন্দরবন এলাকায় পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার মধ্যে আরো বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এগুলোর মাধ্যমে সুন্দরবন যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে সেটা আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। একই অবস্থা বিরাজ করছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজারে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এবং পরিকল্পনা করা হচ্ছে আরো স্থাপনা নির্মাণের। এগুলো সমুদ্রসৈকত ও এর আশপাশ এলাকার যে ক্ষতিসাধন করবে, তা কোনোভাবেই পোষানো যাবে না।

তাই উন্নয়ন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সাময়িক আর্থিক লাভের বিষয়টি বিবেচনা করলে এক রকম হিসাব, আর এর সঙ্গে পরিবেশগত ও সামাজিক বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করলে আরেক রকম হিসাব। বর্তমানে উন্নয়ন বলতে কেবল আর্থিক বিনিয়োগের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রাপ্ত আর্থিক মুনাফাকেই বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। সামাজিক ও পরিবেশগত দিকটি নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। এটি বিবেচনায় নিলে উন্নয়নের পুরো বিষয়টিই সংশোধন করতে হবে। এগুলো অর্থনীতিবিদদের আরো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, জিডিপি উন্নয়নের একটি বড় পরিমাপক। এক্ষেত্রে যত কেনাবেচা বাড়বে জিডিপিও তত বাড়বে। সমাজে বিনিময় যত বাড়বে, জিডিপিও তত বাড়বে। যেমন উন্নত দেশগুলোর জিডিপি আর বাড়ার তেমন সুযোগ নেই। এখন বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার মতো দেশগুলোয় প্রবৃদ্ধির হার বেশি হবে। উন্নত দেশগুলোকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে হলে তার নিজের ভৌগোলিক সীমানার বাইরে যেতে হবে বিনিয়োগ করতে।

বড় অর্থনীতির দেশগুলো ছোট অর্থনীতির দেশগুলোয় বিনিয়োগ করতে চাইছে। কিন্তু এগুলোর মধ্যেমে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে। যেমন ভারতের বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এ ধরনের আগ্রাসী বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের অনেক কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। ফলে অর্থনীতির অনেক বিষয়ই নিয়ন্ত্রণ হবে বাইরের প্রতিষ্ঠান দ্বারা। বিনিয়োগ করার মাধ্যমে তারা যে সুবিধা ভোগ করবে, তা আমাদের মুনাফার চেয়ে অনেক বেশি। তারা আমাদের সমুদ্রবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো কোনো ধরনের মাশুল ছাড়াই ব্যবহারের সুযোগ নিতে চাইছে।

জ্বালানির ক্ষেত্রে একই অবস্থা বিরাজ করছে। কনোকোফিলিপসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের প্রকৃতিক সম্পদ আহরণে সহায়তার নামে কঠিন শর্তের চুক্তি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এগুলো আবার করছে দেশেরই কিছু নীতিনির্ধারক। অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো দেশের মানুষকে অবহিত না করে সরকার সেগুলোয় সম্মতি দিচ্ছে। আর তাদের শর্ত অনুযায়ী আমাদের ভূখণ্ড থেকে উত্তোলিত জ্বালানিও আমাদের দেশের মানুষকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস উত্তোলনে বিদেশী কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে বলে আইওসি সংশোধন করে বিদেশী কোম্পানিকে আরো সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী বাংলাদেশ কোনোভাবেই লাভবান হবে না। সমুদ্রে গ্যাস পেলেও যে দামে তা আমাদের কিনতে হবে, তার চেয়ে আমদানিতে ব্যয় হবে কম। এক্ষেত্রে আমরা ২০০৯ সালেই সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম পেট্রোবাংলার সক্ষমতা বাড়িয়ে কঠিন কাজগুলো সাবকন্টাক্টের মাধ্যমে করাতে। কিন্তু তা না করে ছয় বছর পার করা হয়েছে।

বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো চেষ্টা দেখা যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের ওএনজি ও নরওয়ের স্ট্যাটঅয়েল কত স্বল্প সময়ে সক্ষম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হলো। বাংলাদেশের বাপেক্স সেটি পারেনি। সরকার একে সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চায়নি কখনই। অথচ বলা হচ্ছে, আমরা পারব না। বিদেশী কোম্পানি এলে তাদের মুনাফার জন্য দ্রুত গ্যাস তুলে বিক্রি করে দেবে। আর বাপেক্স হলে দেশীয় অর্থনীতির চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্যাস উত্তোলন ও তা ব্যবহার করতে পারব। দ্রুত গ্যাস শেষ করব আর অর্থ নিয়ে বিদেশে চলে যাব, না দেশের অর্থনীতির বিকাশ ঘটিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এর সুফল বণ্টন করব, সেটি দেখার বিষয়। 

অনেকে বলেন, উন্নয়ন করতে গেলে পরিবেশের তো কিছুটা ক্ষতি হবেই। কিন্তু তারা বলেন না, পরিবেশের কতটা ক্ষতি হবে। ক্ষতির মাত্রা কতটা। কোন ক্ষতি আমরা বহন করতে সক্ষম আর কোনটি বহন করতে আমরা সক্ষম নই, সেটি তো নির্ধারণ করতে হবে।

বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের উর্বর আবাদি জমি রয়েছে, প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। আমাদের রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা। একসময় জনসংখ্যাকে সমস্যা বলা হতো, এখন বলা হচ্ছে সম্পদ। আমরা এত দিন বলে আসতাম, এখন সরকারই এটি স্বীকার করে নিচ্ছে। আমাদের মতো খুব কম দেশেই পানিসম্পদ রয়েছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর উন্মাদনা থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করে খুব কম সময়ে পরিবেশসম্মত উন্নয়নের খুবই ভালো সম্ভাবনা ছিল। এখন যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে দেশ, তাতে যে ক্ষতি হবে, সেখান থেকে বের হওয়াও যাবে না। সুন্দরবন একবার নষ্ট হলে কি আর তাকে ফিরে পাওয়া যাবে? একটি কক্সবাজার নষ্ট হলে সেটিও ফিরে পাওয়া যাবে না। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে দুর্ঘটনা ঘটার অপেক্ষা করতে হবে না, তার আগেই বর্জ্যসহ অন্যান্য কারণেই যে ক্ষতি হবে, কীভাবে তা থেকে মানুষ উদ্ধার পাবে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কাজে না লাগিয়ে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ দিকে সচেতনভাবেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।  অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্প বাংলাদেশের স্বার্থে নেয়া হচ্ছে না জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রতিটি প্রকল্পে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কেন সেটি গ্রহণ বা কার স্বার্থে সেটি নেয়া হচ্ছে। নদী আড়াআড়ি বন্ধ করে ভারতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নেয়া হলো কার স্বার্থে। বলা হলো, ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব, সেটিও তো এখনো এল না। কানেক্টিভিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করেই এটি হতে হবে। জনগণকে অন্ধকারে রেখে সবকিছু করা হচ্ছে। একদিকে চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে অসম্মান করা হবে, অন্যদিকে কানেক্টিভিটি চাওয়া হবে, এটি তো হতে পারে না। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভারত নিজে বোঝাতে চাইছে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ আবার তারই দেশের পণ্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে যাবে— এটি তো স্ববিরোধী।

রাজনীতি আগে না অর্থনীতি আগে ঠিক হতে হবে, এই প্রশ্নে আনু মুহাম্মদ বলেন, সব দেশে একই নিয়মে বিষয়গুলো পরিবর্তিত হয় না। উন্নয়ন-সম্পর্কিত বোধ বা সমাজের মধ্যে যে আধিপত্য রয়েছে অর্থাৎ উন্নয়ন বলতে আমাদের বোঝানো হয় ভবন, অবকাঠামো নির্মাণ, কেনাকাটা, জৌলুস এগুলো পরিবর্তন না হলে আমাদের রাজনীতিও পরিবর্তন হবে না। উন্নয়নের ধরন রাজনীতিকেও নির্ধারণ করে। কে বেশি এগুলো করতে পারবে, সে দলই বাংলাদেশের উন্নয়নের চাম্পিয়ন। উন্নয়ন বোধ যদি এমন হয় যে, জনগণের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-বিশুদ্ধ পানির অধিকার-খাদ্য নিরাপত্তা-পরিবেশ সম্মত শিল্পায়ন, তাহলে সেটিই হবে জনগণবান্ধব উন্নয়ন। খাল-বিল-নদী প্রভৃতিতে জনগণের মালিকানার যে অর্থনীতিতে আলাদা গুরুত্ব রয়েছে, সেটি বুঝতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান উন্নয়ন ধারণার বিপরীতে জনগণবান্ধব উন্নয়ন চিন্তা তৈরি না হলে রাজনীতি পরিবর্তন হবে না। বড় রাজনৈতিক দলগুলো উন্নয়নের কথা বলছে ঠিকই কিন্তু তাদের চিন্তা একই। এতে সাধারণ জনগণের কোনো উপকার হবে না। বিদ্যমান উন্নয়ন চিন্তাকে নাড়া দিতে হবে এবং বিকল্প উন্নয়ন চিন্তা মানুষের সামনে নিয়ে আসা জরুরি।

[এলখাটি ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে বণিকবার্তায় প্রকাশিত]