জনমত ও যুক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে, বিকল্প সমাধান চেষ্টা না করে বছরের শুরুতে (৩ জানুয়ারি ২০১৩ মধ্যরাত) আবারো তেলের দামবৃদ্ধি করা হলো। বাজেট প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, সরকার প্রতিষ্ঠিত এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনকে হয় পাশ কাটিয়ে, নয়তো প্রভাবিত করে অযৌক্তিকভাবে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম উপর্যুপরি বৃদ্ধির ফলাফল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে সরাসরি আক্রমণ করবার শামিল। এসব সিদ্ধান্তে কতিপয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠী খুবই লাভবান হয় সন্দেহ নেই, কিন্তু জনগণের ওপর বহুমাত্রিক বোঝা তৈরি হয়। পণ্য পরিবহণ ও জনপরিবহণ ব্যয়, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন ব্যয় অব্যাহতভাবে বেড়ে যাবার কারণে প্রায় সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির চাপ তৈরি হয়। বাড়িভাড়া বাড়ে। লক্ষ লক্ষ মানুষ নতুন করে দারিদ্র সীমার নীচে পতিত হন। মধ্যবিত্ত সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য বাজেট কমাতে হয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে ব্যয় কাটছাট করতে হয়, নারী ও শিশুর চিকিৎসা আরও সংকুচিত হয়, ঋণ বাড়ে, প্রতিদিনের জীবন কঠিনতর হয়।
তেল আমদানি বাবদ বর্তমানে বিপুল ঘাটতি আছে এটা অবশ্যই ঠিক। কিন্তু এখানে তিনটি বিষয় আইএমএফ ও সরকার উভয়েই আড়াল করে। এগুলো হল, প্রথমত এই ভর্তুকি তৈরি হয়েছে আইএমএফ মডেলে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতকে কর্পোরেট জালে ফেলার কারণে। এই ধারায় পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়েছে বিকল্প থাকা সত্ত্বেও কতিপয় গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্টের কাছ থেকে উচ্চদামে বিদ্যুৎ ক্রয় ও সেই বিদ্যুৎ কিনতে ভর্তুকিকৃত তেল সরবরাহ করায়। দ্বিতীয়ত, এই ভর্তুকির বিষয় সামনে আনতে এই তেলবাবদ সরকার যে রাজস্ব পায় তা সবসময়ই গোপনে রাখতে চায়। এমন বেশ কয়েকটি বছর আছে যখন তেল খাতে ভর্তুকির তুলনায় সরকারের রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে। তৃতীয়ত, পরিশোধিত তেলের তুলনায় অপরিশোধিত তেলের দাম অনেক কম। সরকার যদি রিফাইনারী ক্ষমতা বৃদ্ধি করতো তাহলে এই ভর্তুকির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমে আসতো। কিন্তু এব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যায় নি।
এর আগে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভার ঠিক আগে আগে তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিলো। এই কাজ করে হাসিমুখে সেই সভায় গেছেন অর্থমন্ত্রী। এর পরপরই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সভায় অর্থমন্ত্রীর প্রার্থনা ছিলো আইএমএফএর কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ। মনমতো কাজ করায় প্রার্থনা কবুল হয়েছিলো। বহু শর্ত সাথে জুড়ে দিয়ে ৩ বছরে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেবার ব্যবস্থা হয়েছিলো। মনে রাখা দরকার যে, বর্তমানে প্রবাসী শ্রমিক ও পেশাজীবীরা প্রতিমাসে ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ প্রেরণ করেন। অথচ সেই পরিমাণ অর্থ আইএমএফ-এর কাছ থেকে অনেক শর্তের বিনিময়ে ঋণ হিসেবে পাবার চুক্তি করে সরকার বাংলাদেশের গলায় তিন বছরে জন্য ফাঁস লাগিয়েছে।
শর্তমতো প্রতিটি কিস্তির আগে আইএমএফ মিশন কিছু কাজ দেখতে চায়। সেই শর্তপূরণ হলেই কেবল ঋণ ছাড় হবে। এই জানুয়ারি মাসে সেই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ১৪ কোটি ডলার পাবার কথা। যা ৫ দিনে প্রবাসীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার চাইতে কম। কিন্তু এই অর্থ পাবার জন্যই বাড়লো তেলের দাম। আইএমএফ ভর্তুকি কমানোর জন্য শর্ত দিয়েছে। কিন্তু সেই ভর্তুকি যে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টের জন্য বেড়েছে সেগুলোর পথ ছেড়ে দেবার জন্য কোনো চাপ দেয়নি। স্বল্পমেয়াদে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্লান্টের ভালো বিকল্প হতে পারতো, সরকারি অবহেলার শিকার রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্টের কর্মক্ষমতা ঠিকমতো ব্যবহারের জন্য সেগুলো মেরামত ও নবায়ন করা। তা দিয়ে ২০ ভাগের একভাগ খরচে আরও বেশি বিদ্যুৎ যোগান দেয়া সম্ভব ছিলো। কিন্তু সেই কাজেও নিজেদের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সরকার ধর্না দিয়েছিলো বিশ্বব্যাংকের কাছে। বেশ কিছুদিন ঝুলিয়ে রেখে বিশ্বব্যাংক বলে দিয়েছে তারা এই কাজে কোনো ঋণ দেবে না।
এই দুটো সংস্থা নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের মতো প্রান্তস্থ পুঁজিবাদী দেশগুলোতে গ্যাস বিদ্যুৎ ও তেলের দাম বাড়ানো, পানি শিক্ষা চিকিৎসা খাতকে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক পণ্যে রূপান্তর, জীবন ও সম্পদের বিনাশ করে বহুজাতিক কোম্পানির সাম্রাজ্য বিস্তার ইত্যাদির জন্য রাস্তা তৈরি করতে পরামর্শ/চাপ দিয়ে থাকে, প্রয়োজন মনে করলে জিম্মি ও ব্ল্যাকমেইলিং করে।
এসবই তারা করে ঋণ-অস্ত্রের মাধ্যমে। করে ‘উন্নয়ন’, ‘প্রবৃদ্ধি’, ‘ম্যাক্রোইকনমিক স্ট্যাবিলিটি’, ‘প্রাইস র্যাশনালাইজেশন’ ইত্যাদি নামে। এটা এক দুষ্ট বিষচক্র। এসব ঋণ ও পরামর্শ পৃথিবীর কোন দেশেই অর্থনীতিকে সুস্থির কিংবা টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারেনি। ভারসাম্যহীনতা দূর করবার জন্য আনা ঋণের কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ঋণ, দায় ও ভারসাম্যহীনতাই বিস্তৃত হয়েছে কেবল।
এই ঋণ নেবার আগে বাংলাদেশ, বিশেষত প্রবাসীদের জীবন মরণ ও হাড়ভাঙা খাটুনির কারণে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ফলে লেনদেনের ভারসাম্যে খুব ভালো অবস্থানেই ছিল। আইএমএফ-এর কাছ থেকে ঋণ নেবার কোন যুক্তি ছিল না। তবুও ঋণ দেবার জন্য আইএমএফ প্রতিনিধিদল বহুবার বাংলাদেশ সফর করেছে। ঋণের যৌক্তিকতা কোনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে না পেরে তারা পিএসআই চুক্তি স্বাক্ষর করতে চেষ্টা করেছে। পারেনি প্রতিরোধের কারণে। একপর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে নিম্নগতি শুরু হয় শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে লুন্ঠিত চোরাই অর্থ এবং জ্বালানী ও মোবাইল খাতে কর্মরত বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় মুনাফা পাচারের কারণে। এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে আইএমএফ ও তার দেশি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী। সরকার তাদের মডেল অনুযায়ী ঋণ প্রয়োজন সামনে এনে এখন একের পর এক তেল গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে।
এসব দামবৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয় থেকে এর পক্ষে যেসব যুক্তি দেয়া হচ্ছে সেগুলো পুরনো। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট ‘তেল গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে’ হরতাল করলেও তারাও এসব যুক্তি দিয়েই একাধিকবার তেল গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে। বর্তমান সরকার সেই হিসেবে চারদলীয় জোটের নীতির ধারাবাহিকতাই রক্ষা করে যাচ্ছে। এর কারণ কী? এর কারণ সরকারে আমরা যাদের দেখি তারা দেশ চালায় না। তারা নানা সুবিধা বা ভাগ বা কমিশন বা ক্ষমতার নিশ্চয়তার আশায় যাদের প্রদত্ত নীতি বাস্তবায়ন করে, তারা অনির্বাচিত দেশি বিদেশি নানা শক্তি।
আইএমএফ বিশ্বব্যাংক এগুলোর অন্যতম। এসব সংস্থার মডেল ও দেশীয় লুটেরা গোষ্ঠীর স্বার্থ এক জায়গায় মেশে। যাদের ভোটে সরকার নির্বাচিত বলে আমরা জানি, সেই জনগণের জীবন দুর্বিষহ হলে তাদের কিছু আসে যায় না। বারবার প্রমাণিত হয়েছে- হচ্ছে যে, বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ, এবং জ্বালানী মন্ত্রণালয়টি নিয়ন্ত্রণ করে কতিপয় বহুজাতিক কোম্পানিসহ কিছু গোষ্ঠী। সেজন্য সরকার বদল হলেও এসব নীতির ধারাবাহিকতায় কোন বদল হয় না। সরকারের কাজ হয়ে দাঁড়ায় তাই জনস্বার্থে দিনবদল নয়, জনগণের ঘাড়ে বোঝা তৈরি করে দামবদল।
ভর্তুকির অজুহাত দিয়ে সরকার তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে বৈধতা দিতে চেষ্টা করে সবসময়। কিন্তু ভর্তুকি কেন হচ্ছে? তেল বিষয়ে আগে বলেছি। আর গ্যাসখাতে ভর্তুকি হচ্ছে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও দেশের গ্যাস ব্লকগুলো বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে দিয়ে, তাদের কাছ থেকে জাতীয় সংস্থাগুলোর তুলনায় ১০ থেকে ৩০ গুণ বেশি দামে গ্যাস কেনার কারণে। বিদ্যুৎ খাতে এটা ঘটছে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্লান্টের মাধ্যমে কম দামে বিদ্যুৎ তৈরির সুযোগ সংকুচিত করে দেশি বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে অনেক বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির কারণে। এসব ভর্তুকির কারণে আর্থিক ঘাটতি বাড়ছে, বাড়ছে ঋণের চাপ।
নানারকম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশে এখনও শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় সংস্থাসমূহ। শতকরা ৬০ ভাগ গ্যাস উত্তোলন করলেও গ্যাস ক্রয়ের জন্য মোট অর্থের শতকরা মাত্র ১০ ভাগ তারা পেয়ে থাকে। শতকরা ৪০ ভাগ যারা যোগান দেয় সেই বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আমাদের গ্যাস কিনতে মোট ব্যয়ের শতকরা ৯০ ভাগ যায়। বহুজাতিক কোম্পানির কাছ থেকে পিএসসি চুক্তির অধীন নির্ধারিত ফর্মুলা অনুযায়ী গ্যাস কেনা হয় ডলারে, যা গড়ে টাকার অংকে ২৫০ টাকার বেশি। উপরন্তু এই গ্যাসের উপর তাদের কোন কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয় না। অন্যদিকে বাপেক্সসহ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যাসের দাম কিছুদিন আগে পর্যন্তও ছিল ৭ টাকা। দীঘদিন গ্যাসের এই দামবৃদ্ধির পক্ষে দাবি ও আন্দোলনের ফলে ২৫ টাকা করা হলেও তাদের অন্যান্য প্রাপ্তি কমানো হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে কর দিতে হয় না, সেই কর শোধ করে পেট্রোবাংলা। আর জাতীয় সংস্থাগুলোকে অনেক কম দামে গ্যাস বিক্রি করতে বাধ্য করবার পরও তাকে দিতে হয় সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট। আমরা যে দামে গ্যাস কিনি তার শতকরা ৫৫ ভাগ সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট হিসেবে পায় সরকার নিজেই।
গ্যাসের দামের এই বৈষম্যমূলক অবস্থার কারণে অনুসন্ধানকারী সংস্থা হিসেবে বাপেক্স তার ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়। উপরন্তু উন্নয়ন কাজে আর্থিক বরাদ্দের স্বল্পতা কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী আর্থিক বরাদ্দ না দেবার ফলে তার প্রতিষ্ঠানিক ক্ষমতার সম্প্রসারণ প্রয়োজনমতো ঘটানো যায়নি। সম্প্রতি এডিবির কাছ থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে এই শর্তে যে, সেই ঋণ দিয়ে বাপেক্সকে দিয়ে কাজ করানো যাবে না, কাজ দিতে হবে বিদেশি কোম্পানিকে। এইসব নীতির কারণে বর্তমানে বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে উচ্চদামে গ্যাসে কেনার কারণে সরকার বছরে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি শোধ করলেও এর থেকে অনেক কম বরাদ্দ করে জাতীয় সক্ষমতা বিস্তৃত করবার কোন চেষ্টা নেয়া হয়নি। আর এই ভর্তুকির চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও একদিকে যখন এর যুক্তি দিয়েই গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে, তখন অন্যদিকে একইরকম আরও সর্বনাশা চুক্তি করতে সরকারের সক্রিয়তাও অব্যাহত আছে।
যেসব নীতি ও চুক্তি জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতকে ক্রমান্বয়ে আরও দুর্মূল্য এবং অস্থিতিশীল করে তুলছে সেসব নীতি বা চুক্তি নিয়ে, বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ কখনো তা নিয়ে আপত্তি করেনি, বরং তাদের প্রত্যক্ষ ভূমিকাতেই বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এই পথে গেছে। তাদের সেই পথে সর্বনাশ আরও হতো যদি জনগণের প্রতিরোধে তার অনেককিছু থামানো না যেতো। যেমন, ১৯৯৩-৯৪ ও ৯৭-৯৮ সালে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্যাসব্লকের উপর কর্তৃত্ব পাবার পর বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিশেষ আগ্রহ ছিল গ্যাস রফতানিতে। এগুলো যদি জনগণের প্রতিরোধের মুখে থামানো না হতো তাহলে বর্তমানে লোডশেডিং থাকতো দ্বিগুণ, এবং গ্যাসের বদলে তেল আমদানি করতে গিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বাড়তি আমদানি-ব্যয় হতো।
জ্বালানী খাত তথা অর্থনীতিকে জনস্বার্থে সাজাতে গেলে তাই সম্পদের ওপর শতভাগ মালিকানা, খনিজসম্পদ রফতানি নিষিদ্ধ করা, ফুলবাড়ী চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ হল অপরিহার্য শর্ত। ‘লোকসান’ কমানোর কথা বললেও তার কারণ- দুর্নীতি, অপচয়, অস্বচ্ছতা ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী নীতি থেকে বের হয়ে আসায় কোনো সরকারের আগ্রহ দেখা যায় না। বরঞ্চ তারা সমাধানের নামে নতুন নতুন বোঝা চাপায় অর্থনীতি ও জনগণের উপর। ফলে পুরো অর্থনীতিই লোকসানের মধ্যে পড়ে বা সকল খাতই ক্ষতির সম্মুখীন হয়। জনগণের দৈনন্দিন জীবন আরও নতুন বোঝায় দুর্বিষহ হয়। যে নীতি ও চুক্তির ধারাবাহিকতায় দেশ চলছে তা অব্যাহত থাকলে, তেল গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়তেই থাকবে। জনস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নির্বিচার মুনাফা ও আধিপত্য নিশ্চিত করবার নীতি ও চুক্তির বিরুদ্ধে সমাজে জনচিন্তা ও প্রতিরোধ বিস্তৃত না হলে, দেশ ও জনগণকে আরও কঠিন সংকট মোকাবিলা করতে হবে।
(জানুয়ারী ১৩, ২০১৩ bdnews24.com এ প্রকাশিত)